শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ন
ক্রাইমসিন২৪ ডেস্ক: না ফেরার দেশে চলে গেলেন নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুল। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ ল্যাব এইডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
এর আগে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে তিনি অসুস্থ অবস্থায় হার্ট অ্যাটাক করেন। কোনো রেসপন্স পাওয়া যাচ্ছিল না তার শরীরে। অবশেষে চিকিৎসক ৩টা ১০ মিনিটে সাইদুল আনাম টুটুলকে মৃত ঘোষণা করেন। এই মুহূর্তে হাসপাতালে রয়েছেন সাইদুল আনাম টুটুলের সহধর্মিণী মোবাশ্বেরা খানম। টুটুলের মৃত্যুর খবর শুনে তার সহকর্মীরা হাসপাতালে ছুটে যাচ্ছেন।
সাইদুল আনাম টুটুলের বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন। হাসপাতাল থেকে সাইদুল আনাম টুটুলের ভাতিজা সামিউল আনাম মৃত্যুসংবাদ নিশ্চিত করেছেন। পাশাপাশি হাসপাতালের কাস্টমার কেয়ার থেকেও তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তাঁর দুই মেয়ে ঐশী আনাম ও অমৃতা আনাম এখন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। গতকাল সোমবার বড় মেয়ে ঐশী আনাম দেশে ফিরেছেন। আগামীকাল বুধবার ছোট মেয়ে অমৃতা আনাম দেশে ফেরার পর সাইদুল আনাম টুটুলকে দাফন করা হবে।
তার মৃত্যুতে সংস্কৃতি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গত ১৫ ডিসেম্বর শনিবার দিবাগত রাত ৩টায় গুণী এই নির্মাতা হার্ট অ্যাটাক করেন। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে। শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখে ল্যাবএইডের ডাক্তার মাহবুবুর রহমান তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখার পরামর্শ দেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন তার ফুসফুসে পানি জমেছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। তার কিডনিতেও সমস্যা ছিল।
সোমবার রাতে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে দেয়া হয়। কিন্তু আজ মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে তার হার্ট অ্যাটাক হলে অবস্থা আরও গুরুতর হয়ে পড়ে। আবারও তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। কিন্তু সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পরপারে পাড়ি জমান এই নির্মাতা।
প্রসঙ্গত, সাইদুল আনাম টুটুল চলচ্চিত্র সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৯ সালে শেখ নিয়ামত আলী পরিচালিত ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ চলচ্চিত্রের সম্পাদনার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এছাড়াও সালাউদ্দিন জাকির ঘুড্ডি, শেখ নিয়ামত আলীর দহন, মোরশেদুল ইসলামের দীপু নাম্বার টু ও দুখাই ছায়াছবির সম্পাদনাও তিনি করেন।
এক সময়ে নিজেই পরিচালনায় নাম লেখান। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আধিয়ার’ ২০০৩ সালে মুক্তি পায়। ১৯৪৬-৪৭ সালের বাংলার কৃষক চাষীদের তেভাগা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সমালোচকদের ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে।
এরপর তিনি নাটক নির্মাণে মন দেন। ২০০৯ সালে তার নির্মিত তিনটি নাটক বখাটে, আপন পর ও নিশিকাব্য জনপ্রিয়তা লাভ করে। সাইকেল চালিয়ে জীবিকা অর্জন করে এমন একটি পরিবারের গল্প নিয়ে ২০১১ সালে নির্মাণ করেন খণ্ড নাটক ‘হেলিকপ্টার’। এতে সাইকেল চালকের ভুমিকায় অভিনয় করেন আজিজুল হাকিম।
এরপর তার নির্মিত ‘৫২ গলির এক গলি’, ‘দায় মার সন্তানেরা’, ‘অপরাজিতা’, ‘মৃতের প্রত্যাবর্তন’, ‘শিউলিমালা’, ‘কুটে কাহার’, ‘গোবরা চোর’ নাটকগুলো বেশ দর্শকপ্রিয়তা পায়।
২০১৪ সাল থেকে তিনি এটিএনবাংলা ও ব্যাকড্রপ লিমিটেডের যৌথ আয়োজনে নির্মিত এটিএনবাংলায় প্রচারিত টেলিভিশন নাটক বিষয়ক রিয়েলিটি শো ‘রয়েলে টাইগার নাট্যযুদ্ধ’র বিচারকের দ্বায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। সর্বশেষ তিনি শুরু করেছিলেন তার দ্বিতীয় সিনেমা ‘কালবেলা’র কাজ। এর মাধ্যমে দীর্ঘ ১৫ বছর পর চলচ্চিত্রের পরিচালনায় ফিরেছিলেন এই নির্মাতা। কিন্তু, শেষ ছবির কাজ শেষ না করেই স্মৃতি হয়ে গেলেন সাইদুল আনাম টুটুল।