বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৩ পূর্বাহ্ন
কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি : উপকূলীয় কৃষকের মাঝে দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পরিবেশ বান্ধব পাচিং পদ্ধতি। বালাইনাশক প্রয়োগ ছাড়া ধান ক্ষেতের পোকা দমনে এ পদ্ধতি ব্যবহারে সুফল পাচ্ছে কৃষকরা। ফলে কীটনাশকের ব্যবহার কমে যাওয়ায় রক্ষা হচ্ছে পরিবেশের ভারসম্য। কমছে খাদ্যে বিষক্রিয়ার উপস্থিতি। সংরক্ষিত হচ্ছে জীব বৈচিত্র। আর্থিক সাশ্রয় পাচ্ছে কৃষকরা।
কৃষকদের সূত্রে জানা গেছে, কৃষকের নিরন্তন প্রচেস্টায় যখন ক্ষেতে চারা গাছ গুলো তরতর করে বেড়ে ওঠে। তখনই ক্ষেতে আক্রমন করে ক্ষতিকর ঘাসফড়িং, পাতা মোড়ানো পোকা, চুঙ্গি ও মাজরা পোকা। এ সকল পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় কৃষি বিভাগ কৃষকদের জন্য নিয়ে আসে পরিবেশ বান্ধব পাচিং পদ্ধতি। এ পদ্ধতির ব্যবহারের কীটনাশকের ব্যবহার কমছে। সুরক্ষিত হচ্ছে পরিবেশ এবং জীব বৈচিত্র।
দক্ষিনাাঞ্চলে কৃষকরা সাধারনত দুই ধরনের পাচিং ব্যবহার করে। একটি হল লাইভ পাচিং ও অপরটি ডেথ পাচিং। লাইভ পাচিং হল ফসল বান্ধব জীবিত গাছ। আর ডেথ পাচিং হল কোন গাছের ডাল। সাধারনত ক্ষেতে প্রতি একরে ১০ থেকে ১২টি বাঁশের কঁঞ্চি কিংবা গাছের ডাল পুতে দিয়ে তৈরি হয় পাচিং পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে পাচিংয়ের (খুটি) উপর বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে ক্ষতিকারক পোকা এবং তাদের ডিম খেয়ে ফেলে। এর ফলে জমিতে কীটনাশক খরচ কম ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাচ্ছে।
সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার গ্রামাঞ্চলের বিস্তৃর্ন আবাদী ক্ষেতের মধ্যে বাঁশের কঁঞ্চি ও গাছের ডাল পোতা রয়েছে। ওই পাচিং (খুঁটিতে) ফিঙ্গে, শালিক, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে আছে। সুযোগ বুঝে ধান ক্ষেতে থাকা ক্ষতিকর পোকা ওইসব পাখিরা খেয়ে ফেলছে।
নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কৃষক রহমত মিয়া বলেন, এ বছর আমি ক্ষেতে পাচিং পদ্ধতির প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি। এতে খরচ নেই। টিয়াখালী ইউনিয়নের কৃষক করিম আকন জানান, বাড়ীর গাছ থেকে ডাল কেটে ক্ষেতে পুতে দিয়েছি। ওই ডালে বসা পাখিরাই ক্ষেতের ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে ফেলছে। অপর কৃষক হরিলাল বলেন, পোকা দমনে ক্ষেতে যে কীটনাশক ব্যবহার করা হয় তাতে বর্ষা মৌসুমে ক্ষেতে যেসব মাছ আসে সেসব মরে যায়। এমনকি সাপ, ক্চুা, ব্যাংঙ পর্যন্ত মরে ভেসে উঠে। কীটনাশক ব্যবহারবারী কৃষকও কম বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা আবদুল মন্নান বলেন, পাচিং পদ্ধতি কৃষি ও পরিবেশ বান্ধব একটি পদ্ধতি। কৃষকদের মাঝে এ পদ্ধতিটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সকল কৃষকদের পাচিং পদ্ধতির আওতায় আনার জন্য কাজ করছি। কোন খরচ ছাড়াই এ পদ্ধতি ব্যবহার করে ক্ষেতে পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করতে পারবে কৃষকরা। বর্তমানে উপজেলায় প্রায় ৬০ ভাগ কৃষক এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছে।
###