শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ০১:৩৭ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
যারা ভূমিদস্যুতার মাধ্যমে চর দখলে জড়িত , নির্বাচিত সরকার এসে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেবে ।। অধ্যাপক মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ কলাপাড়ায় ইভটিজারের মাথা ন্যাড়া করে দিলেন বিক্ষুব্ধ জনতা কলাপাড়ায় হিন্দু পাড়াগুলোতে উদযাপিত হচ্ছে হলি উৎসব সারাদেশে নারী ধর্ষন, সংহিসতা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে কলাপাড়ায় মানববন্ধন পটুয়াখালীতে অবস্থিত ক্যান্টনমেন্ট ‘পটুয়াখালী সেনানিবাস’ করার দাবীতে মানববন্ধন বাউফলে অবৈধ ব্রিকফিল্ড বন্ধের ২৪ ঘন্টা না যেতেই ফের চালু বাউফলে জেলে ও চাষী পরিবারের মানববন্ধন বন্ধুপ্রতিম ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভা ও ইফতার মাহফিল করেছে ছাত্রশিবির বরিশাল মহানগর শাখা বেগম জিয়ার রোগমুক্তির জন্য মেহেন্দীগঞ্জে বিএনপির ইফতার মাহফিল আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবসে কলাপাড়ায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত কলাপাড়ায় রাষ্টীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মিয়ার দাফন সম্পন্ন কলাপাড়ায় স্ট্যান্ড ফর এনআইডি কর্মসূচিতে নাগরিক সেবা বন্ধ বাউফলে বিএনপি নেতার বাসভবন থেকে টিসিবির পণ্য উদ্ধার কলাপাড়ায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে মারধর, হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন নুরুন্নাহার কেয়া কলাপাড়ায় মরা খালে দখলদারের ছোবল
মাসজুড়ে ফ্রি সেহরি খাওয়াচ্ছে বরিশালের হোটেল

মাসজুড়ে ফ্রি সেহরি খাওয়াচ্ছে বরিশালের হোটেল

Sharing is caring!

ক্রাইমসিন২৪ অনলাইন ডেস্ক : রমজান মাসজুড়ে রোজাদারদের বিনামূল্যে সেহরি খাইয়ে চলেছে বরিশালের গৌরনদীর মাতবর হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট। হোটেলের মালিক বলছেন, মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপালাভের আশায় এভাবে রোজাদারদের খাওয়ানোর মাধ্যমে তিনি আত্মতৃপ্তিও পাচ্ছেন।

বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য আবদুল্লাহ আল সাইদের এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর তুমুল আলোচনা চলছে বরিশাল বিভাগজুড়ে। প্রশংসায় ভাসছেন রেস্টুরেন্টের মালিক মো. আব্দুর রশিদ মাতবর।

অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল সাইদ বাংলানিউজকে বলেন, গত সোমবার (২৭ মে) দিনগত রাতে ঢাকা থেকে বরিশালের আসার সময় ফ্রি সেহরি খাওয়ানোর বিষয়টি বুঝতে পারি। নিজের কাছেই অজান্তে ভালো লেগে যায়। সেখান থেকেই মঙ্গলবার (২৮ মে) দিনগত রাতে ফেসবুক পাতায় স্ট্যাটাসটি দেই।

পুরো অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আল সাইদ স্ট্যাটাসে লিখেছেন-
‘রোজার মধ্যে রাতের বাসে হাইওয়েতে যাতায়াত করা আমাদের জন্য খুব দুশ্চিন্তার বিষয়, না হলেও মোটামুটি চিন্তার বিষয়। কারণ ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের মতো আমাদের ঢাকা-বরিশাল হাইওয়েতে খুব ভালো মানের খাবার হোটেল পাওয়া যায় না। তাই সেহরি খাওয়ার জন্য আমাদের ভরসা করতে হয় রাস্তার পাশের মোটামুটি মানের খাবার হোটেলের ওপর। এ ভরসার মধ্যে দুইটি চিন্তার বিষয় হল খাবারের মান এবং খাবারের অতিরিক্ত মূল্য। রাত জেগে হোটেল খোলা রাখার কারণে খাবারের মূল্য অনেক সময় হোটেল মালিকরা দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে থাকেন। যাত্রীরা মোটামুটি বাধ্য থাকেন হোটেল মালিকের নির্ধারিত মূল্যে খাবার গ্রহণ করার জন্য। কারণ যাত্রীদের হাতে কোনো বিকল্প উপায় থাকে না। যাত্রীদের এ অসহায়ত্বের সম্পূর্ণ সুযোগ নেন হোটেল মালিকরা। তার মধ্যে পুরাতন পচা-বাসি খাবারতো আছেই। আমরা যারা রোজার মধ্যে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসার জন্য রাতের বাসে যাতায়াত করি তারা এই বিষয়গুলোতে মোটামুটি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। কিছুদিন আগে আমি একটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পর সোমবার রাত ৯টায় সাকুরা পরিবহনের একটি বাসে ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওনা করি।’‘বাসে উঠে সুপারভাইজারের সঙ্গে সেহরি খাওয়ার বিষয় নিয়ে কথা বললাম। সুপারভাইজার আমাকে আশ্বস্ত করলো রাত তিনটার দিকে যেখানে হোটেল পাওয়া যাবে সেখানে আমাদের সেহরি খাওয়ানোর জন্য বাস থামানো হবে। রাত তিনটায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডে বাস থামলো। যে হোটেলের সামনে বাসটি থামলো ওই হোটেলের সামনে আরও ১০ থেকে ১২টি বাস থামানো ছিল। ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলরত ভালো মানের অধিকাংশ বাসই ওই হোটেলের সামনে থামানো দেখতে পেলাম। যাত্রীদের সেহরি খাওয়ার জন্য একসাথে অনেকগুলো বাস ওই হোটেলটির সামনে থামায় হোটেলটিতে অনেক ভিড় হয়ে গেলো। আমি সেহরি খাওয়ার জন্য হোটেলের খাবার টেবিলের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম এবং কিছুক্ষণ পরে একটি চেয়ার খালি হলে আমি ওই চেয়ারটিতে বসি। আমি খাবারের কোনো দাম জিজ্ঞেস না করে খাওয়া শুরু করলাম। কিন্তু আমার পাশে একজন যাত্রী হোটেল বয়কে দাম জিজ্ঞেস করতেই বয় উত্তর দিলো দাম লাগবে না, কী খাইবেন বলেন।’

‘কথাটা শুনে তখনো বুঝতে পারিনি বিষয়টা কী। আমি খাওয়া শেষ করে বিল দেওয়ার জন্য হোটেলের ম্যানেজারের কাছে যাই। তিনি আমাকে বিনয়ের সঙ্গে বললেন টাকা দেওয়া লাগবে না। বিষয়টি বুঝতে পারলাম না। তাই আবার তাকে জিজ্ঞেস করলাম কেন টাকা দেওয়া লাগবে না। তিনি আমাকে বললেন, ‘বাবা বছরে ১১ মাস ব্যবসা করি, এক মাস আল্লাহতায়ালার অশেষ কৃপা লাভের আশায় রোজাদার ব্যক্তিদের খেদমত করি’।’

‘আমি একটু অবাক হয়ে গেলাম এবং বিষয়টি ভালো করে বোঝার চেষ্টা করলাম। জানতে পারলাম তিনি হোটেলের ম্যানেজার নন, তিনিই হোটেলের মালিক মো. আব্দুর রশিদ মাতবর। পুরো রমজান মাসজুড়ে তিনি সেহরি খাওয়ানোর পর কারও কাছ থেকে খাওয়া বাবদ কোনো টাকা নেন না। আমার মতো কৌতুহলী হয়ে অনেক যাত্রী তার কাছ থেকে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করলেন। অনেক যাত্রী অবাক হয়ে হোটেলের মালিকের দিকে তাকিয়ে রইলেন। হোটেলের বয়রাও অনেক আন্তরিক। যে কোনো একজন খাবারের জন্য চেয়ারে বসার সঙ্গে সঙ্গে তারা জিজ্ঞেস করেন- কী খাবেন মাছ না মাংস। মাছ হলে কোন মাছ, আর মাংস হলে কিসের মাংস! যেখানে বাংলাদেশে রমজান মাসে ব্যবসায়ীরা পণ্য মজুদ করে মূল্য বাড়ায়, ভেজাল পচা-বাসি এবং অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রির দায়ে ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে নামি-দামি খাবার হোটেলগুলোতে জরিমানা করেন; সেখানে গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডের মাতবর হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক মো. আব্দুর রশিদ মাতবর স্রোতের বিপরীতের একজন মানুষ। যে মানুষ পুরো রমজান মাসে মহান সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের আশায় রোজাদার ব্যক্তিদের খেদমত করার জন্য এই ব্যবস্থা নিতে পারেন, তিনি অবশ্যই কোনো সময় পচা-বাসি খাবার বিক্রি করতে পারেন না। আব্দুর রশিদ মাতবরের কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করুন আমাদের দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা।’

যোগাযোগ করলে মাতবর হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট মালিক মো. আব্দুর রশিদ মাতবর বলেন, বছরের ১১ মাস ব্যবসা করে পরিবার-পরিজন নিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় খুবই ভালো আছি। নিজের আত্মতৃপ্তির জন্য প্রথমবারের মতো রমজানে বিনামূল্যে সেহরি খাওয়ানোর আয়োজন করেছি। শুরুর দিকে ৮০-১০০ জনকে বিনামূল্যে সেহেরি খাওয়ালেও এখন এর সংখ্যা দেড়শ’র বেশি গিয়ে ছাড়ায়। এতোটুকু সেবা করতে পারাটা সৌভাগ্যের বলেই মনে করি।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD