রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৩ অপরাহ্ন
ক্রাইমসিন২৪ অনলাইন ডেস্ক: সড়কজুড়ে দৃশ্যমান হচ্ছে স্বপ্নের মেট্রোরেল। অধিকাংশ পিলারের উপরে বসছে স্প্যান। মেট্রোরেলের প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল পাইলিং। সব চ্যালেঞ্জ জয় করে প্রতিনিয়তই এগিয়ে যাচ্ছে মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ। ইতোমধেই পাঁচ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট দৃশ্যমান হয়েছে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উড়ালপথ ও স্টেশন নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা ২০১৯ সালের জুনে। আর এই অংশটুকু ঢাকাবাসীর জন্য খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু এখন সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে কর্তৃপক্ষ। এই ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রুট চলতি বছরে খুলছে না।
রুটটি এখনই খুলে দিলে আগারগাঁও এলাকায় নতুন ভোগান্তির সৃষ্টি হবে। এই অংশের নির্মাণ কাজ ২০১৯ এর ডিসেম্বরে শেষ করা হবে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত সম্পূর্ণ নির্মাণ কাজ ২০২০ এর ডিসেম্বরে গিয়ে শেষ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা বসে এমন সংশোধিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।
বুধবার (২৯ মে) পর্যন্ত মেট্রোরেলের সার্বিক গড় অগ্রগতি ২৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আর প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের অগ্রগতি ৪০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এই অংশের কাজ শেষ হয়ে গেলে রেল ও বিদ্যুতের লাইন স্থাপন করা হবে। এরপরে রেল ট্রায়াল পর্যায়ে থাকবে। অন্যদিকে, আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নেয়াও চলমান থাকবে। এরপর সবকিছু সেরে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন বর্ষ ২০২১ সালের বিজয় দিবসে বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেলের সম্পূর্ণ অংশ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
এ ১৬ ডিসেম্বরই উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার উড়াল রুট সম্পূর্ণভাবে খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে মেট্রোরেল প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
ডিএমটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএন সিদ্দিক বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্পের রেল ও বিদ্যুতের লাইন বিদেশ থেকে এসে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে গেছে। ভায়াডাক্ট নির্মাণের পর আমরা রেল ও বিদ্যুতের লাইন বসানোর কাজ শুরু করবো। রেললাইনের উপরে কোচও বসানো হবে। লাল-সবুজের প্রাধান্য থাকবে কোচে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কোচ ট্রায়াল দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের মেট্রোরেলের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। একদিকে ট্রায়াল চলবে, অন্যদিকে নির্মাণ কাজ চলবে। পর্যায়ক্রমে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আমরা সম্পূর্ণভাবে অপারেশনে যেতে পারবো।
উত্তরা নর্থ থেকে আগারগাঁও:
মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ প্যাকেজ-৩ ও প্যাকেজ-৪ এর আওতায়।
দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এই অংশে নয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। উভয়
প্যাকেজের কাজ ২০১৭ সালের ১ আগস্ট শুরু হয়েছিল। ইতোমধ্যে পরিষেবা
স্থানান্তর, চেকবোরিং, টেস্ট পাইল ও মূল পাইল সম্পন্ন হয়েছে। মোট ৭৬৬টি
পাইল ক্যাপের মধ্যে ৬১৭টির কাজ শেষ হয়েছে। ৩৯৩টি পিয়ার হেডের মধ্যে ৩৩৩টির
কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ১০৮টি আই-গার্ডারের মধ্যে ১০০টি ও পাঁচ হাজার
১৪৯টি প্রিকাস্ট সেগম্যান্ট কাস্টিংয়ের মধ্যে দুই হাজার ৮৪২টির নির্মাণ
সম্পন্ন হয়েছে। তিন হাজার ৯৩০ মিটার ভায়াডাক্ট দৃশ্যমান হয়েছে।
প্যাকেজ-৮ এর আওতায় রেলকোচ ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের কাজ এগিয়ে চলেছে। এ প্যাকেজের বাস্তব কাজ ২০১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছিল। বর্তমানে রোলিং স্টক (রেলকোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের আওতায় সম্পূর্ণ নকশা সম্পন্ন হয়েছে। জাপানে মেট্রোরেলের মেকআপ রিভিউ সম্পন্ন হয়েছে। বগি নির্মাণের কাজ চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি জাপানে শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের এয়ার কন্ডিশন, ব্রেক ও ট্রেন ইনফরমেশন চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই প্যাকেজের অগ্রগতি ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ।
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল সিস্টেম:
প্যাকেজ-৭ এর আওতায় ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল সিস্টেম সরবরাহ ও
নির্মাণ কাজ ২০১৮ সালের ১১ জুলাই শুরু হয়েছিল। এর আওতায় ডেভিনিটিভ নকশা
সম্পন্ন হয়েছে। হাইভোল্টেজ ফিডার ক্যাবল স্থাপনের জন্য টেস্ট পিট খনন,
উত্তরা রিসিভিং সাব স্টেশন (আরএসএস) নির্মাণ এবং টঙ্গি ও মানিকনগর গ্রিড
সাবস্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে। রেল ও ৩৩ কেভি ক্যাবল, ১৩২ কেভি ক্যাবল
জাহাজিকরণ করা হয়েছে। ব্যালাস্টপ্রি শিপমেন্ট ইন্সপেকশন (পিএসআই) সম্পন্ন
হয়েছে। এসব কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ।
ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়ন:
প্যাকেজ-১ এর আওতায় এই কাজ। বাস্তব কাজ ২০১৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে
নির্ধারিত সময়ের নয় মাস আগে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি সমাপ্ত হয়েছে। বাস্তব
অগ্রগতি শতভাগ।
ডিপো এলাকার নির্মাণ কাজ:
প্যাকেজ-২ এর আওতায় এটি চলমান। বাস্তব কাজ ২০১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর শুরু
হয়েছিল। সংশোধিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম পর্যায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট
এলাকার নির্মাণ কাজ আগামী ৩০ জুন শেষ হবে। বাস্তব অগ্রগতি ৩৩ শতাংশ।
প্যাকেজ-৫:
এই প্যাকেজের আওতায় আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৯৫
কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও তিনটি স্টেশন নির্মাণকাজ চলমান। এ প্যাকেজের বাস্তব
কাজ ২০১৮ সালের ১ আগস্ট শুরু হয়েছিল। বর্তমানে এ অংশে পরিষেবা স্থানান্তর,
চেকবোরিং ও টেস্ট পাইল সম্পন্ন হয়েছে। মূল পাইল নির্মাণের জন্য ২১০টি
ট্রায়াল পিটের মধ্যে ১২৬টি এবং ৪৫২টি বোরড পাইলের মধ্যে ১৫০টির কাজ সম্পন্ন
হয়েছে। জাপানের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১০৪টি স্ক্রু পাইল
ফাউন্ডেশনের মধ্যে ২১টি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্যাকেজটির বাস্তব অগ্রগতি ১০
শতাংশ।
প্যাকেজ-৬:
কারওয়ান বাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৪ দশমিক ৯২ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও চারটি
স্টেশন নির্মাণকাজ চলমান। এ প্যাকেজের বাস্তব কাজ ২০১৮ সালের ১ আগস্ট শুরু
করা হয়েছিল। বর্তমানে এ অংশে পরিষেবা স্থানান্তর, চেকবোরিং ও টেস্ট পাইল
সম্পন্ন হয়েছে। মূল পাইল নির্মাণের জন্য ২৯৮টি ট্রায়াল পিটের মধ্যে ১৬৯টি
এবং ৬৫২টি বোরড পাইলের মধ্যে ২৩৯টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জাপানের আধুনিক
প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১৩৮টি স্ক্রু পাইল ফাউন্ডেশনের মধ্যে ৫৮টির
ফাউন্ডেশনের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। এ প্যাকেজের বাস্তব অগ্রগতি ১০ দশমিক ২২
শতাংশ।
রাজধানীর যানজট নিরসন ও নগরবাসীর যাতায়াত আরামদায়ক, দ্রুততর ও নির্বিঘ্ন করতে ২০১২ সালে গৃহীত হয় মেট্রোরেল প্রকল্প। এ প্রকল্পের দৈর্ঘ্য হবে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার। এ এলাকায় বসবাসকারী লাখো নগরবাসী মেট্রোরেল ব্যবহার করে গন্তব্যে যাতায়াত করতে পারবেন। প্রকল্পে ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। প্রত্যেকটি ট্রেনে থাকবে ছয়টি করে কোচ। ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ছুটবে যাত্রী নিয়ে। উভয়দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন বহনে সক্ষমতা থাকবে মেট্রোরেলের। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা ঋণ দিচ্ছে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
এ নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের একটা বিষয়ে অনুরোধ, মেট্রোরেল প্রকল্পের বিষয়ে সবাইকে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। মেট্রোরেল পিস মিল নয়, এটা একটা প্যাকেজ। চলমান এমআরটি লাইন-৬ (উত্তরা নর্থ থেকে মতিঝিল) উদ্বোধন করে দিলেই সমস্যা সমাধান হবে না। এমআরটি লাইন থেকে ছয় পর্যন্ত একটা প্যাকেজ। ঢাকা ও আশপাশের জনগণের জন্য আমরা একটা মাস্টার প্ল্যান নিয়েছি। ছয়টি এমআরটির কাজ ২০৩০ সালে শেষ। তবে এমআরটি লাইন-৬ সম্পূর্ণভাবে উদ্বোধন করবো ২০২১ সালে। এছাড়া আংশিক উদ্বোধন করলে যানজটের সমাধান আসবে না।