রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৪ অপরাহ্ন
ক্রাইমসিন২৪ ডেস্ক: আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন দল বা গোষ্ঠী যেন রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের সবক’টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের বাইরে যেন না যেতে পারেন সেজন্য তাদের চলাচলও সীমিত করা হয়েছে। এমনকি আগে যেসব রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের আশেপাশের গ্রামে দিন মজুরের কাজ করতেন তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে পুলিশ, র্যাব, আনসারসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা।
শুক্রবার (২১ ডিসেম্বর) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বহিরাগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নির্বাচনী এলাকায় গমনাগমন নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
রোহিঙ্গা নেতারা (মাঝি) বলছেন, জাতীয় নির্বাচনে রোহিঙ্গাদের যাতে কেউ ব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য ক্যাম্পগুলোতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ক্যাম্প ইনচার্জের নির্দেশনা অনুযায়ী বিশেষ করে মাঝিরাও কাজ করে যাচ্ছেন।
এর আগে গত ৩০ নভেম্বর কক্সবাজার সফরে এসে নির্বাচন কমিশনার মাহাবুব তালুকদারও এ বিষয়ে প্রশাসনকে সতর্কবার্তা দেন। এ সময় তিনি উখিয়া টেকনাফসহ জেলার বিভিন্ন সংসদীয় আসনে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে কোন গোষ্ঠী ফায়দা লুটার চেষ্টা চালাবে কিনা, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন এবং রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে কেউ যাতে নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো বিঘ্ন ঘটাতে না পারে সেজন্য তিনি প্রশাসনকে সজাগ থাকার নির্দেশনাও দেন।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য এরইমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কোন দল বা গোষ্ঠী এ নির্বাচনে রোহিঙ্গাদের যাতে ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের চলাচল সীমিত করার পাশাপাশি ক্যাম্পগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
কুতুপালং ক্যাম্প-৪ এর প্রধান মাঝি মো. আব্দুর রহিম জানান, ক্যাম্প ইনচার্জের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব বিষয় নিয়ে আমরা ক্যাম্পে তিনবার মিটিং করেছি। সবাইকে নিষেধ করে দিয়েছি ক্যাম্পের বাইরে না যাওয়ার জন্য। নতুন-পুরনো যেসব রোহিঙ্গারা পাশ্ববর্তী স্থানীয় জনগোষ্ঠীর গ্রামে দিনমজুরের কাজ করতে যেতো, গত একসপ্তাহ ধরে তাদের বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন কাউকে বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
একই কথা বলেন, কুতুপালং টিভি জোনের ক্যাম্প-৪ এর জি ব্লকের প্রধান মাঝি মো. বশির।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, শুধু জাতীয় নির্বাচন কেন, স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনেও কোন দল বা গোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের ভাড়া নিয়ে ফায়দা লুটার চেষ্ঠা করেছে। অনেক ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটাতে এমনকি ভোট ডাকাতির মতো ঘটনায়ও রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করা হয়েছে। তাই রোহিঙ্গারা যাতে কোনভাবেই ক্যাম্পের বাইরে না আসতে পারে, তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, নির্বাচনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে ক্যাম্পগুলোতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের কোন অবস্থাতেই ক্যাম্প থেকে বের হতে দেওয়া যাবে না। এজন্য ক্যাম্পগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসেন জানান, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাচল ঠেকাতে প্রায় সাড়ে চারশ’ পুলিশ সদস্য ক্যাম্প এবং আশপাশের এলাকায় দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনের আগের দিন (২৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকে ৩১ ডিসেম্বর (সোমবার) বিকেল পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের আসা-যাওয়ার সম্ভাব্য যে পথ বা রাস্তা আছে এর ৯টি পয়েন্ট বন্ধ করে দেওয়া হবে। এছাড়াও সেইসব পয়েন্টে স্পেশাল পুলিশ দিয়ে চেকপোস্ট বসানো হবে।
র্যাব-৭ কক্সবাজার অফিসের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, নির্বাচনে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে কেউ যাতে ফায়দা নিতে না পারে, সেই অপতৎপরতা রোধে র্যাব সদস্যরা মাঠে রয়েছেন। তিনি বলেন, ক্যাম্পগুলোতে সার্বক্ষণিক র্যাবের চারটি টিম টহলে রয়েছে। এছাড়াও সাদা পোশাকেও বিপুল সংখ্য র্যাব সদস্য ক্যাম্পগুলোকে নজরদারিতে রেখেছেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার বাইরে কোন অবস্থাতেই আসতে দেওয়া হবে না।
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে একটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬৬ হাজার ১৪৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৩৪ হাজার ১৪৫ জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৩২ হাজার একজন। কিন্তু এ দুই উপজেলার ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বর্তমানে নতুন পুরনো মিলে বসবাস করছেন প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা। যারা মূলত পাহাড় ও বন কেটে সেখানে বসতি গড়ে তুলেছেন।