রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৬ অপরাহ্ন
দেশে দিনে দিনে বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত রোগী ও মৃত ব্যক্তির সংখ্যা। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক চিকিৎসক- নার্সসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন করোনায়। তারপরও মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন বহু স্বাস্থ্যকর্মী। যাদের মধ্যে অনেকেই করোনায় চিকিৎসা সেবা প্রদানের দায়িত্ব পেয়ে সন্তোষ প্রকাশও করছেন।
বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও হাসপাতালের ইন্টার্ন ডক্টরস এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা.নাহিদ হাসান। যিনি ৩৯ তম বিসিএস-এ পাশ করে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার পদে কিছুদিন পূর্বে যোগদান করেন। করোনা পরিস্থিতিতে যোগদানের পর থেকেই পরিবারের কাছ থেকে আলাদা থেকে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন মানব সেবায়। ছুটি পেলেই যেখানে বাবা মাকে দেখতে বাড়িতে ছুটে যেতেন, সেখানে গত ২ মাসে গোপালগঞ্জে থাকা বৃদ্ধ বাবা-মায়ের মুখগুলো একবারের জন্যও সামনে থেকে দেখতে পারেননি। ডক্টরস হোস্টেলে থেকে চিকিৎসকদের দায়িত্ব পালন করে গেছেন আর সম্প্রতি তিনি শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে প্রথম দফায় দশদিনের দায়িত্বপালন শেষ করেছেন। শুরু হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকার জীবন-যাপন। দায়িত্ব পালন শেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে তুলে ধরেছেন করোনায় আক্রান্ত রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কথা, নিজের অভিজ্ঞতার কথা। যেখানে নিজের মাস্ক পড়তে পড়তে মুখে ক্ষত হয়ে যাওয়া একটি ছবিও দিয়েছেন। তার সেই স্ট্যাটাস ঘিরে শনিবার (২০ জুন) রাত জুড়েই চলে ফেসবুক পাড়ায় ভালোবাসার ঝড়। কেউ তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, কেউবা দোআ করেছেন। আবার কেউবা মুখের ক্ষত স্থানগুলোতে ওষুধ লাগানোর কথা বলেছেন, কেউ বলেছেন সাবধানে থাকার কথা।
তার সেই স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো…..
“গত ১১ তারিখ থেকে আজ ২০ তারিখ পর্যন্ত শের- ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে কর্তব্যরত ছিলাম। এই সময়ে আমি আমার দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেছি।
শুরুতে আমার বাবা মা খুব চিন্তিত ছিলো কিন্তু সবসময় বলতো, বাবা আমাদের দোয়া তোমার সাথে সবসময় আছে তুমি চিন্তা করোনা। বাবা মায়ের দোয়া এবং তাদের উৎসাহ আমাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
আলহামদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত ভালো আছি।
ডিউটি কালীন করোনায় আক্রান্ত রোগীর কষ্ট এবং তাদের পরিবারের হাহাকার সামনে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে এবং তাদেরকে সাধ্যমত সেবা দিয়েছি।
প্রকৃতির দেয়া অফুরন্ত অক্সিজেন টেনে নিতে না পারার কি যে কষ্ট তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।
অনেকে সুস্থ হয়ে বাসায় যাচ্ছেন,তাদের মুখের হাসি দেখলে মনে হয় ডাক্তারি পড়া আমার জীবনের সার্থকতা এখানেই। যাদের ছুটি হয়না তারা তাকিয়ে থাকে অপলক দৃষ্টিতে কখন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবে।
ফুল পিপিই পড়ে ডিউটি করা কি যে কষ্ট তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। চোখে কম দেখা যায়, কানে কম শুনা যায়, জোরে জোরে কথা বলতে হয়, এদিকে রোগীদের এক ধরনের হাহাকার।
ডিউটি শেষ করে হাসপাতাল থেকে হোটেলে ফেরার পথে ভাবতে থাকি রুমে গিয়ে মাস্ক খুলে প্রান ভরে শ্বাস নিবো। তখনই দেখি কিছু মানুষের মুখে মাস্ক নেই বাইরে অকারণে ঘুরছে, তখন ভাবি দায় কি শুধুই ডাক্তারদের?
আর এরাই ডাক্তারের গায়ে হাত তোলে, এমনকি পিটিয়ে মেরে ফেলে।
গত দু মাস আগে সড়ক দুর্ঘটনায় আমার ডান হাতের একটা হাড় ভেংগে যায়। আমি নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য নির্ধারিত দিনের ১ সপ্তাহ আগেই হাতের প্লাষ্টার খুলে ফেলি। পারতাম ছুটি নিতে, নেইনি অপরাধবোধ হবে যে আমিতো মোটামুটি ফিটই আছি কেনো আমি ছুটি নেবো। আমি বসে থাকিনি।
এই দশদিন সহকর্মীরা সবাই অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন,পরিশ্রম করেছে আয়া, দারোয়ান, ওয়ার্ডবয়, নার্সসহ সকল স্বাস্থকর্মীরা, সবাইকে অশেষ ধন্যবাদ দেশের এই দুর্যোগকালীন মুহূর্তে তাদের অসামান্য অবদানের জন্য।
বেঁচে থাকলে একদিন এই সুন্দর পৃথিবীতে প্রানভরে শ্বাস নিবো, সুস্থ হয়ে উঠুক আমাদের এই সোনার দেশ, এই প্রত্যাশায়।
সবাই মাস্ক পড়ুন,স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন,ঘরে থাকুন।
ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমাকে দেশের এই দূর্যোগকালীন মুহূর্তে দেশের সেবা করার সুযোগ দেয়ার জন্য।
লেখক: ডা.নাহিদ হাসান
মেডিকেল অফিসার,শেবাচিমহা,বরিশাল।
সাবেক সাধারণ সম্পাদক,ইন্টার্ন ডক্টরস এসোসিয়েশন।
কার্যকরী সদস্য,বরিশাল বি.এম.এ।