রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৬ অপরাহ্ন
ক্রাইমসিন২৪ ডেস্ক: লাশের পাশে পড়ে ছিল একটি স্টার সিগারেটের প্যাকেট। আবার যে মোবাইল নাম্বার থেকে ফোন করে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল, সেই নাম্বারে ফ্লেক্সিলোড করার জন্য মোবাইল নাম্বার ও টাকার পরিমাণও লেখা হয়েছিল স্টার সিগারেটের প্যাকেটে।
স্টার সিগারেটের প্যাকেট ও হাতের লেখা প্রভৃতির সূত্র ধরে গাজীপুরের শ্রীপুরের আলোচিত দশ বছরের শিশু সৈয়দ সাদমান ইকবাল রাকিন অপহরণ ও হত্যা জড়িত দুই যুবককে গ্রেপ্তার ও হত্যা রহস্য উদঘাটন করেছে র্যাব। গৃহশিক্ষকই সাদমানকে অপহরণ ও হত্যা করে।
আজ সোমবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. সারওয়ার-বিন-কাশেম।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- গৃহশিক্ষক শ্রীপুরের ফাউগান গ্রামের আলীম শিকদারের ছেলে কলেজছাত্র পারভেজ শিকদার (১৮) ও তার সহযোগী একই গ্রামের আবদুল লতিফের ছেলে ফয়সাল আহমেদ (১৯)।
সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, গত ১১ ডিসেম্বর দুপুরে বাড়ির প্রায় দেড়’শ গজ দূরের একটি বাঁশঝাড় থেকে উদ্ধার হয় ফাউগান গ্রামের সৈয়দ শামীম ইকবালের ছেলে সৈয়দ সাদমান ইকবাল রাকিনের অর্ধগলিত লাশ। এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর বিকেলে অপহৃত হয় রকিন। চলতি বছর ফাউগান প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে সে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছিল। অপহরণের রাতেই ৬ মাস আগে হারানো বাবার মোবাইল থেকে ফোন করে রাকিনকে মুক্তির বিনিময়ে শামীম ইকবালের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করে অপহরণকারীরা। এ ঘটনায় পরদিন তিনি শ্রীপুর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। ১১ ডিসেম্বর রাকিনের লাশ উদ্ধারের জড়িতদের গ্রেপ্তারে ছায়াতদন্ত গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে র্যাব।
তদন্তে র্যাব-১ জানতে পারে লাশ উদ্ধারের সময় ঘটনাস্থলের পাশে একটি স্টার সিগারেটের প্যাকেট পড়ে ছিল। আবার যে নাম্বার থেকে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল ওই নাম্বারে ফাউগান বাজারের একটি দোকান থেকে ২০ টাকা ফ্লেক্সিলোড করার জন্য স্টার সিগারেটের প্যাকেটে নাম্বার লিখে পাঠানো হয়েছিল। সিগারেটের ওই প্যাকেট এবং হাতের লেখা দেখে তদন্তের সূত্রে শনিবার রাতে বাড়ি থেকে প্রথমে ফয়সালকে গ্রেপ্তার করা হয়। সিগারেটের প্যাকেটে সে মোবাইল নাম্বার লিখে দিয়েছিল। যা তদন্তে ওই ফ্লেক্সিলোডের দোকানের ময়লার ঝুড়িতে থেকে পাওয়া যায়। পরে তার দেওয়া তথ্যে গাজীপুর শহরের জয়দেবপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গৃহশিক্ষক পারভেজ শিকদারকে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পারভেজ স্বীকার করে গাজীপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের এগ্রিকালচার ডিপ্লোমার প্রথম বর্ষের ছাত্র। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে বড়। দুই বছর ধরে রাকিনকে প্রাইভেট পড়াত। অপহরণ ও মুক্তিপণের মোটা অংকের টাকার আশায় সে ৬ মাস আগে বাসা থেকে রাকিনের বাবার মোবাইল ফোন চুরি করে। যাতে সহজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়তে না হয়। টিভিতে ক্রাইম পেট্রোলে দেখানো বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে উৎসাহিত হয়ে সে এমন পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সে বন্ধু ফয়সালের সাথে পরামর্শ করে।
ফয়সাল ফাউগান উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র। অপহরণের দিন ফয়সাল পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রাকিনকে খেলার ফাঁকে পাখির বাসা দেখানোর কথা বলে বাঁশঝাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে রাকিনকে বাঁশঝাড়ে আটকে রাখার চেষ্টা করে। ব্যর্থ হলে এবং ছাড়া পেলে জানিয়ে দিবে এই ভয়ে তারা তৎক্ষণাৎ রাকিনকে মাটিতে ফেলে বুকের উপর উঠে গলা টিপে ধরে হত্যা করে।
পরে মুক্তিপণ চাওয়ার জন্য কল করতে গিয়ে ফয়সাল দেখতে পায় মোবাইলে টাকা নেই। তখন দুইবন্ধু একত্রে ফাউগান বাজারে রনির দোকান থেকে ২০ ফ্লেক্সিলোড করে। দোকানের রেজিস্টারে নম্বর লিখলে ধরা পরার সম্ভাবনা রয়েছে বিধায় সিগারেটের প্যাকেটে মোবাইল নাম্বার ও টাকা লিখে দোকানে দিয়ে চলে আসে। রাতে ফয়সাল রকিনের বাবাকে ফোন করে দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
র্যাব-১ এর তদন্ত দল প্রাথমিকভাবে কোনো সূত্র না পেলেও রনির দোকানের ময়লার ঝুড়িতে সিগারেটের প্যাকেটে লেখা ছোট টুকরাটি পায়। এরই সূত্রে নাটকীয় মোড় নেয় তদন্ত। ধারা পরে দুই অপহরণকারীও হত্যাকারী।