মঙ্গলবার, ০১ Jul ২০২৫, ০১:৫৭ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
সরকারি সৈয়দ হাতেমআলী কলেজের শিক্ষকদের বিদায় সংবর্ধনা শিক্ষাবোর্ড কর্মচারী বড় সিরাজের দলবদল পরিক্রমা শের-ই বাংলা মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগ পূর্বের স্হানে ফিরিয়ে নেয়ার দাবীতে মানববন্ধন বরিশালে ছাত্রশিবিরের “সাথী শিক্ষা বৈঠক–২০২৫” অনুষ্ঠিত অসুস্থ শ্রমিকদল নেতার পাশে দাঁড়ালেন ফয়েজ খান কুয়াকাটায় অতিরিক্ত মদপানে পর্যটকের মৃত্যু সরকারি সৈয়দ হাতেমআলী কলেজের বিএ অনার্স (২০১৯-২০) এর শিক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত বরিশালে কাশিপুর ও বাঘিয়ায় সক্রিয় অপরাধীরা, প্রশাসনের নজরদারী বাড়ানোর দাবিতে মানববন্ধন লক্ষ্য রাখতে হবে আওয়ামী সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ, দাগি আসামি যাতে দলে ভিড়তে না পারে (আবদুল আউয়াল মিন্টু) কলাপাড়ায় নানা আয়োজনে রথ উৎসব অনুষ্ঠিত বরিশালে জিয়া সড়ক রাস্তা ও ড্রেনেজ সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর নিহত যুবদল নেতার কন্যার বিয়েতে মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত অ্যাডভোকেট মাজহারুল ইসলাম জাহান ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে এইচএসসি ২০২৫ পরীক্ষার্থীদের জন্য তথ্যসেবা ও মাস্ক বিতরণ  মেহেন্দিগঞ্জে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেদিয়ে এইচ,এসসি ও আলিম পরীক্ষা কলাপাড়ায় ভেড়িবাঁধ সহ স্লুইজ গেট ধ্বসে পড়ার শঙ্কা
তপারওতো প্রেম ছিল!

তপারওতো প্রেম ছিল!

Sharing is caring!

বিধান সরকার: কত শত দুঃখ বেদনা, অধ্যায়ের নেপথ্যে আরেক ঘটনা, কেইবা মনে রাখে। শত শত কোটি মানুষ তার শত শত কোটি হৃদয়। করো ঘটনা বয়ে বেড়ায়, কেউবা বিবাগী হয়। আর বিকারগ্রস্ত হয়ে ঘুরে বেড়ানোর উপমাও বহু হয় এই জামানায়। শিরোনামেই বুঝতে পেয়েছেন আজ আমি কার কথা বলছি। হামেশাই তিনি ঘুরে বেড়ান এই নগরীতে। কখনোবা তার ছবি পত্রিকা বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ হাসির খোরাক যোগায়। তবে তার ফেলে আসা অধ্যায়ের হদিস কখনো খোঁজা হয়েছে কিনা তা আমার অজানা। তাই কি তার অব্যক্ত বেদনা সে কথাই তুলে ধরার চেষ্টা করছি আপনাদের জন্য।

লাইন রোডে অগ্রজ সাংবাদিক মহম্মদ আলী খান জসিমের সাথে চা পান করা বা কিছুটা সময় কাটানো, এ নিত্য দিনের অভ্যাস বটে। দীর্ঘ বছর ধরে তপন কুমার সাহা নামের অপভ্রংশ হয়ে তপা থেকে তপা পাগলাকে, এই রাস্তা ধরেই হেঁটে যেতে বা চায়ের দোকানে চা পান করতে দেখি। কেউবা বংশ পদবী নাপিত উল্লেখ করে খেপিয়ে মজা পান, কেউবা বৌদিদির পানে চোখ ফেলায় এমন অবস্থা বলে পাল্টা খিস্তি খেউর শুনে হাসির খোরাক যোগান।

তবে আমরা তপার মুখ থেকে মাঝে মধ্যে স্থানীয়তে সমাপ্তি টেনে বিশ্ব রাজনীতির অবাক করা কথন শুনে অভিভূত হই। তিনি এখনো দক্ষিণ বাংলার আওয়ামীলীগের অভিভাবক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ্’র কাছে টাকা পান। কত টাকা পাওনা? জবাব আসে চল্লিশ হাজার। আবার নিজ থেকেই বলে ওঠেন-‘থাউক ওই টাকা ভাইয়ের কাছে। আবার দেহা অইবেনা তহন চাইয়া নিমু’।

তার বড় পুত্র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ যে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তারও হালহকিকত বেশ জানেন। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বলেতে তিনি ট্রাম্পের চেয়ে জর্জ বুশ জুনিয়রের আমলটাই বেশ মনে রেখেছেন। এখনো মতের অমিল হওয়া ব্যক্তিকে উপমায় বুশের লোক বলে আখ্যায়িত করেন তপন কুমার। একথা অনেকেরই জানা, তাই অজানা অধ্যায়ের পানে ছুটি।

তপন কুমার চা পানের বেলায় কাপ নাড়িয়ে ঢেউ তোলানোয় একটা শৈল্পিক মাত্রা আছে। চেয়ে দেখেছেন কখনো? অমনি একটা ভাব ছিল আজ থেকে সাড়ে পাঁচ দশক আগেকার জীবনে। স্কুলে যেতেন রীতিমত। বাবা রঙ্গলাল সাহা ছিলেন ব্যবসায়ী। দেশ বিভাগের পর সাম্প্রদায়ীক দাঙ্গা হলে তিনি ফরিদপুর ছেড়ে চলে আসেন বরিশালে। আবাস গাড়েন ভাটিখানার ষোলবাড়িতে। তপন কুমারকে নিয়ে পাঁচ ভাই চার বোনের সংসার। বেশ ভালোই চলছিল তাদের দিনকাল।

অন্য সন্তানদের মত তপন কুমারকেও স্কুলে পাঠান। বীণাপাণি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠ শুরু করে পরবর্তীতে মাধ্যমিকে পড়েছেন টাউন স্কুলে। খেয়ালী তপন কুমার বলেন, তিনি সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছেন। তবে তার এক প্রতিবেশী বলেছেন, তপন মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ওসময় চলন বলন বেশ ছিল। নিজের চেহারাও নজরকাড়ার নেপথ্যের উপমায় টানেন, বাবার চেহারা ছিল অমিতাভ বচ্চনের মত আর মায়ের চেহারায় ছিল শাবনুরের উপস্থিতি। এজন্য তিনিসহ অন্য ভাই বোনদের চেহারও ভালো বৈ মন্দ ছিলনা।

ওরপর অজানা অধ্যায় ভালোবাসার কথা জানতে চাইলে সাবলীল ভাবে বর্ণনা করেন, প্রথমে প্রেম করেছিলেন তাদের পাড়া ভাটিখানার অনিন্দ এক সুন্দরী কন্যার সাথে। যার কথা তপার হৃদআকাশে আজো জ¦লজ¦লে। নাম জিজ্ঞাসা করলে অকপটে কিছুটা জোর দিয়ে উচ্চারণ করেন…। কন্যার রূপের ব্যাখ্যা হলো, তাকে দেখে যেকেউ প্রেমে পড়ে যেত। যথারীতি তপাও তার প্রেমে পড়েছিল। সব্বাইকে ছাপিয়ে তপাকেই অগ্রাধিকার দিয়েছিলো। তপনও সাড়া দিয়েছিলেন বেশ করে। তবে ওই কন্যার অন্যত্র বিয়ে হলে ইতি হয় সে অধ্যায়ের। হৃদয় ভেঙ্গে যায়। ওতেই তপনের বৈরাগ্য কিনা, এর উত্তর এড়িয়ে যান। এরপর বাজার রোডের এক ব্যবসায়ীর দুই কন্যা তপাকে প্রেমের অফার করেছিল। এক কন্যার নাম ফুলের নামে, যা আজো মনে আছে তপার। অন্যজনের নাম মনে আনতে পারছেননা। কন্যাদ্বয়ের অন্যত্র বিয়ে হলে এই প্রেমেরও সমাপ্তি ঘটে।

এর পরপরই আরেক ব্যবসায়ীর চার কন্যা, তাদের ওখানে তপার উপস্থিতি। এই কন্যাদের প্রেমের অভিব্যক্তি ক্যামন ছিল, এমন প্রশ্নের উত্তরে তপার বর্ণনা-‘ওই মাইয়ারাইতো আমার দিতে তাকাইতো, ইশারায় ডাকতো’। সবমিলিয়ে তপার বক্তব্য আমিতো প্রেম করিনাই। মেয়েরাই আগে অফার করেছে। কারণ তার চেহারা ওসময় বেশছিল। কিন্তু তপা কখনোই ভালোবাসার অমর্যদা করেননি। যার অর্থ বোঝাতে চেয়েছে সুযোগ পেলেও শারিরিক সম্পর্ক গড়েননি। এক্ষেত্রে তার অক্ষমতার কথাও টেনে আনেন কথোপকথনকালে। তবে এনিয়ে তার আক্ষেপের অনুপস্থিতিই দেখেছিনু।

দীর্ঘ বর্ণনার পর একটু থেমে, যেন বুকে বেঁধে যাওয়া কষ্টটা নামায়ে ফের শুরু করেন। আজো বলতে পারেন ভালোবাসার জনদের কার কোথায় বিয়ে হয়েছে। ঘর সংসার পেতে কে ক্যামন আছেন। ইতিমধ্যে প্রত্যেকেরই নাতী নাতনী হয়েছে একথাও তার জানা। তবে সত্তর বছরের জীবনে পঞ্চাশ বছর ধরে ঘরছাড়া তপন কুমারের ঘরবাঁধা হয়নি ক্যানো? এর সহজ জবাব- ‘কোথায় যেন আমার ভুল ছিল, নতুবা পাপ ছিল। যার পরিণতি আইজ এমন দশা। আর আগেথেইক্যাই টের পাইছি বউ আমি খাওয়াইতে পারমুনা, তাই ঘরবান্ধার চিন্তাও করিনাই’।

লেখক: গল্পকার ও সাংবাদিক।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD