শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৪ অপরাহ্ন
বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার পাঁচ আসামির ডাক্তারি পরীক্ষার আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে বরগুনার শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমানের আদালতে আবেদন করা হয়।
অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণের দিন বরগুনার শিশু আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ এ আবেদন করেন। পরে ডাক্তারি পরীক্ষার আবেদনের শুনানির জন্য আদালত ১৬ জানুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বহুল আলোচিত এ মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণের দিন পূর্বনির্ধারিত ছিল। প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণের দিন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন এ মামলার বাদী ও নিহত রিফাত শরীফের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ। এছাড়াও একই দিনে এ মামলার পাঁচজন অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামির বয়স নির্ধারণের জন্য আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করেন।
ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে বয়স নির্ধারণের জন্য যেসব আসামির বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করা হয়েছে তারা হলেন- রাশিদুল হাসান রিশান ফরাজী, জয় চন্দ্র সরকার চন্দন, মো. নাঈম, সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ ওরফে মহিবুল্লাহ ও মারুফ মল্লিক।
এ বিষয়ে রিফাত হত্যা মামলার বাদীপক্ষের মনোনীত আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক কিসলু জানান, রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষী দিয়েছেন এ মামলার বাদী ও নিহত রিফাত শরীফের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ। এ মামলার বাদী তার ছেলে হত্যার সঠিক বর্ণনা সাক্ষ্য দেওয়ার মাধ্যমে আদালতে উপস্থাপন করেছেন। এরপর আসামিপক্ষের ১০ জন আইনজীবী তাকে জেরা করেন।
তিনি আরও বলেন, রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির মধ্যে পাঁচজন আসামির বয়স ১৮ বছরের বেশি মনে হচ্ছে। কিন্তু পুলিশের দাখিল করা চার্জশিটে তাদের অপ্রাপ্তবয়স্ক দেখানো হয়েছে। তাই রাষ্ট্রপক্ষ ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের বয়স যাচাই করার জন্য আদালতে আবেদন করেছেন। আগামী ১৬ জানুয়ারি এ আবেদনের শুনানি হবে বলে জানান তিনি।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমানের আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেন নিহত রিফাত শরীফের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ। সাক্ষ্যগ্রহণ উপলক্ষে বরগুনা কারাগারে থাকা এ মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১১ আসামিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এছাড়াও আদালতে উপস্থিত হন জামিনে থাকা এ মামলার অন্য তিন আসামি।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, আমি আমার ছেলে হত্যার বর্ণনা আদালতে সঠিকভাবে দিয়েছি। আমার বিশ্বাস, আমি আমার ছেলে হত্যার ন্যায় বিচার পাবো। আমার একমাত্র ছেলে হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযুক্তরা যে যে ধরনের অপরাধ করেছে তারা সেই ধরনের অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি পাবে।
২৬ জুন বরগুনার সরকারি কলেজের সামনে রিফাত হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। এরপর গত ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক এ দু ভাগে বিভক্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন।
এ মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মো. মুসা এখনো পলাতক রয়েছেন। এছাড়া নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি ও অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামি প্রিন্স মোল্লা উচ্চ আদালতের আদেশে এবং বরগুনার শিশু আদালতের আদেশে মারুফ মল্লিক এবং আরিয়ান হোসেন শ্রাবণ জামিনে রয়েছেন। আর বাকি আসামিরা কারাগারে রয়েছেন।
১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। অন্যদিকে গত ৮ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছে বরগুনার শিশু আদালত।
রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্তরা হলেন- মো. রাশিদুল হাসান রিশান ফরাজী (১৭), মো. রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার (১৫), মো. আবু আবদুল্লাহ রায়হান (১৬), মো. ওলিউল্লাহ অলি (১৬), জয় চন্দ্র সরকার চন্দন (১৭), মো. নাইম (১৭), মো. তানভীর হোসেন (১৭), নাজমুল হাসান (১৪), রাকিবুল হাসান নিয়ামত (১৫), মো. সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ মহিবুল্লাহ (১৭), মারুফ মল্লিক (১৭), প্রিন্স মোল্লা (১৫), রাতুল সিকদার জয় (১৬) এবং আরিয়ান হোসেন শ্রাবণ (১৬)।
আগামীকাল মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্য দেবেন নিহত রিফাতের দুই চাচাসহ এ মামলার তিনজন সাক্ষী। একই দিন বিকেলে বরগুনা শিশু আদালতে অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন নিহত রিফাতের মা ডেইজি বেগম এবং চাচাতো বোন নুসরাত জাহান অনন্যা।