শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৭ অপরাহ্ন
সরকারি কর্মচারী শারমিন আক্তার। বরগুনা থেকে এনে তার এক স্বজনকে ভর্তি করিয়েছেন বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে। তিনদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ভোগান্তি আর যন্ত্রণার তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে শেষে শুক্রবার স্বজনকে ভর্তি করিয়েছেন নগরীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে।
শারমিন আক্তার অভিযোগ করে, যে ওয়ার্ডে থাকার কথা সর্বোচ্চ ৬০ জন রোগী, সেখানে প্রতিদিন রোগী রয়েছে কয়েকশ’। বেশিরভাগ রোগীই বেড না পেয়ে চিকিৎসার তাগিদে অবস্থান নেয় ওয়ার্ডের বারান্দায় নতুবা ওয়ার্ডের মধ্যে মেঝেতে। শুধু তাই নয় এখানকার বাথরুম, টয়লেটের অবস্থাও খুব খারাপ। পানি থাকে না বেশির ভাগ সময়। এ রকম একটি হাসপাতাল চলতে পারে না। কর্তৃপক্ষের কোনো তদারকি নেই, শুধুই অব্যবস্থাপনা। কথা হয় এই ওয়ার্ডের বারান্দার মেঝেতে ৬ দিন ধরে চিকিৎসাধীন রোগী সাহেরা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা নিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছি। ডাক্তারদের পা ধরেও আনতে পারি না। তাছাড়া তাদের দেখা মেলাই ভার।
জানা গেছে, শেবাচিম হাসপাতালের ৪র্থ তলার মেডিসিন ওয়ার্ডের মধ্যে চারটি ইউনিটের কার্যক্রম চলে থাকে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই ওয়ার্ডটিতে পা ফেলারও জায়গা নেই রোগীদের। তারপর এক রোগীর সঙ্গে আরেক রোগী ঠাসাঠাসি করে থাকছেন এখানে। ওয়ার্ডের বারান্দায়ও খালি নেই কোনো স্থান। এখানেও ঠাসাঠাসি ওয়ার্ডের মতো। প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় চিকিৎসক-নার্স হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানা গেছে। শুধু এই ওয়ার্ডটিতেই নয়, তৃতীয় তলার গাইনি ওয়ার্ড, প্রসূতি বিভাগ, মহিলা সার্জারি ওয়ার্ড এবং দ্বিতীয় তলার শিশু ওয়ার্ডেও একই অবস্থা। তবে এর মধ্যে মহিলা মেডিসিন ও মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডের মধ্যে চারটি করে মোট আটটি ইউনিটের কার্যক্রম চলে।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে জানা গেছে, ৩৬ বেডের এই ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ রোগী চিকিৎসাধীন থাকেন। হিজিবিজি অবস্থায় এখানে চিকিৎসাসেবা দিতে হয় বলে জানিয়েছেন এখানে কর্মরত এক নার্স।
প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসাধীন রোগীর স্বামী মেহেন্দিগঞ্জের বাসিন্দা আবুল ফজল জানান, এখানে রোগীরা সুস্থ হওয়ার আশা নিয়ে এলেও পরিবেশের কারণে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে দম ফেলাও যেন কষ্টের ব্যাপার। প্রতিদিন অন্তত যদি হাসপাতালটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হতো তাহলেও একটু স্বস্তি মিলতো।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অবকাঠামোগত দিক দিয়ে হাসপাতালটি ৫শ’ শয্যার হলেও কাগজে কলমে ১ হাজার শয্যার হাসপাতাল এটি। এখানে ১ হাজার শয্যার জনবল তো দূরের কথা, এখানে ৫শ’ শয্যার জন্যও পর্যাপ্ত জনবল নেই। ৫শ’ শয্যার জন্য ১২৫ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ৯৯ জন। এছাড়া সব মিলিয়ে অন্য ৩২১টি পদ শূন্য রয়েছে এখানে এবং ১ হাজার শয্যার হিসেব করতে গেলে ১৯০১টি পদ শূন্য রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসাকেন্দ্র এই হাসপাতালে। যে কারণে চিকিৎসা সেবা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে দাবি কর্তৃপক্ষের।
বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. সৌরভ সুতার বলেন, আউটডোরে তেমন কোনো সমস্যা না হলেও ইনডোরে সমস্যা অনেক। চিকিৎসক পর্যাপ্ত না থাকায় সমস্যা হচ্ছে সেটা আমরাও বুঝতে পারছি।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, আমাদের এখানে চিকিৎসকসহ স্টাফ সংকট রয়েছে। আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। আর তাছাড়া আমাদের অপর ভবনের কাজটিও শেষ পর্যায়ে। নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হয়ে গেলে জায়গা সংকটের সমস্যাও নিরসন হবে। পরিচালক আরও বলেন, আমরা আরও ভবন করার জন্য চেষ্টা করছি। সেগুলো সম্পন্ন হলে আমাদের আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
সূত্র: যুগান্তর