সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ পূর্বাহ্ন
রাজস্ব জালিয়াতির শীর্ষে থাকা মেঘনা গ্রুপের দুই কোম্পানি ২ হাজার ৫২০ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এর মধ্যে ইউনাইটেড এডিবল অয়েল মিলস লিমিটেড ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আরেক প্রতিষ্ঠান মেঘনা টি কোম্পানি লিমিটেডের ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ ৭২০ কোটি টাকা। ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
এ প্রসঙ্গে ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মেঘনা গ্রুপের দুই কোম্পানির বিগত পাঁচ বছরের সব আর্থিক লেনদেনের হিসাব নিরীক্ষা চলছে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় কর আইনজীবী ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট ড. মো. নুরুল আজাহার শামীম বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান ভ্যাট ফাঁকি দেয়, তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে ফাঁকি দেওয়া অর্থ উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ ভ্যাট দেন জনগণ। এটা আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার দায়িত্ব ব্যবসায়ীদের। টাকা আত্মসাৎকারীদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সিনিয়র সহ-সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ বলেন, কষ্টের টাকা ভ্যাট হিসেবে সরকারকে দেন জনগণ। সরকার সে টাকায় দেশের উন্নয়ন কর্মকা- এগিয়ে নিচ্ছে। ব্যবসায়ীদের উচিত এই টাকা স্বচ্ছতার সঙ্গে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া।
ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা সূত্র জানায়, মেঘনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এডিবল অয়েল মিলস লিমিটেড উৎপাদন ক্ষমতা মোতাবেক প্রতি বছর ৩ লাখ ৬০ হাজার টন সুপার ফ্রেশ সয়াবিন তেল এবং সুপার পিউর ভেজিটেবল অয়েল উৎপাদন করছে। বিগত পাঁচ বছরে এই তেল উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ টন। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও হিসাব কষে দেখেছেন, প্রতি টন তেলে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। সে হিসাবে প্রতি বছর ৩ লাখ ৬০ হাজার টন ফ্রেশ ব্র্যান্ডের তেলে ৩৬০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ইউনাইটেড এডিবল অয়েল মিলস লিমিটেড। মেঘনা গ্রুপের এই একটি প্রতিষ্ঠানই বিগত পাঁচ বছরে কমপক্ষে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা, নিরীক্ষা শেষে ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ আরও বাড়বে।
ভ্যাট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, বিগত পাঁচ বছরে ওই ১৮ লাখ টন সুপার ফ্রেশ সয়াবিন তেল ও সুপার পিউর ভেজিটেবল অয়েল উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানির আড়ালে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে মেঘনা গ্রুপ। কারণ তেল উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করেছে মেঘনা গ্রুপ। আর এই বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের অর্থ পাচার করা হয়েছে, যা সহজেই ধরা পড়বে বিগত পাঁচ বছরের আমদানিতথ্য পর্যালোচনার মাধ্যমে।
ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা সূত্র জানায়, মেঘনা গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠান মেঘনা টি কোম্পানি লিমিটেডও ভ্যাট ফাঁকিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর ফ্রেশ ব্র্যান্ডের জেসমিন টি নামে ১৪ হাজার ৪০০ টন চা উৎপাদন করে বাজারজাত করছে। সে হিসাবে বিগত পাঁচ বছরে ৭২ হাজার টন চা উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করেছে মেঘনা টি কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি টন চা বিক্রির ক্ষেত্রেও ১০ হাজার টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। সে হিসাবে প্রতি বছর ফ্রেশ ব্র্যান্ডের জেসমিন টি ১৪ হাজার ৪০০ টন চা উৎপাদন করে বাজারজাত করার বিপরীতে কমপক্ষে ১৪৪ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। বিগত পাঁচ বছরে ৭২ হাজার টন চা উৎপাদন ও বাজারজাত করে সরকারকে ৭২০ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে মেঘনা গ্রুপ।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, মেঘনা গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এডিবল অয়েল মিলস লিমিটেড ও মেঘনা টি কোম্পানি লিমিটেড কাগজপত্রে যে উৎপাদন ক্ষমতা দেখিয়েছে, বাস্তবে এই উৎপাদন ক্ষমতা আরও অনেক বেশি। বর্ধিত আকারে উৎপাদিত পণ্য বাজারে বিক্রি করে পুরো ভ্যাট ও কর থেকে সরকারকে বঞ্চিত করছে ক্ষমতার দাপটে বেপরোয়া এই মেঘনা গ্রুপ।