মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ০৭:১৭ অপরাহ্ন
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি :
চৈত্রের খরতাপে প্রান যখন ওষ্ঠাগত তখন সকলেরই দৃষ্টি কাড়ে মৌসুমি ফল তরমুজে। এ ফল সুস্বাদু, রসালো হওয়ায় পবিত্র রমজানে ইফতারির মেন্যুতে অনেকেরই পছন্দ এক গ্লাস তরমুজের শরবত।
এছাড়া ইফতারের খাদ্য তালিকায় তরমুজের মতো ফল থাকছে সবার ঘরে ঘরে, ইফতার পার্টিতে। তাই চৈত্রের গরমে তরমুজের চাহিদা বেড়েছে ক্রেতার কাছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় তরমুজের বাম্পার ফলনে কৃষক উচ্ছ্বসিত হলেও এখন আর হাসি নেই তাদের মুখে।
বিপুল অর্থ ব্যয় ও অকান্ত পরিশ্রম করে চাষাবাদের পর ক্ষেতে অস্থায়ী আবাস গড়ে রাত জেগে পাহারা দিয়েও শেষ রক্ষা হচ্ছেনা কৃষকের। রাজনৈতিক দলের ছত্র ছায়ায় থাকা সন্ত্রাসীদের বিরামহীন চাঁদাবাজিতে আতংকিত হয়ে পড়েছে উপকূলের কৃষক।
অবস্থা এমন ক্ষেত থেকে পাকা তরমুজ কাটতে গেলেও দিতে হচ্ছে চাঁদা, ট্রলি কিংবা ট্রাকে লোড করতেও দিতে হচ্ছে চাঁদা। চাঁদার টাকা পরিশোধ করা না হলে মারধর করা হচ্ছে কৃষককে।
এতে বিপুল অর্থ ব্যয় ও পরিশ্রম শেষে লাভের মুখ দেখার আগেই বেপরোয়া চাঁদাবাজির কবলে পড়ে তরমুজ চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে কৃষক। উপজেলার বিভিন্ন হাট, বাজারে তরমুজ বেঁচা কেনায় হাঁকডাক বেড়েছে।
ফলের দোকান ছাড়াও, ফুটপাথ কিংবা ভ্যানে করে বিক্রি হচ্ছে রসালো এ ফল। রাস্তার পাশে আলদাভাবে স্তুপ করে রেখেও বিক্রী হচ্ছে তরমুজ।এবছর ক্ষেতে তরমুজ চাষের পর কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগীতায় রোগ বালাই ছাড়াই ক্ষেত থেকে পাকা তরমুজ সংগ্রহ করতে পেরেছেন কৃষক।
কৃষকরা তাই উচ্ছ্বসিত হয়ে পাকা তরমুজ নিয়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে তরমুজ উৎসবও উৎযাপন করেছেন। কিন্তু তাদের এ আনন্দে ভাটা পড়েছে সন্ত্রাসীদের লাগামহীন চাঁদাবাজির কারনে। একটি বিস্বস্ত সূত্র জানায়, উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড,পূর্ব টিয়াখালী গ্রামের কৃষক রনি মৃধা ১২ মার্চ দুপুরে সিক্সলেন সড়কে তার ক্ষেতের পাকা তরমুজ বাজারজাত করতে ট্রাকে লোড করতে গেলে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করেন ওয়ার্ড বিএনপির সম্পাদক জাফর প্যাদা ও তার সহযোগী ওয়ার্ড যুবদল সভাপতি রুবেল প্যাদা, সম্পাদক শহিদুল প্যাদা।
চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করায় মারধর করা হয় তাকে। শেষ পর্যন্ত তরমুজ বাজারজাত করনে দাবীকৃত চাঁদার টাকা দিতে হয় তাদের। এমনকি পরে ক্ষিপ্ত হয়ে তার ক্ষেতে থাকা প্রায় ৩ লাখ টাকা মূল্যের তরমুজ চুরি ও কেটে নষ্ট করে দিয়েছেন সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজরা।
এ ঘটনায় রনি মৃধা বাদী হয়ে কলাপাড়া থানায় অভিযুক্ত তিন বিএনপি নেতার নামে মামলা করেছেন। অপরদিকে নাটোর পৌর এলাকার ৮ নং ওয়ার্ডের ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়নের কাছিমখালি গ্রাম থেকে ১৮মার্চ বিকেলে সরাসরি কৃষকের ক্ষেত থেকে তরমুজ কিনতে এলে বিএনপি ক্যাডার সাইদুর রহমান বেল্লাল, শাওন ফকির ও জাকারিয়া ফকির তার কাছে ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করেন। চাঁদার টাকা না দিলে প্রানে মেরে গুম করে ফেলার হুমকী দেয়া হয় ওই ব্যবসায়ীকে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় মারধর সহ পকেট থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয় শাওন ফকির। পরে ৯৯৯এ ফোন দিয়ে প্রান রক্ষা হয় ওই ব্যবসায়ীর।
এ ঘটনায় শফিকুল ইসলাম কলাপাড়া থানায় মামলা করেছেন। ক্ষেত থেকে তরমুজ সংগ্রহ থেকে ট্রাকে লোড এবং বিক্রী পর্যন্ত চাঁদা দিতে হচ্ছে কৃষককে। এহেন চাঁদাবাজি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপকূল জুড়ে।
বিক্রেতারা জানান, বর্তমানে বাজারে যে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে, তার এক একটির ওজন তিন থেকে পাঁচ কেজি। এগুলো ১৫০-২৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। চাঁদাবাজির কবলে পড়ায় তরমুজের বাজার জমে উঠছেনা।
বিক্রেতা আমিরুল গাজী বলেন, ক্ষেত থেকে পাইকারি দরে প্রায় ৪০০ তরমুজ কিনেছেন। চাহিদা থাকায় বাজারে ভালা দামে বিক্রি করছেন। অপর এক বিক্রেতা মনির মুন্সি বলেন, এখন তরমুজের সরবরাহ মোটামুটি রয়েছে।
সামনে আরও বাড়বে। মিঠাগঞ্জ গ্রামের কৃষক খোকন শিকদার জানান,সে প্রথমবারের মতো ১৫ শতাংশ জমিতে ড্রাগন জাতের আগাম তরমুজ চাষ করেছেন। তার ক্ষেতের এক একটি তরমুজের ওজন হয়েছে ১২ থেকে ১৫ কেজি।
ইতিমধ্যে তিনি প্রায় ৬০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রিও করেছেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তিনি আরও ১ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। কিন্তু চাঁদাবাজি বন্ধ করা না গেলে অনেক কৃষক তরমুজ চাষে তার মত আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরাফাত হোসাইন বলেন, এ বছর কলাপাড়ায় ৩৫০০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে।
আবহাওয়া অনুকূল থাকা ও রোগ বালাইর উপদ্রব কম হওয়ায় বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে কৃষকের বর্তমান সমস্যা নিরসনে প্রশাসন উদ্দোগ নিচ্ছে বলে দাবী তার। কলাপাড়া থানার ওসি মো. জুয়েল ইসলাম বলেন, তরমুজ চাষীদের পাশে দাড়িয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
চাঁদাবাজি রুখতে ইতিমধ্যে একাধিক মামলা রুজু করা হয়েছে। বেশ কয়েকজন চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরন করা হয়েছে।
মোয়াজ্জেম হোসেন কলাপাড়া
২৩-০৩-২০২৫