বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা এইচ এম এরশাদ আর নেই। ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর রবিবার সকাল পৌনে আটটার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ছাড়েন তিনি। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু সাবেক রাষ্ট্রপতির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
৯০ বছরেরও বেশি বয়সী সাবেক সেনাশাসক এরশাদ রক্তে সংক্রমণসহ লিভার জটিলতায় ভুগছিলেন। এছাড়া তার অস্থিমজ্জা পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন উৎপাদন করতে পারছিল না।
গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে তিনি বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে আসেন। সে সময় এ নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়ালেও পরে জানা যায় তার অবস্থা সঙ্গীন। এরপর জাতীয় পার্টি তার চেয়ারম্যানকে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচন করে। আর এরই মধ্যে তিনি দলের উত্তরসূরী হিসেবে ছোট ভাই জি এম কাদেরকে নির্বাচন করেন।
গত ২২ জুন গুরুতর অসুস্থ হলে এরশাদকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। ৪ জুলাই থেকে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। এরপর থেকে তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেই ছিলেন। লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার ১১ দিন পর না ফেরার দেশে চলে যান রংপুর-৩ (সদর) আসন থেকে বারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া এরশাদ।
১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ভারতের কোচবিহার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এরশাদ। পরে তার পরিবার রংপুরে চলে আসে। রংপুরেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন তিনি।
১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে ১৯৭১-৭২ সালে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তন করেন।
১৯৭৩ সালে এরশাদকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ওই বছরই আগস্ট মাসে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে তাকে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান নিয়োগ করা হয়।
১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে এরশাদকে সেনাবাহিনীপ্রধান পদে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং ১৯৭৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন।
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে সেনাপ্রধান এরশাদ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসেন। তার পূর্বসূরি জিয়াউর রহমানের পথ ধরে ক্ষমতায় থেকেই গঠন করেন তার রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি।
১৯৮৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক (সিএমএলএ) হিসেবে দেশ শাসন করেন। এরপর তিনি রাষ্ট্রপতি আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে অপসারণ করে ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন এবং এ দলের মনোনয়ন নিয়ে ১৯৮৬ সালে পাঁচ বছরের জন্য দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণঅভ্যুত্থানের কারণে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।
১৯৯১ সালে জেনারেল এরশাদ গ্রেপ্তার হন। কারাগারে থেকেই অংশ নেন ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিএনপি সরকার তার বিরুদ্ধে কয়েকটি দুর্নীতি মামলা দায়ের করে। তার মধ্যে কয়েকটিতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন এবং সাজাপ্রাপ্ত হন। তবে ক্ষমতা দখল ও জেনারেল মঞ্জুর হত্যাসহ তার বিরুদ্ধে থাকা আরও বেশ কিছু মামলার নিষ্পত্তি হয়নি দীর্ঘ দিনেও।
১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও এরশাদ সংসদে পাঁচটি আসনে বিজয়ী হন। ছয় বছর জেলে থাকার পর ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের আমলে তিনি জামিনে মুক্ত হন।
২০০০ সালে তার প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে, যার মধ্যে মূল ধারার চেয়ারম্যান হন তিনি।
২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি ১৪টি আসনে জয়ী হয়। এরপর তিনি ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের সঙ্গে মহাজোট গঠন করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর দল ২৭টি আসনে বিজয়ী হয়। এরপর দশম ও সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সাংসদ হন।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও রংপুর-৩ আসন হতে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। চলতি জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলের নেতা ছিলেন।