রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫১ অপরাহ্ন
তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে আবারো বাজারে বিক্রি হওয়া দুধ নিয়ে গবেষণা করল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার। সরকারের কর্তাব্যক্তি ও কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা যখন বলছেন ভিন্ন কথা তখন দ্বিতীয় দফার গবেষণা বলছে, বাজারের পাঁচটি কোম্পানির সাতটি দুধ ও খোলা বাজার থেকে নেয়া তিনটি দুধের নমুনা সংগ্রহ করার পর প্রত্যেকটিতে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
রিসার্চ সেন্টারের সদ্য সাবেক পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক এমন দাবি করে এই গবেষণা নিয়ে কোনো চক্রান্ত না খোঁজার আহ্বান জানিয়েছেন। শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা বলেন এই অধ্যাপক। তবে কোন পাঁচটি কোম্পানির সাতটি দুধে গবেষণা চালানো হয়েছে তা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি।
তাতে বলা হয়, ‘গত সপ্তাহে আমরা এই পরীক্ষাটি পুনরায় সম্পন্ন করেছি। প্রথমবারের মতো এবারও পূর্বোক্ত পাঁচটি কোম্পানির সাতটি পাস্তুরিত প্যাকেটজাত দুধের একই জায়গা থেকে সংগৃহীত নমুনা এবং একই জায়গা থেকে খোলা দুধের সংগৃহীত তিনটি নমুনা, অর্থাৎ সর্বমোট ১০টি নতুন নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি একই নিয়মে একই উন্নত ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়।’
পরীক্ষার ফলাফলের বিষয়ে বলা হয়, ‘এর ফলাফল আগের মতোই উদ্বেগজনক। এবারও সবগুলো নমুনাতেই অ্যান্টিবায়োটিক শনাক্ত করা গেছে। অ্যান্টিবায়োটিকের মোট সংখ্যা ছিল চারটি (অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, এনরোফ্লক্সাসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং লেভোফ্লক্সাসিন)। এর মধ্যে আগের বারে ছিল না এমন অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে দুটি (অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও এনরোফ্লক্সাসিন)।’
এতে বলা হয়, ১০টি নমুনার মধ্যে তিনটিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে চারটি, ছয়টিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে তিনটি এবং একটিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে দুটি।
এর আগে গত ২৫ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাতটি প্যাকেটজাত (পাস্তুরিত) দুধের নমুনা পরীক্ষা করে তাতে মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়ার কথা বলেছিলেন। যা নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান তাদের ওই গবেষণার সঙ্গে বিভাগের সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেন। পরে গবেষণার রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন তোলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
গত মঙ্গলবার প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দিন গবেষণার নিয়ম না মানা এবং ত্রুটিপূর্ণ গবেষণা করায় আ ব ম ফারুকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, পিআর রিভিউস জার্নালে প্রকাশ হওয়ার আগেই ওই গবেষক তার তথ্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। কিন্তু তার গবেষণার স্যাম্পল সঠিক ছিল না। গবেষণাতেও ত্রুটি ছিল। তাকে সাত দিনের সময় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সন্তোষজনক কোনো জবাব না পেলে তার বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আর দুগ্ধ ব্যবসায়ীদের দাবি, এই গবেষণা দেশের দুগ্ধ শিল্পের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যও ঢাবি শিক্ষকদের ওই রিপোর্টকে মিথ্যা বলে দাবি করেছেন।
এই প্রেক্ষাপটে শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায়ও বাজার থেকে ১০টি নমুনা নিয়ে ১০টিতেই অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়ার কথা জানান অধ্যাপক ফারুক। তিনি বলেন, ‘আমরা একই গবেষক দল একই জায়গা থেকে একই কোম্পানির নমুনা সংগ্রহ করে একই যন্ত্র দ্বারা পরীক্ষা করেছি। ফলাফল আগের মতোই উদ্বেগজনক ছিল। পার্থক্য শুধু প্রথম দফায় পাওয়া গিয়েছিল তিনটি অ্যান্টিবায়োটিক, এবার চারটি।’ গত ২ জুলাই থেকে তারা এই দ্বিতীয় দফার পরীক্ষা চালান বলে জানান ফারুক।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা ভবিষ্যতেও এই পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষাগুলোর ফলাফল জনস্বার্থে প্রকাশ করার চেষ্টা করব।’
ষড়যন্ত্রের অভিযোগ নাকচ করে অধ্যাপক ফারুক বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগজনক এই সমস্যাটি সমাধানে উদ্যোগী হওয়ার পরিবর্তে বিশেষ কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে আর বিদেশি চক্রান্ত খুঁজতে হবে না।’