বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৭ পূর্বাহ্ন
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ৯ নং ধুলাসার ইউনিয়নের ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত ১২৮ নং চর ধূলাসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বর্তমানে বিদ্যালয়ে কাগজে-কলমে মোট শিক্ষার্থী ১১৭ জন। কিন্তু উপস্থিতি হয় প্রতিদিন গড়ে ১০-১২ জন। বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংখ্যা ৫ জন। যার মধ্যে প্রধান শিক্ষক, তার স্ত্রী এবং মেয়ে রয়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে প্রতি শিক্ষাবর্ষে ৮-১০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এভাবে চলে আসছে বিদ্যালয়টির পাঠদান কার্যক্রম।
বিদ্যালয়টির শিক্ষকদের অশোভন আচরণ, অনুপস্থিতি, অব্যবস্থাপনার কারণে এমন পরিস্থিতি। ম্যানেজিং কমিটি কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ। শিক্ষকরা মনগড়া ও নিজেদের খেয়াল খুশিমত চালাচ্ছেন পাঠদান।
রবিবার(২৬ অক্টোবর)সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয় ৩ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে একটি শ্রেণিকক্ষে চলছে পাঠদান। বিদ্যালয়ের বাকি কক্ষগুলো পড়ে আছে ফাঁকা।
সকাল সাড়ে ৯টায় সরকারি নিয়মানুসারে প্রাথমিকের পাঠদান চলার কথা থাকলেও এসব নিয়ম-নীতির কোনো তোয়াক্কা না করে নিজস্ব নিয়মে চলছে বিদ্যালয়টি।
দশটার সময় ক্লাসে আসেন সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর। আকলিমা নামের এক শিক্ষিকা সেও দশটার কিছু পরে আসেন,
সাড়ে দশটার দিকে বিদ্যালয় প্রবেশ করেন প্রধান শিক্ষক আল-আমিন বিশ্বাস।
ওই সময় বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণিকক্ষ ছিল শিক্ষার্থীশূন্য। সাংবাদিক দেখে তড়িঘড়ি করে অফিস কক্ষে ঢুকে বিগত কয়েক দিনের স্বাক্ষর একসাথে করেন সহকারী শিক্ষিক জাহাঙ্গীর ও আকলিমা।
তবে হাজিরা খাতায় গত কয়েকদিন প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতি দেখা গেছে। আরেক সহকারী শিক্ষক সাওদাও রয়েছেন ছুটিতে বলে জানান। যদিও ছুটির কোন ডকুমেন্টস দেখাতে পারেনি প্রধান শিক্ষক।
সোজা কথায়, বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষকের বিপরীতে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট উপস্থিত ছিল ১১ জন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ঠিকমতো আসেন না।
শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কোনো ক্লাস না নেওয়ায় গত ৭-৮ বছর ধরে স্কুলটি একবারেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে। শিক্ষকরা অনিয়মিত হওয়ায় কারণে বিদ্যালয়টিতে কমতে থাকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা।
স্থানীয় লিটন হোসেন তালুকদার বলেন, শিক্ষকদের অনিয়মের কারণে আজ বিদ্যালয়টি প্রায় শিক্ষার্থীশূন্য হয়ে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন গত এক বছর আগে তাহার ছেলেকে এ বিদ্যালয়ে এনে ভর্তি করেন। কিন্তু গত এক বছরে সে এখনো পর্যন্ত বই দেখে রিডিং পড়তে পারে না।
স্থানীয় সজীব তালুকদার সহ একাধিক অভিভাবক বলেন, সব অনিয়মের অবসানের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পদচারণায় ও সুন্দর এবং স্বাভাবিক পাঠদানের মধ্য দিয়ে আবারো মুখরিত হয়ে উঠুক।
আমরা এমনটাই প্রত্যাশা করি।
অভিভাবক সদস্য মোহাম্মদ সুফিয়ান তালুকদার আক্ষেপ করে বলেন, শিক্ষকরা ঠিকমতো ক্লাসে আসে না , নয়টার সময় আসার কথা থাকলেও তারা কখনো ১০টা কখনো ১১টায় আসেন। প্রধান শিক্ষক, তার মেয়ে স্ত্রী সহ একই পরিবারের তিনজন তারা একদিন এসে দুই-তিন দিনের সই একবারে দিয়ে চলে যায়। আমরা চাই প্রতিষ্ঠানটি সঠিকভাবে চলুক।
সহকারী শিক্ষিকা আকলিমা বেগম তাদের অনিয়মের কথা স্বীকার করে নিউজ না করার অনুরোধ জানান।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক আল আমিন বিশ্বাস বলেন, আমি, আমার স্ত্রী, ও মেয়ে একই প্রতিষ্ঠানে চাকরী করলেও কখনো ব্যক্তিগত প্রভাব খাটাইনি।
শারীরিক অসুস্থ থাকার কারনে গত দুই দিন স্কুলে আসেননি তবে ছুটি না নিয়ে অনিয়মের দ্বায় শিকার করেন। তিনি আরো বলেন, সহকারী শিক্ষিকা আকলিমা গত বৃহস্পতিবার স্কুলে আসেনি।
রবিবার এসে স্বাক্ষর করার সুযোগ নেই। সহকারী শিক্ষিকা মেয়ে সাওদার অনুপস্থিতির বিষয় জানতে চাইলে ছুটিতে আছে বলে জানান তবে ছুটির কাগজ দেখাতে পারেন নি।
কলাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অচ্যুতানন্দ দাস বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম করার সুযোগ নেই, আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি, সরেজমিন তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: বখতিয়ার রহমান বলেন, অতিদ্রুত বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি।
মোয়াজ্জেম হোসেন
কলাপাড়া
২৯-১০-২০২৪।