বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২৯ পূর্বাহ্ন
মোঃ নাসির উদ্দিন গলাচিপা প্রতিনিধিঃ
সবাইকে কাঁদিয়ে কর্মস্থল থেকে অশ্রুসিক্ত বিদায় নিলেন গলাচিপা উপজেলা বাসীর হৃদয়ের মানুষ, সৃষ্টিশীল এক কর্মবীর ইউএনও মহিউদ্দিন আল হেলাল। তিনি ছিলেন এক নতুন গলাচিপা উপজেলা গঠনের স্বপ্নদ্রষ্টা, শিক্ষানুরাগী, উদ্ভাবনী চিন্তা শক্তির এক মহানায়ক।
তাই তো ইউএনও মহিউদ্দিন আল হেলালকে বিদায় জানাতে আবেগাপ্লুত গলাচিপার মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে তার বিদায়কে সম্মান জানিয়ে অশ্রু ঝরিয়েছে সাধারণ মানুষ।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দিনটি ছিল গলাচিপায় ইউএনও মহিউদ্দিন আল হেলাল এর শেষ কর্মদিবস। এদিন সকালে নতুন ইউএনও মো. মিজানুর রহমান কে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ ও দ্বায়িত্ব হস্তান্তর করেন তিনি।
পরে নতুন ইউএনও’র সাথে সকল কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানদের পরিচয় পর্ব শেষে বিদায় বেলা গলাচিপার ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহিউদ্দিন আল হেলাল কে বিষণ্ন মনে দেখা যায়।
দীর্ঘদিনের কর্মস্থল ও এই উপজেলার মানুষের প্রতি ভালোবাসা, মায়া তাকে আবেগাপ্লুত করে। জানা গেছে ইউএনও মহিউদ্দিন আল হেলাল কে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে পদায়ন করা হয়েছে।
তাই তো এত আয়োজন বিদায়ের। শুরুটা ২০২২ এর আগস্ট মাসে, গলাচিপা উপজেলার ইউএনও হিসেবে অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব পান তৎকালীন দশমিনা উপজেলার ইউএনও মহিউদ্দিন আল হেলাল।
এর কিছুদিন পরেই ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে গলাচিপা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তাকে পদায়ন করা হয়। সেই তো শুরু গলাচিপার মানুষের সাথে একত্রে পথচলা আর শেষটা হলো গতকাল সোমবার।
দিনটা উপজেলা বাসীর কাছে এক বিষাদময়। বিদায় বেলা তাই সবাইকে কাঁদিয়ে নিজেও কাঁদলেন। স্মৃতি হিসেবে একটি বৃক্ষ রোপণ করে গেলেন বাস ভবনে। ইউএনও মহিউদ্দিন আল হেলাল ছিলেন সাধারণের কাছে বিশ্বাস ও আস্থার নাম।
তার হাসিমুখ দেখে সবাই ভরসা পেতেন, কথা বলার সাহস পেতেন। সর্বসাধারণের জন্য তার দরজা সবসময় খোলা ছিল,দারিদ্র্য, নিপীড়িত মানুষ সরাসরি কথা বলার সুযোগ পেতো। তাইতো সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসা ও প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি।
বিদায় সেতো তিন অক্ষরের একটি শব্দ কিন্তু এর গভীরতা কতখানি তা উপলব্ধি করলেই কেবল বোঝা যায়। গলাচিপাবাসী আজীবন মনে রাখবে বিদায়ী এই ইউএনওকে। আবারও কখনো হয়তো তিনি গলাচিপার মানুষের মাঝে আসবেন, সেই অপেক্ষায় থাকবে সবাই।
গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকা কালীন মহিউদ্দিন আল হেলাল দিনরাত এক করে কাজ করেছেন। মানুষকে সেবা দিয়ে ভালোবাসা অর্জন করে নিয়েছেন।
কর্মস্থলে মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন সেবা দিয়ে পরপর দুইবারের শ্রেষ্ঠ ইউএনও নির্বাচিত হয়েছেন, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি শুদ্ধাচার পুরস্কারও পেয়েছেন।
শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের দক্ষ, মেধাবী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করেছেন। তার কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাজ হলো, ভূমিহীনদের বাছাই করে তাদের মাঝে সরকারি ঘর পৌঁছে দেয়া।
তার হস্তক্ষেপে জমি নিয়ে ভাই ভাই ১৯ বছরের বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। উপজেলার সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন এবং ইতিবাচক সহযোগিতা প্রদান। পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে সাঁতার প্রশিক্ষণ চালু করা, বাল্যবিয়ে বন্ধে তৎপরতা। অসহায়, দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও আর্থিক সহায়তা করা।
অসহায় মানুষের বাড়ি গিয়ে খাবার পৌঁছে দেয়া, নিজ উদ্যোগে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর স্বার্থে বিভিন্ন জায়গায় কাঠের সেতু নির্মাণ, সামাজিক সংগঠনকে সাথে নিয়ে নিজ হাতে পুকুর, নর্দমা পরিষ্কার করে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ গড়ে তুলেছেন।
ঘূর্ণিঝড় ও বিপদের সময় মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সতর্ক করা ও নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া, ঝড়ের মধ্যে নিজে উপস্থিত থেকে বিভিন্ন স্থানের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ রক্ষায় কাজ করা, উপজেলায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতি অনিয়ম প্রতিরোধে ভূমিকা রাখা, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন, উৎসবমুখর ও জাঁকজমকপূর্ণ বৈশাখি মেলার আয়োজন, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন ও মেধা বিকাশে বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও সেমিনার আয়োজন, বাজার মনিটরিং, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে হেলমেট পরিধান নিশ্চিত, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, কিশোর কিশোরী ক্লাব সক্রিয় করা, এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি পরিক্ষার্থীদের বোর্ড পরীক্ষার আদলে প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা নেয়া, শিক্ষার্থীদের বাসায় বাসায় গিয়ে পড়াশোনার খোঁজ নেয়া।
বিভিন্ন পরীক্ষায় জিপিএ প্রাপ্ত ছাত্র ছাত্রীদের ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিকৃত ছাত্র ছাত্রীদের সম্মাননা প্রদান করা। এছাড়াও গলাচিপা স্কিল ল্যাব স্থাপন, যেখানে ৮ টি কম্পিউটার রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য।
প্রথম স্মার্ট গণগ্রন্থাগার উপকূল বাতিঘর চালু করা, উপজেলা ভিত্তিক স্মার্ট অ্যাপ সুরাহা চালু করা, শিল্পকলা একাডেমি সক্রিয় করা, ল্যাংগুয়েজ ক্লাব স্থাপন বিদ্যালয় পর্যায়ে। প্রোগ্রামিং ও রোবটিক্সের ওয়ার্কশপসহ সেমিনার আয়োজন, উপজেলা পর্যায়ে গণিত অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতা।
ইসলামিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা (রমজান মাসে), বিতর্ক প্রতিযোগিতা(উপজেলা পর্যায়ে) মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে, আন্ত:উপজেলা জেলা প্রশাসক বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজন সহ নানান কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
এমনকি বিদায় মুহূর্তে উদ্বোধন করে যান। তিনি ছিলেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, যা পরিকল্পনা করেছেন তাই বাস্তবায়ন করেছেন। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ক্রীড়া, পর্যটনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেন। উপজেলায় দীর্ঘ ২ বছরের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে গেছেন তিনি।
তাই তার বদলির খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েন উপজেলার মানুষ। বিদায় বেলায় ইউএনওকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে সবাই।