রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৪ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার ॥
বরিশাল কাউনিয়া শহীদ আরজুমনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ.কে.এম কামরুল আলম চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম বিদ্বেষী আচরণ, দুর্নীতি, অনৈতিক কর্মকান্ড, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে অত্র বিদ্যালয়ের অভিভাবকবৃন্দ।
সোমবার ( ১ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১ টায় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেস ক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
অভিভাবকের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফেরদৌস জাহান নাজনীন। তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক ২০২৩ সালের নভেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষার সময় পঞ্চম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র মোঃ নাহিয়ান (১১) কে মিথ্যা অভিযোগে ইংরেজী পরীক্ষা শুরু হওয়ার ঠিক ২৫ মিনিট পর ষড়যন্ত্র করে বহিষ্কার করে।
কিন্তু অন্য শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে একই ঘটনা গটলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ ঘটনায় নাহিয়ান ও তার মার খুব কান্নাকাটি করে এবং মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। এই শিক্ষার্থীর মাকে অপমান করে লাইব্রেরী থেকে তাড়িয়ে দেয়। তারপরও প্রধান শিক্ষক নাহিয়ানের পিছনে লেগেই থাকে।
২০২৪ সালের জানুয়ারী মাসের শেষে দিকে নাহিয়ানকে লাইব্রেরীর বারান্দায় দেখে প্রধান শিক্ষক তার রুমে নিয়ে জিজ্ঞাসা করে তুই কোন ক্লাসে পড়িস? নাহিয়ান জবাব দেয়, স্যার আমি ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি। তোকে তো ইংরেজী বিষয় বহিষ্কার করলাম।
তুই কিভাবে উঠলি? একথা শুনে নাহিয়ান খুব কষ্ঠ পায় এবং ক্লাশে কান্নাকাটি করে।
বাড়িতে গিয়ে ওর মাকে ঘটনা জানায়।
২০২৪ সালের ৬ জুন প্রধান শিক্ষক ঢিল মারার অভিযোগে এনে নাহিয়ানের মা-বাবাকে ফোন করে লাইব্রেরীতে এনে টি. সি দেওয়ার কথা বলে ও অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে।
নাহিয়ানের মাকে বলে আপনারা একটি আবেদন দেন আপনার ছেলের টি. সি চেয়ে। আরোও অনেক খারাপ আচরণ করে যা প্রধান শিক্ষক হিসাবে তার থেকে কাম্য নয়।
এরপর আসার সময় নাহিয়ানের মা বলে স্যার আমি তো মুত্তিযোদ্ধার সন্তান, আর নাহিয়ান মুক্তিযোদ্ধার নাতি এ কথা বলার পর প্রধান শিক্ষক আরোও ক্ষিপ্ত হয় এবং বলে কোন মুক্তিযোদ্ধার ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনী কাউকে বিদ্যালয়ে রাখবো না। যার প্রমান প্রধান শিক্ষক আরজুমনি স্কুলের ২০২৩ সালের ৫ম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থী যে মুক্তিযোদ্ধা নাতী নাম মোঃ তাহসিনকে জোর করে টি.সি. প্রদান করে। কিন্তু যে কারণে তাকে টি.সি. দিয়েছে তা অন্য শিক্ষার্থীর বেলায় ঘটেনি।
বিদ্যালয় ৬ষ্ঠ শ্রেণীর একজন ছাত্র মোঃ আফরিদ রোল নং ৪৩ (শাপলা শাখা) তার মা হার্ট অ্যাটাক করায় ১ সপ্তাহ ধরে ঐ শিক্ষার্থী স্কুলে যেতে পারেনি। পরবর্তীতে বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক মা ও ছেলেকে ডেকে অপমান করেন। ৬ষ্ঠ শ্রেণীর অন্য একজন শিক্ষার্থী তার নাম তৌসিব। রোল নং- ৪১। সে অতিরিক্ত গরমের জন্য বিরতির সময় বাসায় যেতে চাইলে তাকে ডেকে প্রধান শিক্ষক জোরে চর থাপ্পর দেয়। তৌসিফের মাকে মোবাইলে ডেকে গালিগালি করে এবং টি. সি. দিতে চায়।
প্রধান শিক্ষক মা ও ছেলেকে ডেকে অপমান করেন। এই প্রধান শিক্ষক এ বিদ্যালয়ে আসার পর পাঠদান ঠিকমতো হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা সকাল ১০ থেকে ৪টা পর্যন্ত তার ভয়ে আতঙ্কে থাকে। তিনি কোন শ্রেণীতে একটি বিষয়ে ও পাঠদানের উদ্দেশ্যে কখন যাননি। শিক্ষার্থীদের নাস্তার টাকা নেওয়ার পরেও নিয়মিত নাস্তা দেয়া হয় না।
প্রতিনিয়ত কর্মচারীদের মাধ্যমে বিভিন্ন দোকানের চালান ব্যবহার করে ভুয়া ভাউচার তৈরী করে নাস্তার, বিল করা হয়। যা তদন্তে বের হয়ে আসবে। শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতি মাসে ২০ টাকা করে মোট ২০হাজার টাকা লিফট বাবদ নেওয়া হয় এবং তা হিসাব খাতায় জমা হয় না। প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কম্পিউটারের ব্যাবহারিক ক্লাস বাবদ প্রতি মাসে ২০ টাকা করে মোট ২০হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু কোনো কম্পিউটারের ব্যাবহারিক ক্লাস হয় না।
কম্পিউটার ল্যাব দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ রয়েছে। প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে তুলে নিয়ে যাচ্ছে যা তদন্তে বের হয়ে আসবে। এছাড়া বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সরকারী বরাদ্দে টাকায় ভুয়া ভাউচার তৈরী করে প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করছে। গরমের মধ্যে কারেন্ট চলে গেলে ও শিক্ষার্থীদের রুমে জেনারেটরের মাধ্যমে বাতাস দেওয়া হয়না। শুধু লাইব্রেরীতে বাতাস দেওয়া হয়।
অথচ জেনারেটরটি চলা বাবদ ছাত্রদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২০০ টাকা করে মোট ২ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়। প্রধান শিক্ষক উক্ত বিদ্যালয়ের কেন্টিনের বেচা বিক্রয় থেকে অনৈতিকভাবে অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে থাকেন। শিক্ষার্থীরা বাইরে থেকে কোন মান সম্মত পছন্দের খাবার কিনে খেতে না পারে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা ঐ কেন্টিনের বাসি, পচা, খাবার চড়াদামে কিনে খায়।
যা তদন্ত সাপেক্ষে বেরিয়ে আসবে। ২০২৪ সালে এসএসসি পরীক্ষা প্রাক্টিক্যাল ও ব্যবহারিক পরীক্ষার সময় সিনিয়র শিক্ষক এমাদুল হকের মাধ্যমে উক্ত প্রধান শিক্ষক অত্র বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে আসা প্রতিটি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে নিয়ম বর্হিভূত ২০০ টাকা করে মোট ৮০ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎকরে। এই নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে তখন কথা বলাবলি হয়।
যা ঘটনাটি তদন্ত করলে বেড়িয়ে আসবে। এছাড়া বিদ্যালয়ের ছাত্রদের অফিসিয়াল কাগজ পত্র যেমন: প্রত্যয়ন পত্র, মার্কসিট, সার্টিফিকেট, বিভিন্ন তথ্যপ্রদানের সময় অতিরিক্ত অর্থ সিনিয়র শিক্ষক এমাদুল হকের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক ছাত্র ও অভিভাবকদের কাছ থেকে নিয়ে থাকেন। বর্তমান ক্লার্ক আলমগীর হোসেনর কাছে প্রশ্ন করলে ঘটনার মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।