শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৫ পূর্বাহ্ন
হেলাল আহম্মেদ(রিপন) পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ আসন্ন পটুয়াখালী পৌর নির্বাচনে আগামী ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পটুয়াখালী পৌরসভার নির্বাচন। শত বছরের পুরনো এই পৌরসভাটিতে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ২৩,৯৪৭ জন, নারী ভোটার ২৬,৭৫০ জন, এছাড়াও ২ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার। মোট ৫০,৬৯৯ জন ভোটারের বিপরীতে মেয়র পদে ৫ জন, ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৪১ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৫ জন সহ মোট ৬১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বেশ কয়েকমাস আগে থেকেই প্রার্থীরা তাদের প্রচারনা শুরু করেন। তবে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রতিক বরাদ্দের পর থেকেই আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নামে প্রার্থীরা। আর এই প্রচারনার অংশ হিসেবে প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইকিং করে চলে প্রচারনা। এর পাশাপাশি লিফলেট নিয়ে ঘরে ঘরে প্রচারনায় নেমেছে প্রায় পনেরো হাজার নারী পুরুষ।
সংখ্যাটা এর থেকে কয়েকগুণ বেশিও হতে পারে। পটুয়াখালী পৌর এলাকার ভোটার মোঃ ইসহাক খান বলেন, “আমি বিরক্ত হয়ে যাই দরজার কলিং বেলের সাউন্ডে। আমার জীবনে ক্যাম্পিংয়ে এত মানুষ কখনো দেখিনি” আরেক ভোটার সবুজবাগ এলাকার সাদ্দাম বলেন, “দুপুরের সময় একটু শুয়ে থাকতে পারিনা। কিছুক্ষণ পর পরই মহিলারা এসে দরজায় নক করে।
ওর জন্য দোয়া করবেন, একে ভোট দিবেন। আর ভালো লাগে না” মুন্সেফ পাড়া এলাকার শিল্পি জানান, তিনি এখন গেটে তালা দিয়ে রাখেন নির্বাচনী প্রচারণা থেকে একটু শান্তিতে থাকার জন্য। তার বাবার বাড়ির গেটে পোস্টার টানিয়ে দিয়েছেন। আর পোস্টারে লিখেছেন, এখানের কেউ পৌরসভার ভোটার নয়।
এদিকে নির্বাচন ক্যাম্পিংয়ে কাজ করা কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে তারা প্রতিদিন প্রচারনার জন্য প্রত্যেকে পেয়ে থাকেন তিন থেকে পাঁচশ টাকা করে। প্রতি মেয়র প্রার্থী প্রত্যেকদিন প্রতি ওয়ার্ডে গড়ে ৩০ জন মানুষকে প্রচারনায় পাঠালে একজন প্রার্থীর ৯টি ওয়ার্ডে লোক সংখ্যা দাঁড়ায় গিয়ে ২৭০ জনে। সে হিসেবে পাঁচ মেয়র প্রার্থীর প্রচারনার লোক সংখ্যা হয় ১৩৫০ জন। এছাড়াও সাধারন কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর আরো ৫৬ প্রার্থী তো আছেই।
সেই সংখ্যাটা মিলিয়ে নির্বাচনী প্রচারণার কাজে ব্যাবহৃত হচ্ছে অন্তত ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ। প্রকৃত সংখ্যাটা এই সংখ্যার থেকে অনেকটাই বেশি হতে পারে। ১৫ হাজার মানুষ প্রতিদিন ৩০০ টাকা পেলে মোট প্রতিদিনের নির্বাচন প্রচারনায় প্রার্থীদের মোট খরচ হচ্ছে ৪৫ লক্ষ টাকা। যা ১২ দিনে গিয়ে দাঁড়ায় ৫ কোটি ৪০ লক্ষ টাকায়।এক মেয়র প্রার্থীর প্রতিদিনের লিফলেট বিতরণ করার খরচ প্রায় লক্ষাধিক টাকা।
তবে প্রকৃত অংকটা সবার ধারনার বাইরে। ভোটের মাঠে টাকা দিয়ে ভোট কিনতে যাওয়া এখন একটি সাধারণ ঘটনা। ভোট কেনার ধরন পরিবর্তন হয়েছে পটুয়াখালী পৌরসভা নির্বাচনে। রাতের আঁধারে টাকা নিয়ে ভোট কিনতে যাওয়ার সেই পুরাতন পদ্ধতির অবসান হয়েছে এই নির্বাচনে। নতুন পদ্ধতিতে কেনা হচ্ছে ভোট। আর সেই পদ্ধতিটার নাম হচ্ছে ক্যাম্পিং। এই পদ্ধতিতে এগোচ্ছে পটুয়াখালী পৌর নির্বাচন। প্রার্থীরা সুকৌশলে একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়াচ্ছে নিজেদের প্রচারনার নামে ভোট কেনার খেলা।
আর এই খেলায় বিরক্ত সাধারণ মানুষ। তবে নির্বাচন কমিশন এসব দেখেও দেখছে না এমন অনিয়ম। নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে নির্বাচনী কাজে মেয়র প্রার্থীরা ব্যাক্তিগত ও প্রচারে ব্যায় করতে পারবেন ৪ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা।
কাউন্সিলর প্রার্থীরা ও মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরা ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যার উপরে ভিন্ন ভিন্ন ওয়ার্ডের প্রার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ টাকা খরচ বা ব্যায় করতে পারবেন। তবে নির্বাচনী খরচ এখন পর্যন্ত কোন প্রার্থী কতটা করেছেন সেটার সঠিক তথ্য নেই নির্বাচন কমিশনের কাছে। আর সরকারি ভাবে নির্ধারিত ব্যায়ে কয়েকগুণ ব্যায় ইতোমধ্যে করে ফেলেছেন প্রার্থীরা।
তবে এর কতটা খোঁজ আছে নির্বাচন কমিশনের কাছে জানতে চাইলে পটুয়াখালী জেলা সিনিয়র নির্বাচন কমিশনার খান আবি শাহানুর খান জানান, নির্বাচনের পরে গেজেট হয়। গেজেটের এক মাস পরে নির্বাচনী ব্যায়ের রিটার্ন জমা পেলে থখন জানা যাবে কে কতো খরচ করেছে।
নির্বাচন চলাকালীন অবস্থায় কে কত খরচ করছে। বা ভোটারদের আকর্ষন করতে নির্বাচনী সময়ে প্রার্থীরা অর্থের কতটা দাপট ব্যাবহার করছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই নির্বাচন কমিশনের কাছে। বা এই বিষয়ে কোন ব্যাবস্থা গ্রহন করার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি এখন পর্যন্ত কতৃপক্ষের কাছ থেকে।