শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫১ পূর্বাহ্ন
ক্রাইমসিন২৪ অনলাইন ডেস্ক: ভ্যান চালাতে গিয়ে যাত্রীবেশের দুর্বৃত্তদের আঘাতে গুরুতর আহত কিশোর শাহীনের চিকিৎসায় তদারকি করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা শাহীনের চিকিৎসাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া এবং ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন।
শনিবার (২৯ জুন) দিবাগত রাত ১২টার দিকে শাহীনকে অপারেশন থিয়েটারে নেন চিকিৎসকরা। টানা তিন ঘন্টা ধরে অপারেশন শেষে রাত ৩টায় আইসিইউ’তে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) রাখা হয় তাকে।
ঢামেকে অবস্থানরত ছাত্রলীগ নেতারা বলেন, শাহীনের চিকিৎসার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। রাত ১টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন ঢামেকে এসে শাহীনের স্বজনের হাতে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে যান। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী তার চিকিৎসা ব্যয়ের পুরো দায়িত্ব নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ছাত্র নেতারা।
যশোর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী বাংলানিউজকে বলেন, শাহীনের চিকিৎসায় সব ধরনের সহযোগিতা করতে আগে থেকেই ঢামেকে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত রেখেছিলাম। প্রথম দিকে কয়েক ব্যাগ রক্ত, ওষুধসহ সব সহযোগিতা করেছি। পরে তার অবস্থা গুরুতর জানতে পেরে ঊর্ধ্বতন নেতাকর্মীদের অবহিত করি।
ঢামেকে অবস্থানরত কেশবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক হাবিবুর রহমান খান মুকুল বলেন, টানা তিন ঘণ্টা অপারেশন শেষে রাত ৩টায় শাহীনকে আইসিইউতে রাখা হয়। জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত সংশয় কাটছে না। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জয়দেব নন্দী প্রধানমন্ত্রীর দফতরে যোগাযোগ করে সহযোগিতা করেন। এছাড়া শাহীনের চিকিৎসার সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি বিপ্লব বড়ুয়া এবং ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন। একইসঙ্গে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা লেখক ভট্টাচার্য, দেবাশীষ আইচ, যশোর জেলা ছাত্রলীগ নেতা রওশন ইকবাল শাহী সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। আর রাত জেগে হাসপাতালে রয়েছেন ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে পড়ুয়া ছাত্রলীগ নেতা ও সাধারণ ছাত্ররা।
এর আগে শুক্রবার (২৮ জুন) দুপুরে যশোরের কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের হায়দার আলী মোড়লের ছেলে কর্মজীবী কিশোর শাহীনের ভ্যান যাত্রীবেশে ভাড়া নেয় ভদ্রবেশী দুর্বৃত্তরা। এরপর সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার ধানদিয়ায় নিয়ে রাস্তার দু’পাশের পাট ক্ষেতের নির্জন স্থানে শাহীনের মাথায় আঘাত করে তার শেষ সম্বল ভ্যান গাড়িটি নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
এদিকে, ওখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে শাহীন। একপর্যায়ে জ্ঞান ফিরলে তার কান্নার শব্দে স্থানীয়রা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় খবর দেয়। পুলিশ শাহীনকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। তবে অবস্থার অবনতি হলে পরদিন শনিবার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সংশ্লিষ্টরা বাংলানিউজকে জানান, শাহীনের বাবা হায়দার আলী খুবই গরিব মানুষ। বসতভিটা ছাড়া তাদের কোনো জমিজমা নেই। সম্প্রতি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে একটি ব্যাটারি চালিত ভ্যানটি কিনে ভাড়ায় চালিয়ে সংসার চালাতো শাহীন।
ওই রোজগারের টাকায় তাদের সংসার খরচ ছাড়াও ঋণের কিস্তি ও শাহীন এবং তার বড় বোনের পড়ালেখা চলতো।
এদিকে, অভাবের সংসার ও পারিবারিক অবস্থানের কারণে বেশ কয়েকমাস আগে পড়াশোনা ছেড়ে ভ্যান চালানো শুরু করে শাহীন। একটি ভ্যান হওয়ায় বাবা-ছেলে দু’জনে শিফট মেনে ভাড়া চালায় তারা।
অপরদিকে, ঘটনাটি সর্বপ্রথম গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করে দেশের শীর্ষ নিউজপোর্টাল বাংলানিউজ। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে ঘটনাটি।