রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০১:০৪ পূর্বাহ্ন
গলাচিপা প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালীর গলাচিপায় বিয়ের প্রলোভনে গৃহবধূকে ধর্ষণ করা হয়েছে। আদালতে ধর্ষণ মামলা করায় নির্যাতিতা গৃহবধূ ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া মামলা তুলে না নিলে এলাকা ছাড়ার ভয় দেখানো হচ্ছে।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের ছোট গাবুয়া গ্রামে মো. লিটন হাওলাদারের বাড়িতে। এ বিষয়ে গৃহবধূ (ভিকটিম) মোসা. খাদিজা বেগম (২৪) মোকাম পটুয়াখালী বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নারী ও শিশু পিটিশন মামলা নং- ২১৮/২০২৩। তারিখ- ২৯/০৫/২০২৩। শুক্রবার (১০ নভেম্বর) মামলাসূত্রে ও ভুক্তভোগী গৃহবধূ মোসা. খাদিজা বেগম জানান, আসামী মো. জহিরুল ইসলাম (৩৫) আমাদের একই গ্রামের হওয়ায় অনেক পূর্ব থেকে পরিচিত ছিল।
আমার বিবাহের পর থেকে আসামী মো. জহিরুল ইসলাম আমাকে বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। আমার একটি কন্যা সন্তান আছে। আমি আসামী মো. জহিরুল ইসলামকে আমার স্বামী ও সন্তান আছে বললেও সে আমাকে উত্যক্ত করে আসছিল। আমি আমার আমার পিতার বাড়িতে মা ও ছোট বোনের সাথে থাকতাম।
আমার বাবা কলাপাড়ায় ব্যবসা করে এবং আমার ভাই ঢাকায় চাকুরি করে। এই সুযোগে আসামী আমাকে বারবার উত্যক্ত করত এবং আমাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে আসছিল। আমাকে আমার স্বামীকে তালাক দিতে বলে এবং পরে আমাকে বিয়ে করবে বলে বারবার বলতে থাকে এবং মোবাইলেও বিরক্ত করতে থাকে।
একপর্যায়ে আমি আসামী মো. জহিরুল ইসলাম এর মিথ্যা আশ্বাসে পরে আসামীর কথায় রাজী হলে আমার সাথে দেখা করার কথা বলে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আসামী আমাকে আমার পিতার বসতঘরের পিছনের বারান্দায় বসে একাধিকবার ধর্ষণ করে।
আসামী পরে আমাকে আমার স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করে। আসামী মো. জহিরুল ইসলাম আমাকে ধর্ষণ করায় আমি অন্তসত্তা হয়ে পড়ি। পরে আমি আসামী মো. জহিরুল ইসলামকে বিবাহের কথা বললে আসামী আমাকে বিবাহ করার কথা অস্বীকার করে।
আমি সবকিছু হারিয়ে আসামীকে বিবাহের জন্য বললেও সে আমাকে বিবাহ না করে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে বলে। পরে আসামী আমাকে বিবাহ না করলে আমি পটুয়াখালী বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করি।
মামলায় অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় আদালত আসামীকে কারাগারে প্রেরণ করে। অতপর আসামী হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিনে এসে আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। মামলা তুলে না নিলে আমাকে হত্যা করে লাশ গুম করার ভয় দেখাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গৃহবধূ (ভিকটিম) মোসা. খাদিজা বেগমের বাবা মো. লিটন হাওলাদার বলেন, আমি বাড়িতে থাকি না। জহিরুল আমার মেয়েকে ফুসলিয়ে মিথ্যা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার মেয়ের জামাইকে তালাক দিয়েছে এবং তার সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। আমার ছোট একটি নাতনী আছে। আমার মেয়েকে বিয়ে না করে বারবার তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে আমার মেয়ে অন্তসত্তা হয়ে পড়ে এবং জহিরুলকে বিবাহের জন্য চাপ দিলে সে আমার মেয়েকে বিবাহ করবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়।
আমার মেয়ে মামলা করলে জহিরুল আমাকে, আমার মেয়ে ও ছেলেকে বাড়ি ছাড়া ও হত্যা করার হুমকি দেয়। আমি একদিন বাজার যাওয়ার পথে জহিরুল আমার উপর দলবল নিয়ে আক্রমণ করে এবং মারধর করে। আসামীর ভয়ে এখন আমি বাড়ি থাকতে পারছি না।
আমাদের নামে মামলা করবে বলেও আমাদেরকে শাসায়। এখন আমি কী করব? আমার মেয়ে ও নাতনীর জীবনটা ও শেষ করে দিল। আমি সকলের কাছে এর বিচার দাবী করছি। তিনি আরও বলেন, জহিরুল ও তার দলের লোকজন বলছে মামলা তুলে না নিলে আমাদেরকে এলাকায় থাকতে দেবে না।
কীভাবে থাকব তারা সেটা দেখবে। এ বিষয়ে জহিরুলের কাছে জানতে তার মুঠো ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রবিউল মৃধা জানান, বিষয়টি অত্যন্ত লজ্জা জনক।
একজনের স্ত্রীকে ফুসলিয়ে অনৈতিক সম্পর্ক গড়া এবং বিয়ের আশ্বাস না দিয়ে বিয়ে না করা। আমরা বিষয়টির মীমাংসার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে বসলেও ব্যর্থ হই। এ বিষয়ে গোলখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নাসিরউদ্দিন হাওলাদার বলেন, এ রকম ঘটনা জাহিলিয়াতের যুগে ঘটত। এখন আমাদের সমাজেও ঘটছে।
আমরা ইউনিয়ন পরিষদে বসলেও জহিরুলের অনীহার কারণে বিষয়টা মীমাংসা করতে ব্যর্থ হয়েছি। এ বিষয়ে গলাচিপা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শোণিত কুমার গায়েন বলেন, এ সম্পর্কে থানায় একটি এজাহার করা হয়েছে। যার জি,আর নং- ১১১/২৩ (গলা) তারিখ- ১২/১১/২০২৩। মামলাটি চলমান আছে।