সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন
বৈশ্বিক মহামারি করোনায় গত মার্চ মাসের ৩য় সপ্তাহ থেকে বন্ধ রয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষা কার্যক্রম। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সিদ্ধান্তের পরে পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইতোমধ্যে বায়োকেমিস্ট্রি ও বায়োটেকনোলজি বিভাগে শুরু করেছে এই কার্যক্রম।
জানা গেছে,ছাত্র- ছাত্রীদের মূল্যবান শিক্ষাজীবনের কথা ভেবে, সেশনজট কমাতে বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানদের শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে প্রার্থমিকভাবে অনলাইন ক্লাস শুরুর নির্দেশনা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ ছাদেকুল আরেফিন। তবে আশানুরূপ সায় মিলছে না শিক্ষার্থীদের। উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে ২০১৫-১৬ সেশনের ৩৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৫ জন এবং ২০১৭-১৮ সেশনে ৪২ জন শিক্ষার্থীর ২২ জন অনলাইনে ক্লাসের আওতায় আসতে পারবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সুব্রত কুমার দাস।
শতকরা হিসেবে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী আগ্রহী নয় অনলাইন ক্লাসে। লকডাউনে অধিকাংশ শিক্ষার্থী গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থান করায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারেনট সংযোগ সঠিকভাবে না পাওয়া,আবার অনেকের স্মার্টফোন না থাকাসহ চড়া মূল্য ইন্টারনেট কেনার সামর্থ না থাকায় অনলাইন ক্লাসের আওতায় আসতে পারছেনা বলে জানিয়েছে অনেক শিক্ষার্থী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ববি শিক্ষার্থীদের “লিংঙ্কারস ইন বরিশাল ইউনিভার্সিটি” নামক গ্রুপে অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের মতামত জানতে অনলাইন ভোটের আয়োজন করা হয়। সেখানে মোট ৮৯৪ জন শিক্ষার্থীর ১২৩ জন অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে “হ্যা” ভোট দিয়েছে। বাকি সবাই “না” ভোট দিয়ে নানান সমস্যার কথা জানিয়েছেন।
ওমর ফারুক নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, অনেক দূর্গম এলাকায় থাকি।কল করার জন্যও নেটওয়ার্ক পাই না,আর সেখানে অনলাইন এ ক্লাস করাতো বিলাসিতা। আরেক শিক্ষার্থী জানান, অনেক ছাত্র-ছাত্রী আছে যাদের স্মার্ট ফোন নাই।স্মার্ট ফোনের কথা বাদই দিলাম। কানাডা সরকার যেভাবে সকল স্টুডেন্টের জন্য অনলাইন ক্লাসের সকল সরঞ্জামের ব্যবস্থা করেছে। সেখানে বাংলাদেশ সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি শুধুমাত্র ইন্টারনেট খরচ দিতে রাজি হয় তাও একটু ভেবে দেখতে হবে কারণ মোবাইল নেটওয়ার্কের যা অবস্থা!
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি সহকারী অধ্যাপক মোঃ আরিফ হোসেন জানান, পূর্ণাঙ্গভাবে অনলাইনে ক্লাস চালু করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু সব শিক্ষার্থী অনলাইনের আওতায় না। ইন্টারনেট খরচেরও একটা ব্যাপার আছে। অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীর কিভাবে নেট বিল পাবে? শতকরা ১০ জনও যদি অনলাইন ক্লাসের সুবিধা নিতে না পারে তাহলে এই কার্যক্রম ইথিকাল হবেনা। সবাইকে একীভূত করাও একটা চ্যালেঞ্জ।
এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ ছাদেকুল আরেফিন জানান, অনলাইন ক্লাসের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে বিভাগীয় প্রধানদের পরীক্ষামূলক ভাবে ক্লাস শুরু করতে বলেছি। শতকরা কতজন শিক্ষার্থী অনলাইনের আওতায় আসে, শিক্ষার্থীদের কি কি সমস্যা আছে সবকিছু ফাইন্ড আউট করা হবে। এবং শিক্ষার্থীদের থেকে ভালো সাড়া মিললে লকডাউনে নিয়মিত করা যাবে এই কার্যক্রম।
ঘন্টাব্যাপী অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ইন্টারনেট বিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে বলেন, অনেক অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট কেনার সামর্থ নেই, আবার অনেকের স্মার্টফোনও নেই। শিক্ষার্থীদের অন্তত ইন্টারনেট বিল দেয়া যায় কিনা সে ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করছি।ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও এ ব্যাপারে সুপারিশ করা হবে।