বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:২০ পূর্বাহ্ন
রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে পলিথিন ও প্লাস্টিকের পানির বোতল নিষিদ্ধ করা উচিৎ। তা না হলে সারাদেশের পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই আমরা যদি সবাই মিলে সাধারণ মানুষদের পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার না করার জন্য সচেতন করতে হবে। আমরা যেভাবে পলিথিন ব্যাগ নিয়ে বাজার থেকে আসছি তাতে যে দেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সেদিকে আমরা নজর দিচ্ছিনা। এছাড়াও সেভেন-আপ, কোকো-কোলা, ফান্টা এবং ফাস্ট ফুট খেয়ে নিজেদের শেষ করে দিচ্ছি। তাই এদেশকে রক্ষার জন্য বর্তমান প্রজন্ম হিসেবে তোমারে উদ্যোগ নিতে হবে। বুধবার বিকেলে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতায় লিখিত বক্তব্যের পরে তিনি এ কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিৎ করা। বর্তমানে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। তবে, গুণগত শিক্ষা ছাড়া শিক্ষা মূল্যহীন। উচ্চ শিক্ষা যাতে কোনভাবেই সার্টিফিকেট সর্বস্ব না হয় তা সম্মিলিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রপতি আরও বলেনে, তোমাদের হতে হবে সদা সত্যান্বেষী এবং জ্ঞানালোকে সমৃদ্ধ হয়ে দল-মতের উর্ধ্বেথেকে নৈতিকভাবে বলিষ্ঠ চরিত্রে অধিকারী। দেশের কল্যানে তোমরা হবে আলোর দিশারী, জ্ঞানের ফেরিওয়ালা। বর্তমান প্রজম্মের শিক্ষার্থীরা তোমাদের আদর্শ অনুসরণ করবে। যার প্রভাব পড়বে তার কর্মজীবনে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষক যখন তার মহান আদর্শ থেকে দূরে সরে নানান প্রাপ্তির পেছনে ছুটেন, শিক্ষার্থীরা তখন নাবিকহীন নৌকার মতো দিকহারা হয়ে যায়। পথের সঠিক দিশা পায় না। তাই আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে তোমরা জ্ঞান অর্জন ও বিতরণে নিবেদিত থাকবে জাতি তা প্রত্যাশা করে।
এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. হারুনর রশীদ এবং সমাবর্তন বক্তব্য রাখেন ইমেরিটাস প্রফেসর ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। এ অনুষ্ঠানে স্থানীয় সাংসদ, দেশ বরেণ্য শিক্ষাবিদগণ, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য, একাডেমিক কাউন্সিল সদস্য ও সুশিল সমাজের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ সমাবর্তনে মোট ৩ হাজার ৭০৬ জনকে গ্র্যাজুয়েট সনদ এবং ৬৩ জনকে চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল প্রদান করা হয়।
এসময় রাষ্ট্রপতি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন-বিশ্ববিদ্যালয় কেবল শিক্ষার্থীদের পাঠ দান করে না, তাদের চিন্তার প্রসারতা বাড়ায়। গবেষণার মাধ্যমে সৃষ্টি করে নতুন জ্ঞানের যা যুগের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখে। একবিংশ শতাব্দী তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। চতুর্থ শিল্পবিল্পবের এ যুগে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শিক্ষার বিকল্প নেই। আমি মনে করি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ শিল্পপ্লিবের গুরুত্ব উপরব্ধি করে পাঠ্য কারিকুলামা যুযোপযোগী করে সাজাবে।আমাদের শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলবে বিশ্ব নাগরিক হিসেবে।
জ্ঞানের আদান-প্রদান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ন। কারণ তাতে জ্ঞানের বহুমাত্রিকতা বৃদ্ধি পায় এবং নবতর জ্ঞান বিশ্বব্যাপি ছাড়িয়ে পড়ে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশ-বিদেমের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়রে সাথে সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে যৌথ উদ্যেগে গবেষণা পরিচালনা করে জ্ঞানের আদান-প্রদান করবে। খামার কিংবা শিল্পের সমস্যা জেনে তার সমাধানে উদ্যেগী হবে। গভেষেণার ফলাফল মানব কল্যানে ব্যবাহরের জন্য তা বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে প্রকাশ করবে। আমি জেনে অত্যন্ত আনন্দিত।
এসময় গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন-সমাবর্তন গ্র্যাজুয়েটদের জীবনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও আনন্দের একটি দিন। দীর্ঘ অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে আজ তোমরা অর্জিত ডিগ্রির আনুষ্ঠনিক স্বীকৃতি পাচ্ছে। এটি বড় আনন্দের ও গৌরবের। তোমরা আমা উষ্ণ অভিনন্দন গ্রহণ করো। দেশের উন্নয় অগ্রগতি নিশ্চিতকরনে তোমাদেরই নেতৃত্ব দিতে হবে। তোমাদের হাত ধরেই রচিত হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা। জাতির পিতা ১৯৭৩ সালে ১৫ ই ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছিলেন, “বন্ধুগণ,আমরা ইতিহাসের একটি বিরাট সঙ্কটকাল অতিক্রম করছি। এ সময় দরকার ধৈর্য, আত্মত্যাগ, কাঠোর পরিশ্রম করার মনোভা। বাংলাদেশে তিনছো বছর লুন্ঠিত ও শোষিত হয়েছে। এ সমাজ ও অর্থনীতির হাজারো সমস্যা। রাতারতি তা দুর করা যাবে না। সোনার বাংর গড়ে তুলতে হলে সোনার মানুষ চাই। আর সকলে মিলে কঠোর পরিশ্রম করে আমাদের ভাবী বংশধরদের এক সুখি ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ উপহার দিতে হবে।” আর এক ভাষণে তিনি বলেছিলেন, “স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও আত্মপ্রবঞ্চনার উর্ধ্বে থেকে আমাদের সকলকে আত্মসমালোচনা, আত্মসংযম এবং আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে হবে। মরে রাখতে হবে, আপনি আপনার কর্তব্য দেশের ও দেশের জনগনের প্রতি কতটা পালন করেছেন, সেটাই বড় কথা।” অর্জিত জ্ঞান ও মেধা ব্যবহার করে লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে তোমাদের সরকারের ভিষন ২০২১ এবং ২০৪১ বাস্তাবায়নে অগ্রণী ভুমিকা পালন করেবে বলে আমার প্রত্যাশা। আমি তোমাদের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল ও সাফল্য কামনা করি।
এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন-পটুয়াখালী এক আসনের সাংসদ আলহাজ্ব অ্যাড. শাহজাহান মিয়া, পটুয়াখালী দুই আসনের সাংসদ আসম ফিরোজ মোল্লা, পটুয়াখালী তিন আসনের সাংসদ এস এম শাহজাদা সাজু,পটুয়াখালী চার আসনের সাংসদ অধ্যক্ষ মহিবুর রহমান মুহিব। এছাড়াও অনুষ্ঠানে পটুয়াখালী পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ,বাউফল পৌর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল, পটুয়াখালী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার উপস্থিত ছিলেন।