বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৮ অপরাহ্ন
১০ জানুয়ারি বাঙালি জাতির জীবনে একটি ঐতিহাসিক খুশীর দিন। এই দিন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন দেশে ফিরে আসেন।
এই দিনটিকে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে যথাযথা মর্যাদায় পালন করা হয়। তবে এবারের বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস একটু আলাদা প্রেক্ষাপটে পালিত হচ্ছে। এ বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদ্যাপন করা হবে। তাই এ বছরকে মুজিব বর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস থেকেই মুজিব বর্ষের কাউন্ট ডাউন শুরু হবে। এই দিন তেজগাঁও বিমান বন্দর যেখানে এসে সে দিন বঙ্গবন্ধু দেশের মাটিতে পা দিয়েছিলেন সেখান থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কাউন্ট ডাউন শুরু হবে।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি বিজয় অর্জনের পর স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরেন। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) সেই ঐতিহাসিক দিন।
দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। পাকিস্তানের শাসন-শোষণ ও অত্যাচার-নির্যাতনের হাত থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে জীবনের একটা বড় সময় শেখ মুজিবকে বার বার জেল, জুলুম ও অত্যাচার-নির্যাতন ভোগ করতে হয়। পাকিস্তান ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা বাঙালির সকল আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়েই শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে ওঠেন জাতির অবিসমবাদিত নেতা এবং ভুষিত হন বঙ্গবন্ধু উপাধিতে।
আন্দোলন-সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। এর ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির ওপর ঝাপিয়ে পড়ে গণহত্যা চালাতে শুরু করে। এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এর পর পরই বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
শুরু হয় বাঙালির সশন্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলতে থাকে। এই সময় বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি রাখা হয়। পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার নানা পরিকল্পনা তৈরি করে। জেলের মধ্যে অত্যাচার নির্যাতনই শুধু নয়, তাকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু দেশে-বিদেশে বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা ও তার অদম্য সাহসের কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানে পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী এবং সেনাবাহিনী।
এদিকে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতেই বাঙালি জাতি বঙ্গন্ধুর আদর্শে ও নির্দেশিত পথে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চালিয়ে যায়। যত দিন যেতে থাকে যত রক্ত ঝড়তে থাকে স্বদেশের মাটিকে হানাদার মুক্ত করতে বাঙালি ততই মরিয়া হয়ে উঠে। মুক্তিবাহিনী এবং মিত্রবাহিনীর যৌথ প্রতিরোধের মুখে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানের আত্মসমর্পনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি বিজয় অর্জন করেন। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ হন ও ৩ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হারান।
এতো রক্ত ও প্রাণের বিনিময়ে বিজয় এলেও মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকায় বাঙালির অর্জিত বিজয় পূর্ণতা পায়নি। বিজয়ী বাঙালি জাতি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে তাদের নেতার ফিরে আসার। বঙ্গবন্ধু কোথায় আছেন, কিভাবে আছেন সে সম্পর্কেও জাতির কাছে স্পষ্ট তথ্য ছিলো না।
এদিকে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর বিশ্বব্যাপী বঙ্গবন্ধু জনপ্রিয়তা আরো বাড়তে থাকে। বাঙালির পাশাপাশি বিশ্বের স্বাধীনতা ও শান্তিকামি মানুষও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে। আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতিস্বীকার করে অবশেষে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু সোজা লন্ডন চলে যান। সেখান থেকে ভারত হয়ে ১০ জানুয়ারি স্বদেশে ফেরেন। সেদিন সারা দেশ থেকে মানুষ ছুটে আসেন তাদের নেতাকে একবার দেখর দেখার জন্য। স্বাধীন দেশে ফিরে বাঙালির ভালবাসায় সিক্ত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিমানবন্দর থেকে লাখ লাখ জনতার সমুদ্র পাড়ি দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালিন রেসকোর্স) দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু তার বক্তব্যে বলেছিলেন, বাঙালি আমাকে যে ভালবাসা দিয়েছে সেই বাঙালির জন্য আমি রক্ত দিতেও প্রস্তুত। এর মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ৭৫ এর ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার পরাজিত শত্রু ও দেশি-বিদেশি চক্রের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ঘাতকের হাতে স্বপরিবারে জীবন দেন।