শনিবার, ১৯ Jul ২০২৫, ০৪:৫৬ অপরাহ্ন
মো.আরিফুল ইসলাম,বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি :
‘মাছে-ভাতে বাঙালি’—শতবর্ষ পুরোনো এই প্রবাদ শুধু বাঙালির খাদ্যাভ্যাস নয়, বরং তার সংস্কৃতি ও জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে। তবে সেই ঐতিহ্য আজ কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কবলে চরম হুমকির মুখে।
যার কারনে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বিভিন্ন নদী-নালা, খাল-বিল ও বাওড়ের দেশীয় মাছগুলো দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার কালাইয়া,কাছিপাড়া, কালিশুরি, নুরাইনপুর, কনকদিয়া, ও বগাসহ বিভিন্ন বাজারে দেশীয় মাছের সংকট এখন প্রকট। এই সংকটের মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে নিষিদ্ধ চায়নার তৈরি কারেন্ট জাল, ম্যাজিক জাল, সুতিজাল, বেহুন্দী, ভেসাল এবং রিং জালের অবাধ ব্যবহার।
বর্ষা শুরু হতেই এসব জালের মাধ্যমে ডিম ছাড়ার আগেই পোনা মাছ নির্বিচারে ধরা হচ্ছে, ফলে প্রাকৃতিক প্রজনন চক্র ভয়াবহভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, উপজেলার কালাইয়া, কালিশুরি, বগা বন্দরসহ বিভিন্ন ছোট-বড় বাজারে এসব নিষিদ্ধ জাল কিছু অসাধু ব্যবসায়ী প্রকাশ্যে বিক্রি করছেন প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে। এতে প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনের নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়ে।
এক সময়ের পরিচিত দেশীয় মাছ যেমন—বোয়াল, গজার, শোল, মাগুর, শিং, কৈ, স্বরপুটি, রুই, কাতলা, মৃগেল, পাবদা, আইড়, বাইম, খলসে, রিটা, রঙিন বেতাগা, বাশঁপাতা, রয়না ও কালিবাউস—আজ বিলুপ্ত প্রায়।
এর মধ্যে রঙিন বেতাগা, রিটা, পাবদা, বোয়াল, আইড়, বাশঁপাতা ও রয়না—এই জাতের মাছ তো একেবারে চোখেই পড়ে না। বর্ষায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অসাধু ব্যক্তি ও চক্র গুলো শুধু নিষিদ্ধ জালই নয়, বৈদ্যুতিক শক ব্যবহার করেও মাছ ধরছে।
শুষ্ক মৌসুমে একাধিকবার পুকুর সেচে মাছ আহরণ এবং সরকারি খাল-বিল ব্যক্তিগতভাবে দখলের ফলে শুধু মাছ নয়, জলজ সাপ, ব্যাঙ, শামুক ও নানা জলজ প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হচ্ছে। অপরদিকে, কৃষিজমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার পরিবেশে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে, যা জলজ জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।
এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান ঝান্টা বলেন— “চায়না রিং জাল সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
এটি দেশের মৎস্য সম্পদ ধ্বংস করছে। আমরা সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছি এবং বিভিন্ন সময় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি।
তবে জনবল ও সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ ও স্থানীয়দের সহযোগিতা।”
এ বিষয়ে পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন “সেইভ দি বার্ড এন্ড-বি” এর পরিচালক এম এ বাসার বলেন, এই নিষিদ্ধ চায়না রিং সহ অনন্য জালে বড় ছোট রেনু সহ সবকিছু আটকে যায় , ফলে দেশীয় প্রজাতির হরেক রকম মাছ হাড়িয়ে যাওয়ার পিছনে এই জালের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
শুধু অভিযান চালিয়ে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। প্রয়োজন স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর নজরদারি, সচেতন জনগণের অংশগ্রহণ এবং আইনের বাস্তবায়ন।
মো.আরিফুল ইসলাম বাউফল, পটুয়াখালী।