বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫৬ অপরাহ্ন
ক্রাইমসিন ডেক্সঃ
বরিশাল নগরীতে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠেছে রুবেল শরীফ (৪০) ওরফে নাক কাটা রুবেল ও তার বাহিনী।
মাদক, চাঁদাদাবি সহ নানা অপরাধের কারণে থানা ও আদালতে মামলা চলমান থাকলেও জেলহাজত থেকে বেড়িয়ে আবারও সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করছে এ বাহিনীর সদস্যরা।
সর্বশেষ চলমান মাসের ১৭ ডিসেম্বর রাতে নগরীর দক্ষিণ আলেকান্দা খালেদাবাদ কলোনির বাসিন্দা মো. মোফাজ্জেল কাজীর ছেলে মো. সুজন কাজী ৪ জনকে অভিযুক্ত করে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
অভিযুক্ত ৪ জন হলেন- একই কলোনির বাসিন্দা মৃত. আলতাফ শরীফের ছেলে রুবেল ওরফে নাক কাটা রুবেল ও তার ভাই রাজন, আক্তার কসাইয়ের ছেলে তুহিন ও ছালামের ছেলে সোহেল।
স্থানীয় ও থানা- আদালত সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৩ এপ্রিল রাত ৯ টার সময় ওই কলোনির সামনে থাকা রুবেলের মুদির দোকানের সামনে বসে নাক কাটা রুবেল ও তার ভাই রাজন (৪২), ভুলু মিয়ার ছেলে হৃদয় (২৫), ছান্না মিয়ার ছেলে ছানি (২৬) ও আ. রহিমের ছেলে আছিব (১৮) ফার্নিচার ব্যবসায়ী সোহাগ কাজীর কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে।
দাবীকৃত চাঁদার টাকা দিতে অপারগতা সোহাগ প্রকাশ করায় তারা তাকে বেদম মারধর করে। হামলার খবর শুনতে পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে সোহাগের গর্ভবতী স্ত্রী শিউলি। এ সময় নাক কাটা রুবেল গর্ভবতী শিউলির পেটে লাথি দেয়।
স্থানীয়রা প্রথমে আহত শিউলি বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হলেও পরবর্তীতে কর্মরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা প্রেরণ করলে শিউলির আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক জানায়- গর্ভের শিশু মাথায় প্রচণ্ড আঘাত লাগার কারণে মারা গেছেন। পরে সিজারিয়ান ডেলিভারি করে শিউলির মৃত সন্তান বের করা হয়।
এমন অভিযোগে এনে চলতি বছরের ৩০ জুন বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শিউলি বোন সিম্মী (২৩) বাদী হয়ে ওই ৪ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বটতলা আমির কুটির হরিজন কলোনি (মেথর পট্টি) নামক স্থানে নগরীর ১৫ নং ওয়ার্ড মুনসুর কোয়ার্টার এর বাসিন্দা মো. সবুজ (২৯) ওরফে ভাগিনা মিলনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় রুবেল, অলি, তুহিন, সোহেলের নেতৃত্বে প্রায় ১০/১২ জন। পরে আহত মিলনকে প্রথমে শেবাচিম হাসপাতালে প্রথমে নাক-কান-গলা বিভাগে এর তিন দিন পর হাসপাতালের অর্থপেডিক্স ওয়ার্ডে রেফার করলে কর্মরত চিকিৎসক এক দিন পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা প্রেরণ করেন।
তবে এ ঘটনার অনুকূলে কোন মামলা দায়ের হয়নি।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, নাক কাটা রুবেল ও তার বড়ো ভাই আবুল বাসার (৪২) ওরফে রাজন হলেন- পটুয়াখালী দুমকি উপজেলার পূর্ব কার্তিকপাশা গ্রামের মৃত. আলতাফ শরীফের ছেলে।
এলাকায় নানা অপকর্মে অভিযুক্ত থাকায় এলাকাবাসী নাক কাটা রুবেলের এক পা ভেঙে দেয়।
এলাকা ছেড়ে বরিশাল নগরীর বাংলাবাজার ‘শহীদ আলতাফ স্কুল’ সংলগ্ন এলাকায় এসে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় নাক কাটা রুবেলের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা।
২০১৩ সালের ১০ জুন দায়েরকৃত ৮ নং, ২০২৩ সালের ৫ জুন দায়েরকৃত ৯ নং ও ২০০৯ সালের ১৬ অক্টোবর দায়েরকৃত ৫১ নং মামলার আসামি রুবেল।
নাক কাটা রুবেলের ভাই রাজনের বিরুদ্ধেও রয়েছে একাধিক মামলা। ২০২৩ সালের ৫ জুন দায়েরকৃত ৯ নং ও ২০২৪ সালের ২৩ মার্চ দায়েরকৃত ৬০ নং মামলার আসামি রাজন।
এই দুই ভাইয়ের ছত্রছায়ায় মাদক ক্রয়-বিক্রয় করছে বাংলা বাজার সংলগ্ন আরশেদ আলী কন্টাক্টর গলির ভাড়াটিয়া বাসিন্দা রিকশা চালক আনারের ছোট ছেলে অলি (১৯)।
চলমান বছরেও ৩/৪ বার ইয়াবাসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছে অলি।
রিফিউজি কলোনির স্থায়ী বাসিন্দা মৃত. আকতার কসাইয়ের ছেলে শাহিন (৩৫) ও তুহিন (৩০)। এ দুই ভাই ইয়াবা শাহিন-তুহিন নামে পরিচিত।
বড়ো ভাই নাক কাটা রুবেলের কাছ থেকে ইয়াবা আনে আর ছোট ভাই বিক্রি করে। ইয়াবাসহ একাধিকবার ডিবি পুলিশের হাতে আটক হয়েছিল তুহিন। রয়েছে একাধিক ইয়াবা মামলা।
নাক কাটা রুবেলের আপন মামাতো ভাই মো. সোহেল (২৮) ওরফে বাবা সোহেল। নগরীর ১৩ নং ওয়ার্ড কাজিপাড়া এলাকায় সোহেল ভাড়া থাকলেও আড্ডা জমায় রিফিউজি কলোনীতে।
তার বাবা ছালাম ওরফে ফেন্সি ছালাম স্ত্রীকে নিয়ে চরকাউয়া হিরণ নগর এলাকায় বসবাস করে। বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় ২০২৩ সালের ৫ জুন দায়েরকৃত ৯ নং মামলার আসামি সোহেল।
নাক কাটা রুবেলের অপর এক ভয়ংকর সহযোগী হলেন রিফিউজি কলোনির স্থানীয় মো. জব্বার কসাইয়ের ছেলে আব্দুল হামিদ ( ৩০) ওরফে বাপ্পী। বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় ২০১৫ সালের ১৭ মে দায়েরকৃত ৩৪ নং, ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর দায়েরকৃত ৮ নং ও ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর দায়েরকৃত ১৩ নং মামলার আসামি বাপ্পী।
নাককাটা রুবেলের প্রধান ইয়াবা সরবরাহকারী হলেন- রিফিউজি কলোনির রাজবাড়ির ভাড়াটিয়া মৃত. আব্দুল ছত্তারের ছেলে মো. জাহাঙ্গির আলম (৫০) ওরফে হাড্ডি জাহাঙ্গির।
২০১৫ সালের ১৭ মে দায়েরকৃত ৩৪ নং, ২০২২০ সালের ২৮ মার্চ দায়েরকৃত ৮৮ নং ও ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি দায়েরকৃত ১১ নং মামলার আসামি। সর্বশেষ চলিত বছরের ৩১ জানুয়ারি ডিবির এসআই রাহাতুল ২শ পিচ ইয়াবা সহ হাড্ডি জাহাঙ্গীরকে তার বাসভবন থেকে আটক করে।
এ সকল ভয়ংকর অপরাধীদের সাঙ্গপাঙ্গ হলেন- নগরীর ১৪ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগ সভাপতি তানভীর হোসেন হীরা (৩০)।
এই হীরার সহযোগিতায় নাককাটা রুবেল বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্নার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন।
রিফিউজি কলোনির ভাড়াটিয়া বাসিন্দা রাকিব (২৩) ওরফে সবজি রাকিব, আলামিন ওরফে বুলেট আলামিন, কাজীপাড়ার শাহালম (৪০) ওরফে গোল আলু শাহালম, নগরীর সার্কুলার রোডের বাসিন্দা মো. হানিফ ওরফে টোকাই হানিফ।
এ সকল অপরাধীরা প্রতিদিন রিফিউজি কলোনির সামনে রহিমের হোটেল ও মিঠুর চায়ের দোকানে আড্ডা জমায়।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দার সাথে আলাপ করলেও ওই সব অপরাধীদের বিরুদ্ধে কেউই প্রকাশ্যে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হয়নি। এরা চিহ্নিত অপরাধী তা সবাই জানে।