শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫০ পূর্বাহ্ন
ক্রাইমসিন২৪ ডেস্ক: লাল-নীল আলোর মঞ্চ মানেই এবি। ‘এখন অনেক রাত’, ‘রূপালী গিটার’, ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’সহ অসংখ্য গান আর গিটারের সুরে মাত করে দিতেন দর্শকদের। মঞ্চে সে আলো জ্বললেও ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’ এর মনপাখি আর মঞ্চে এলো না। বরং তার না থাকাকেই স্মরণ করা হলো তার গান আর স্মৃতিতে।
‘আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে এখানে এই পরিবেশে কথা বলতে হবে, এটা আমি কখনোই ভাবিনি। আমাদের যাত্রা প্রায় একইসময়ে। ১৯৮৭ সালে শেরাটন হোটেলে বামবা’র তিনদিনের একটি কনসার্টে সোলস’র হয়ে প্রথম পারফর্ম করে বাচ্চু। ওটাই আমার দেখা তার প্রথম পারফর্মেন্স।’ এলআরবি’র কাণ্ডারি আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে বলতে গিয়ে এমনটাই বলছিলেন ব্যান্ডের সংগঠন বামবা’র সভাপতি হামিন আহমেদ।
রোববার (২ ডিসেম্বর) এলআরবি’র এ কাণ্ডারিকে বিশেষভাবে শ্রদ্ধা জানাতে বিশেষ কনসার্টের আয়োজন করে ব্যান্ডের সংগঠন বামবা। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
নতুনত্ব ও বৈচিত্র্য এনে এদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছেন আইয়ুব বাচ্চু। গিটারের সুরে হৃদয় হরণ করেছিলেন অগণিত সঙ্গীত পিপাসুদের। সহকর্মীদের ভালো কাজের প্রশংসা করার পাশাপাশি ব্যান্ড সঙ্গীতের উন্নয়নে সদাব্যস্ত ছিলেন তিনি। ব্যান্ড সঙ্গীতের পাশাপাশি নতুনত্ব এনেছেন চলচ্চিত্র ও জিঙ্গেলেও। যত বড় মাপের শিল্পী ছিলেন তার চেয়ে বড় মাপের মানুষ ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। প্রধান অতিথিও বলছিলেন তেমন কথায়।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আইয়ুব বাচ্চু এদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। সবসময় প্রাণোচ্ছল এই শিল্পী অনেক বড় মাপের একজন মানুষ ছিলেন। খুব সহজেই সবাইকে আপন করে নেওয়ার মতো গুন ছিলো তার মধ্যে। বাচ্চুর অনেক স্বপ্ন ছিলো, সে স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তার চলে যাওয়াতে আমাদের ব্যান্ড সঙ্গীতের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেলো। তার গানের মধ্য দিয়ে তিনি আমাদের মাঝে অনেক দিন বেঁচে থাকবেন।
ব্যান্ড সঙ্গীতশিল্পী মাকসুদের সঞ্চালনায় আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে আয়োজনে আরও কথা বলেন সঙ্গীতশিল্পী রফিকুল আলম, বামবা’র সভাপতি ও মাইলস’র হামিন আহমেদ, শাফিন আহমেদ, ফিডব্যাকের ফুয়াদ নাসের বাবু, মাইলস’র মানাম আহমেদ, দলছুট’র বাপ্পা মজুমদার প্রমুখ।
শাফিন আহমেদ বলেন, মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির সবাইকে যে একত্র করা যায় আইয়ুব বাচ্চু সেটি করে দেখিয়েছেন। বাচ্চুকে আমাদের তার গানের মধ্য দিয়েই বাঁচিয়ে রাখতে হবে। ব্যবস্থা নিতে হবে আরও সুবিশাল পরিসরে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার।
ফুয়াদ নাসের বাবু বলেন, বাচ্চুর মধ্যে কোনো রকমের হিংসা ছিলনা। আমার সঙ্গে তার অনেক মান-অভিমান থাকলেও আমার কোনো কাজ ভালো হলে সঙে সঙে ফোন করে তার প্রশংসা করতো। তার মতো বন্ধুবৎসল মানুষ খুঁজে পাওয়াটা দুষ্কর।
বাপ্পা মজুমদার বলেন, বাচ্চু ভাই তার মাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। একজন মা ভক্ত মানুষ ছিলেন তিনি। আমাদের সবাইকেও মাকে ভালোবাসতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন বাচ্চু ভাই। তার কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখেছি।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই আইয়ুব বাচ্চুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে ‘বামবা’ নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়
আলোচনা পর্ব শেষে আইয়ুব বাচ্চু ও এলআরবি’র ১৫টি গান গেয়ে শোনান বিভিন্ন ব্যান্ড দলের সদস্যরা। এগুলোর মধ্যে ‘এখন অনেক রাত’, ‘রাতের তারার মতো’, ‘চাঁদ মামা’, ‘ফেরারি মন’, ‘গতকাল রাতে’, ‘সুখেরই পৃথিবী’, ‘ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘দিশেহারা’, ‘ময়না’, ‘রূপালী গিটার’, ‘হাসতে দেখো’, ‘বাংলাদেশ’, ‘নীল বেদনা’ ও ‘ঘুমন্ত শহরে’ অন্যতম। সবশেষে সম্মিলিত কণ্ঠে গাওয়া হয় ‘চলো বদলে যাই’ গানটি। যার সবগুলোই দর্শক হুদয়ে যেমন আনন্দ যোগায়, ঠিক তেমনি অনুভব করায় এক অপ্রাপ্তির।
গত ১৮ অক্টোবর ঢাকার বাসায় মৃত্যুবরণ করেন গুণী এই শিল্পী। তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। এদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাসায় হার্ট অ্যাটাক করেন তিনি। তড়িঘড়ি তাকে স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটের দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ড এলআরবি’র দলনেতা আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন একাধারে গায়ক, গিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক। গিটারের জাদুকর হিসেবে আলাদা সুনাম ছিল তার। ভক্তদের কাছে তিনি ‘এবি’ নামে পরিচিত।