কলাপাড়া(পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মীঠাগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম মধুখালী গ্রামের ৭০ বয়সোর্ধ ইসমাইল গাজী ও মোসাঃ ফাতেমা দম্পতির ছেলে জুয়েল গাজী(৩৫)। অর্থাভাবে বেশি দূর পড়াশুনা চালিয়ে যেতে না পারাটি মানুষটির আয়ে জুটত ৮ পরিবারের সদস্যদের রুটি রুজি।
যে আয় না করলে পুরো পরিবার না খেয়ে থাকতে হয় সেই মানুষটিই অকালে চলে গেল রাজধানীর বেইলি রোডের খাবারের দোকান কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের আগুনে। আয়ের মানুষটির জীবন চলে যাওয়ার সংবাদে পুরো পরিবারে নেমে আসে আমাবস্যার কালো রাত।
চোখে মুখে হতাশার ছাপ। একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে দিশেহারা পুরো পরিবার। বারবার মূর্ছা যাচ্ছে মা।
শোকে মূর্হ্যমান বাবা। পাগলপ্রায় ভাই। শোকে স্তব্ধতায় পুরো গ্রাম। পরিবারকে শান্তনা দেওয়ার জন্য ছুটে আসছে গ্রামের বাসিন্দারা।
অজপাড়া গায়ের জুয়েল রানা নিজের ও পরিবাবের ভাগ্যের চাকা ঘুরানোর জন্য গত ৭ বছর আগে পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকায়।
বিভিন্ন যায়গায় কাজ করে পরিবারের হাল ধরেন। গত ৭ মাস আগে রাজধানীর বেইলি রোডের খাবারের দোকান কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে চাকুরী নেন।
পরিবারের তথ্যমতে, নিহত জুয়েলের সংসারে রয়েছে দুই সন্তান। এক ছেলে ও এক মেয়ে। বড় মেয়ের বয়স ৭ বছর। বাবার মৃত্যুতে অনেক লোকের উপস্থিতি দেখে কিছুটা অনুভব করলেও ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ২ বছরের ছোট্ট পুত্র সন্তান তাইফুল। বাবার মরদেহ যখন এম্বুলেন্সে করে ছোট্ট টিনের বাড়ির সামনে রাখে তখন হাতে জুস ধরে তাকিয়ে থাকে নিথর দেহের উপর। এমন করুন দৃশ্য দেখে সবার চোখের কোনে জ্বল এসে জমে।
মৃত্যু দেহ বাড়িতে আসার খবরে ছুটে আসেন কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেনে। এসময় পরিবারের হাতে ২৫ হাজার টাকার চেক তুলে দেন দাফন কাফনের কাজে।
নিহতের মামাত ভাই সায়মন বলেন, পুরো পরিবারের দায়িত্ব ছিল জুয়েল ভাইর মাথায়। নিজে জীবনে যে কষ্ট করেছে তা আমি কাছ থেকে দেখছি। আজ ভাই চলে গেল। এখন তার দুটি সন্তান ও তার বৃদ্ধ বাবা মাকে কে দেখবে। তাদের আর্থিক সংকট অনেক।
জুয়েলের এমন মৃত্যুতে পুরো এলাকায় নেমে আসছে শোকের ছায়া। বৃদ্ধ বাবা মাকে কি বলে শাত্বনা দিব ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। জুয়েলের বন্ধুরাও শোকে ভাষাহীন।
ইউপি সদস্য কাওসার মুসুল্লি বলেন, জুয়েল অনেক ভালো ছেলে। সবার সাথে ভালো ব্যবহার করত। আমরা চেষ্টা করব সাধ্যমত ওর পরিবারের পাশে দাড়াতে।
মিঠাগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন খান দুলাল বলেন, পরিবারটি অসহায়। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে ছিল জুয়েল। এখন পরিবারটি আরো অসহায় হয়ে পড়ল। পরিবারের খোঁজ খবর নিয়েছি। আমরা তাদের পরিবারের পাশে থাকব সুখে দুখে।