শুক্রবার, ১১ Jul ২০২৫, ০২:২৫ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
কলাপাড়ায় উন্নত চিকিৎসা দিতে অসুস্থ সাপের এক্সরে লন্ডনে “ গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তারেক রহমান শীর্ষক” আলোচনা সভায়: জহির উদ্দিন স্বপন কলাপাড়ায় জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দকে সংবর্ধনা কলাপাড়ায় মসজিদ-মন্দির উন্নয়ন বরাদ্দের টাকা লোপাটের অভিযোগ পুলিশের মৃদু লাঠিচার্যে সড়ক ছেড়েছে বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ শিক্ষার্থীরা কলাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক নেতৃবৃন্দের সাথে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতার মতবিনিময় মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে… এবিএম মোশাররফ হোসেন পটুয়াখালীতে জনজীবন বিপর্যস্ত, উপকূল জুড়ে অতিভারী মাত্রায় বৃষ্টিপাত লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলে অতিভারী বৃষ্টিপাত। সমুদ্র বন্দরে ০৩ নম্বর ও নদী বন্দরে ০১ নম্বর সতর্ক সংকেত কলাপাড়ায় ৫ হাজার প্যাকেট নকল সিগারেট জব্দ।।১লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড সভাপতি টিপু সম্পাদক অমল কলাপাড়া প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন কলাপাড়ায় বিএনপির দিনব্যাপী সাংগঠনিক সভা সৎ এবং সুশিক্ষিত নেতৃত্বের মাধ্যমেই শিক্ষার উন্নয়ন সম্ভব….এবিএম মোশাররফ হোসেন সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উপকূলে বৃষ্টিপাত, পায়রা বন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত বহাল কলাপাড়ায় ফল উৎসব, কৃষক বাজার  ও শিশু পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
শেবাচিমে চিকিৎসকের অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ

শেবাচিমে চিকিৎসকের অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ

Sharing is caring!

অনলাইন ডেক্স: বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তবে সঠিক চিকিৎসা না দেওয়া ও চিকিৎসকের অবহেলার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রোগীর স্বজনরা।

নিহত রোগীর নাম রেনু বেগম (৫৫)। তিনি বরিশাল নগরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবুল কালাম চৌধুরীর স্ত্রী এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন ২ নম্বর সেক্টরের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রবের মেয়ে।

গত ২৯ নভেম্বর সকালে শেবাচিমের সিসিইউ-তে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় হাসপাতাল পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নিহতের পরিবার। তবে কোনো বিচার না পেয়ে মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পরিবারটি।

নিহত রোগীর ছেলে আরাফাত চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমার মা রেনু বেগম শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. রব বেপারীর কন্যা। গত বছরের ১৫ আগস্ট হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করি। ভর্তির পর হাসপাতালের কার্ডিওলজি (সি.সি.ইউ) বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম এ সালাউদ্দিন রাউন্ডের সময় রোগী রেনু বেগমকে দেখে জানান, আরও ২/৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর অবস্থা বুঝে সবকিছু বলতে পারবেন। কিন্তু ওই দিনই রেনু বেগমকে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেন কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মো. মুসফিকুজ্জামান। তখন আমি কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপকের কথাগুলো ডা. মো. মুসফিকুজ্জামানকে জানালে, তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যান, কথা কাটাকাটি করেন এবং অসদাচরণ করেন। পরে বিষয়টি অধ্যাপক ডা. এম এ সালাউদ্দিনকে জানালে, সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মো. মুসফিকুজ্জামান আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং কয়েকদিন রেখে ২১ আগস্ট মাকে ছাড়পত্র দিয়ে দেন।

এরপর মা রেনু বেগম একই বছরের ১৭ নভেম্বর অসুস্থ হলে আবার শেবাচিম হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি করাই। কিন্তু দু’দিন পরে ১৯ নভেম্বর ডা. মো. মুসফিকুজ্জামান হাসপাতালে অসুস্থ মা রেনু বেগমকে দেখা মাত্রই ছাড়পত্র দিয়ে দেয়। তাকে অনুরোধ করেও মাকে হাসপাতালে রাখতে পারিনি।

এরপর চলতি বছরের ২৩ আগস্ট মা রেনু বেগম আবারও অসুস্থ হলে শেবাচিম হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি করি। ভর্তির সময় আমার বাবা আবুল কালাম চৌধুরী ডা. মো. মুসফিকুজ্জামানের কাছে গিয়ে তাকে অনুরোধ করেন এবং আমার (আরাফাত চৌধুরী) কথায় কোনো ভুল হলে সেজন্য ক্ষমা চান। তবুও যেন স্ত্রী রেনু বেগমের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। ওইসময় আমাদের পক্ষ থেকে পরপর দু’বার উন্নত চিকিৎসার কথা বলা হলেও ডা. মো. মুসফিকুজ্জামান সঠিক কোনো পরামর্শ না দিয়ে দু’দিন পরে ২৫ আগস্ট নাম কেটে দেন।

লিখিত বক্তব্যে মৃতের ছেলে আরাফাত আরও বলেন, এরপর গত ২৭ নভেম্বর দিবাগত মধ্যরাতে মা রেনু বেগম হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে শেবাচিম হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি করি। রোগী হার্ট অ্যাটাক করেছে- এমন কথা বলে ইন্টার্নি চিকিৎসকরা কিছু পরীক্ষা করতে দেন। ওই রাতে আমার সঙ্গে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায়, টাকা যোগাড় করে সকালে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু ২৮ নভেম্বর ডা. মো. মুসফিকুজ্জামান সিসিইউ ওয়ার্ডে এসে অসুস্থ রেনু বেগমকে দেখেই ছাড়পত্র দিয়ে দেন এবং ঢাকা জাতীয় হৃদরোগ ইনষ্টিটিউটে রেফার করেন। ঢাকা নিয়ে যাবার প্রস্তুতির সময় রেনু বেগম মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে উপায়ন্তর না দেখে বরিশাল নগরের রুপাতলী এলাকার বেসরকারি আবদুল্লাহ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসক না থাকায় ভর্তি না নেয়ায় আশংকাজনক অবস্থায় আবারও শেবাচিম হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে মাকে ভর্তি করি। পরদিন ২৯ নভেম্বর সকালে আমার মা রেনু বেগম সিসিইউ-তে চিকিৎসাধীন মৃত্যুবরণ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করে বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন এবং কোতয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ দিতে চাইলে, তারা অভিযোগ না নিয়ে হাসপাতাল পরিচালক বরাবর আবেদন করার পরামর্শ দেন। যার ধারাবাহিকতায় ৩০ নভেম্বর আমি নিজে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক বরাবর একটি লিখিত আবেদন করে। যার বিষয় ছিলো, “হৃদরোগ বিভাগে ডাক্তারের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু প্রসঙ্গে”।

তিনি বলেন, প্রথম তর্কের সূত্র ধরে আমার মা যতবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, ততবার প্রতিহিংসা করে ডা. মুসফিকুজ্জামান নাম কেটে দিয়েছেন। এমনকি মৃত্যুর আগেরদিনও মায়ের নাম কেটে দেন তিনি। আর এ বিষয়ে বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর দীর্ঘ ১৬-১৭ দিন কেটে গেলেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় গত ১৭ ডিসেম্বর আমি বিষয়টি ফেসবুক লাইভে মানুষকে জানাই। এতেও হাসপাতাল প্রশাসন কার্যকর কোনো ভূমিকা না নেওয়ায় আজ সংবাদ সম্মেলন করতে বাধ্য হয়েছি।

মৃতের ছেলে বলেন, আমি আমার মায়ের মৃত্যুর বিচার চাই। চাই ক্ষতিপূরণসহ ডা. মো. মুসফিকুজ্জামানের শাস্তি। যাতে ভবিষ্যতে কোনো রোগীর সঙ্গে কেউ খামখেয়ালিপণা করার সাহস না পায়।

মৃত রেনু বেগমের স্বামী আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, ছাড়পত্র দেওয়া নিয়ে ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে তর্কাতর্কি হওয়ার পর যখন সঠিকভাবে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন না ওই চিকিৎসক, তখন আমি তার কাছে হাতজোড় করে ক্ষমাও চেয়েছি। তারপরও তিনি আমার স্ত্রীর সঠিক চিকিৎসা করেননি। যখনই তাকে ভর্তি দেখেছেন, নাম কেটে দিয়েছেন।

এদিকে, অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. মো. মুসফিকুজ্জামান তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলায় হতবাক হয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন। সেইসঙ্গে দায়িত্বপালনে কোনো সময় কারো সঙ্গে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেননি বলেও জানান তিনি।

শেবাচিম হাসপাতালের কার্ডিওলোজলি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার বলেন, আমার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে, তা শুনেছি। বিষয়টি দুঃখজনক। তবে আমি লিখিত জবাব দিয়ে দিয়েছি।

তিনি তার নামে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, রোগীর স্বজনের লিখিত অভিযোগ পেয়ে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের ডা. অমলেন্দু বিশ্বাসকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়নি। প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD