বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:১৮ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেক্স: কসমেটিকসের দোকানে চুরির অপবাদে বরিশালের শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক দাবি করেছেন, ওই ছাত্রীর মায়ের লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বরিশাল শহরের ফলপট্টি উলফৎ প্লাজার মাতৃছায়া নামের দোকানে কসমেটিকস কিনতে যায় ওই ছাত্রী। সেখানে দোকানের পণ্য চুরি করার অপবাদ দিয়ে তাকে আটকে রেখে হয়রানি করে দোকানের দুই কর্মচারী। ঘটনার ভিডিও ধারণ করে তা ফেসবুকে ছেড়ে দেয় এক কর্মচারী।
বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে ওই দোকানের মালিক ও হয়রানির শিকার ছাত্রীর পরিবারকে নিয়ে বসে বিষয়টি ‘মিটমাট’ করে দেয় পুলিশ।
কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিও দেখে সেই স্কুলছাত্রীকে ছাড়পত্র দিয়েছেন প্রধান শিক্ষিকা।
ওই ছাত্রী জানায়, দোকান থেকে কেনা পণ্য না দিয়ে উল্টো তার ব্যাগে থাকা অন্য দোকান থেকে কেনা পণ্য জোর করে বের করে বলা হয় এগুলো সে চুরি করেছে। প্রতিবাদ করলে তাকে পুলিশে দেওয়ার হুমকি দেয়।
এক পর্যায়ে তাকে মার্কেটের দোতলায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পুরো বিষয়টি ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দেয়।
ওই ভিডিও দেখার পর প্রধান শিক্ষক আমার মাকে ডেকে সোমবার (২২ আগস্ট) আমাকে ছাড়পত্র দিয়ে দেন। ওইদিন আমরা থানায় অভিযোগ দিতে গেলে, থানার ওসি আজিমুল করিম কোনো সহায়তাও করেননি। তবে ওই দুই কর্মচারীকে আটক করলেও পরে ছেড়ে দেয়।
স্কুলছাত্রীর মা বলেন, দোকানের লোকজন মিলে আমার নাবালিকা মেয়েকে চুরির অপবাদ দিয়ে ফেসবুকে ভিডিও ছড়িয়ে দিল। এমন হয়রানির ঘটনায় থানায় গিয়েছিলাম লিখিত অভিযোগ দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা ভিডিও দেখে অভিযুক্ত দুই ছেলেকে ধরে এনে থানায় আমাদের বসিয়ে মৌখিকভাবে মিটমাট করে দিয়েছে। আমি মনে করি এতে আমরা সুবিচার পাইনি।
স্কুলছাত্রীর ব্যবসায়ী পিতা বলেন, আমাদের ডেকে নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক চাপ প্রয়োগ করে বলেন যেন ‘পারিবারিক কারণ’ দেখিয়ে মেয়ের ছাড়পত্র চেয়ে আবেদন করি। আমরা তাকে অনুরোধ করেছিলাম যেন আসল সত্যিটা খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু তিনি মেয়েকে ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক দিয়ে দেন।
আবার বিচার চাইতে থানায় গিয়েছিলাম। থানা থেকে বলেছে, মামলা করে তেমন কোনো সুফল হবে না। এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করাই ভালো। শেষে আমাদের দুই পক্ষকে বসিয়ে মিলমিশ করিয়ে দেন ওসি।
এদিকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে স্কুলছাত্রীকে আটকে হয়রানির কথা স্বীকার করে মাতৃছায়া নামক সেই দোকানের মালিক মাসুদ করিম বলেন, আমার দোকানের দুই কর্মচারী ভুল করেছে। একটি ঘটনা ঘটিয়ে সেটি ভিডিও করে ফেসবুকে দিয়েছে। এই কাজটি তারা অন্যায় করেছে। এজন্য তারা থানায় ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, মেয়ের পরিবার থানায় গেলে থানা থেকে পুলিশ এসে আমার দুই কর্মচারীকে আটক করে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের সাথে বসিয়ে ওসি সাহেব সমঝোতা করিয়ে দেন।
মাসুদ করিম বলেন, ওসি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অনেকবার অনুরোধ করেছেন ছাড়পত্র না দিতে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক কোনো কথা শোনেননি। আমিও মনে করি, ওই মেয়েকে ছাড়পত্র দিয়ে সুবিচার করেননি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। মেয়েটি আসলে দায়ী কিনা তা বিবেচনা না করে একটি ভিডিও দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি।
পুরো ঘটনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পাপিয়া জেসমিন জানান, ওই ছাত্রীকে স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে ছাড়পত্র দেয়নি। শিক্ষার্থীর মায়ের লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। ছাত্রীর যে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সেটা আমিও দেখেছি। তবে এটা অনেক আগের ঘটনা। আর ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ২২ আগস্ট।
তিনি দাবি করেন, ওই ছাত্রী ক্লাসে অনিয়মিত। সে নিয়মিত স্কুলে আসে না। আবার এলেও দেরি করে আসে। ওই ছাত্রীর নামে আগে থেকেই টুকিটাকি অভিযোগ এবং দোষ আছে।
কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল করিম থানায় উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠক হয়েছে জানিয়ে বলেন, স্কুলছাত্রীর পরিবার কোনো অভিযোগ না দেওয়ায় আইনত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারিনি।