বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০২:৩১ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
বরিশাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রস্তুতি সভা কলাপাড়ায় নদী থেকে ভাসমান লাশ উদ্ধার কলাপাড়া বাজার আয়োজিত  ফুটবল টুর্নামেন্টের শুভ উদ্বোধন কলাপাড়ায় বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক সাড়ে ১২ মন মাছ জব্দ কলাপাড়ায় ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় মেগা প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন কলাপাড়ায় খালের উপর অবৈধভাবে নির্মিত ৭টি স্থাপনা উচ্ছেদ কুয়াকাটায় নানা আয়োজনে বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন বাকেরগঞ্জে স্বামী স্ত্রীর দ্বন্দ্বের ঘটনায় সাবেক এমপিকে জড়ানোয় বিএনপির উদ্বেগ অপারেশন ডেভিল হান্ট” কলাপাড়ায় সাবেক চেয়ারম্যানসহ গ্রেফতার-৬ কুয়াকাটায় পর্যটক হেনেস্তাকারী যুবদল সভাপতি বহিষ্কার টুরিষ্ট ভিসায় জেল খেটে বিদেশ ফেরত মকছুদ।কলাপাড়ায় দুই  প্রতারকের বিরুদ্ধে মামলা কলাপাড়া বিএনপির সাবেক সভাপতি’র দলবদল কলাপাড়ায় খাল থেকে অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চরশিবা সাংগঠনিক ইউনিয়ন শাখার উদ্দ্যোগে  মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
বীর মুক্তিযোদ্ধার পাশে বরিশালের জেলা প্রশাসক সব কষ্টের অবসান

বীর মুক্তিযোদ্ধার পাশে বরিশালের জেলা প্রশাসক সব কষ্টের অবসান

Sharing is caring!

ক্রাইম সিন ডেস্ক: কত কাজই না করতে হয়েছে। রাতের পাহাড়াদার থেকে বিক্রি করছেন মধু চলমান ৮৮ বছর বয়সে। অবস্থাপন্ন পরিবার, বাবা ছিলেন বৃটিশ স্টীমারের বাটলার। স্বাধীনতা যুদ্ধে ছিলেন অকুতোভয়। পাকিস্তানীরা বঙ্গবন্ধুর সেলের পাশে কবর খুঁড়েছে, একথা শুনে খুন চেপে যায়। কর্নকাঠী এলাকায় শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে বেয়নেট দিয়ে বুক চিড়ে পাকিস্তানী সেনার রক্ত আর কইলব্জা খেয়েছিলেন।

সম্মুখ যুদ্ধের জন্য ওয়াপদা ক্যাম্প প্রধান পাকিস্তানী মেজর মোক্তার আলীকে চিঠি দিয়ে আহবান জানিয়েছিলেন। মোক্তারের উক্তি ছিল-আদমি লোগকো রক্ত খায়েগা এ্য ক্যায়সে লোগ হ্যায়, হাম বরিশাল মে নেহি রহেগা। ওদিনই মোক্তার আলী পলায়ন করে ঢাকা। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা হলে বীরত্বগাঁথা সনদ দেন, সাথে জাকির হোসেন সড়কে একখানা দ্বিতল বাড়ি দিতে চান। জবাব ছিল, বঙ্গবন্ধু আমার বাবার অবস্থা ভালো যুদ্ধাহত সহযোদ্ধা ইউসুফকে ওই বাড়িটি পাইয়ে দেন। তবে গেল শতাব্দীর অশির দশকে নগরীর আলেকান্দার বসতভিটা বেহাত হয় ফুপাতো ভাইদের কুটকৌশলে পরাজিত হয়ে। ওরপর পরিজন নিয়ে দিনকাটে তার ভাড়া বাড়িতে। জীবন যুদ্ধে পরাজিত এই বীর যোদ্ধা আনোয়ার হোসেন খান আনুর এখন একটাই দাবী, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি।

রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে যখন হাঁক ছাড়েন,এই মধু,খাঁটি মধু,লইয়া যান; তখন করো করো দ্বারা কটু কথাও শোনেন, উপেক্ষিত হন। আনোয়ার হোসেন বাসে মধু বিক্রি করেন দেখে যুদ্ধকালীন নৌকমান্ডার সৈয়দ আবুল বাশার ওরফে নেভাল বাশারের চোখে জল আসে। স্মৃতিচারণ করেন, কালেক্টরেটে চাকুরী করতেন নগরীর দরগাবাড়ি এলাকার হিরা মল্লিক। যার কার্যকলাপ ছিল পাকিস্তানী আর্মীর পক্ষে। কর্নকাঠী এলাকায় দেখা হলে হিরা মল্লিককে শায়েস্তা করতে আনোয়ার হোসেনকে পাঠিয়েছিলেন নৌকমান্ডার আবুল বাশার।

অপারেশন শেষে ফিরে এসে আনু জানায়-ওস্তাদ ওরে পাইনাই; তয় ঘরের টিভি-টুভি ভাইঙ্গা আইছি। যুদ্ধকালীন সময়ে মানুষের মুখে শুনেছি আনোয়ার পাকিস্তানী সেনার রক্ত আর কইলব্জা খাওয়ার কথা। আমার সেই সহযোদ্ধা আনুর নাম মুক্তিযুদ্ধের তালিকায় থাকবেনা নিজেকে ফেইলর মনে হয়, এমন অবস্থা দেখে মরেও শান্তি পাবোনা।

এই কমান্ডার আনোয়ার হোসেনের অভিযোগে সায় দিয়ে বলেন, আগের কমান্ডাররা টাকার বিনিময়ে বহু মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করেছে এটা সত্য। উপমায় বলেন, তাকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) থেকে সেবার সাড়ে ৫’শ মুক্তিযোদ্ধার তালিকা যাছাই করতে দিয়েছিলেন। সেখানে ৮০ ভাগেই অনিয়ম পেয়েছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বগাঁথা আনোয়ার হোসেন আনুর চলমান কষ্টেগাঁথা দিনগুজরানের কথা শুনে মহিউদ্দিন মানিক বীরপ্রতীক জানালেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক সহায়তা থেকে বসত ঘর তৈরী করে দিচ্ছেন। এখানে সবার এগিয়ে এসে তাকে পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বীরযোদ্ধা আনোয়ার হোসেনকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘর ও পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকার আর্থিক অনুদানের প্রদান করেছেন।

জেলা প্রশাসক বলেছেন, অতিসত্ত্বর এই যোদ্ধাকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে যোগাযোগ করতে।নগরীর ১২ নং ওয়ার্ডের আলেকান্দার আমতলায় ১৯৩৪ সালেল ২৭ আক্টোবর আনোয়ার হোসেন খান আনুর জন্ম। বাবা আ. খালেক খান ব্রিটিশ কোম্পনীর আমল থেকে স্টীমারে হোটেল চালাতেন। নূরিয়া হাইস্কুলে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছিলেন। এরপর ১৯৬১ সালে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসে যোগ দেন। ঢাকার পিলখানায় প্রশিক্ষণ নিয়ে রেজিমেন্ট নং-১৫ হাজার ৭’শ ৯১ তে যোগ দেন। ইপিআরে চাকুরী করার সুবাদে ১ মাস চীনের গহিন জঙ্গলে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন। ওসময় লবন, মরিচের গুড়া আর দিয়াশলাই বক্স সাথে নিয়েছিলেন। খরগোস, বালিহাঁস আর ফল খেয়ে বাঁচতেন।

ওই অভিজ্ঞতায় চলমান ৮৮ বছর বয়সেও আনোয়ার হোসেন বলেন, তিনি এখনো এক গাছ থেকে আরেক গাছে লাফিয়ে যেতে পারেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ আর ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানীদের বাঙ্গালী নিধন যজ্ঞ শুরু হলে যশোর সীমান্তে দায়িত্বরত অবস্থায় ২৬ মার্চ পালিয়ে বরিশালে চলে আসেন। তখনকার বেলস পার্ক বলতে বর্তমান বঙ্গবন্ধু উদ্যানে দেখেন মেজর এম এ জলিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ করাচ্ছেন। আনোয়ার হোসেনকে পেয়ে মেজর এম এ জলিল বলেন-তুই প্রশিক্ষণের কাজ চালা। প্রথম পর্যায়ে দুই সপ্তাহে ৪’শ মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দেন।

এরপর পাকিস্তানী সেনারা প্রবেশ করে পুলিশলাইন্স এবং স্টীমার ঘাটে বোম্বিং করে। ওসময় স্টীমারঘাট এলাকায় এক মোটর মেকানিকসের বোমের আঘাতে হাত কাটা পড়ে। মেজর জলিল তখন আনোয়ার হোসেনকে বাকেরগঞ্জ, নলছিটি ও বরিশাল কোতোয়ালী থানার দায়িত্ব দেন। ইপিআর, সেনা সদস্য, পুলিশ মিলিয়ে ১৮ জন, মুক্তিযোদ্ধা ৫০ জন আর নৌকার মাঝি ৩০ এই করে ৯৮ জনের একটি দল গঠন করেন। অস্ত্র আনেন পুলিশলাইন্সে অস্ত্রাগারে দায়িত্বে থাকা পুলিশের সার্জেন্ট ভোলাতে বাড়ি মজিদ হাওলাদারের কাছ থেকে। ওসময় ১৭টি থ্রি নট থ্রি রাইফেল আর ৩ বক্সে সাড়ে ৭ হাজার গুলি পেয়েছিলেন।

নলছিটি থানা থেকে কাউয়ারচর খেয়াঘাট পর্যন্ত তার বাহিনী টহল চালাতো। নাপিতের হাট খেয়াঘাটে তিন বার যুদ্ধ হয় পাকিস্তানী সেনাদের সাথে। একবার ২টি স্পীডবোটে শ’খানেক পাকিস্তানী সেনা নলছিটির ঘোপের হাট থেকে রওয়ানা দিয়েছিল। তখন ভারত থেকে ট্রেনিং পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা এসেছিলেন এসএলআর সমেত। ওই দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে স্পীডবোটের ক্ষতি করলে লেবুখালী গিয়ে পাকিস্তানী সেনারা ডুবে মারা যায়। এর আগে একবার জীবিত দুই পাকিস্তানী সেনাকে ধরে কর্নকাঠীর মুতাইত বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে জনতার উপস্থিতিতে এক পাকিস্তানী সেনার বুকে বেয়নেট ঢুকিয়ে চুমুক দিয়ে রক্ত পান করেন এবং কলব্জে খেয়ে ফেলেন। একথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

এখানে আনোয়ার হোসেন আনু ক্ষুব্ধ ও আপ্লুত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য তার জেলের পাশে কবর খুঁড়েছে পাকিস্তানীরা এই কথা শুনে। এমন বেপড়োয়া হয়ে উঠেছিলেন আনু কখনোবা একাকী চলে আসতেন শত্রুদের অবস্থান জানতে ও হত্যা করতে। যুদ্ধের কোন একদিন আম কাঠের কয়লা আর গাঁদা ফুলের রস মিলিয়ে কালি বানায়ে সুঁই ফোড়ে ডান হাতে লেখেন ‘এ আল্লা মুক্তি’। যার অর্থ যুদ্ধে বা শত্রুর হাতে মারা পড়লে মাথা পাওয়া না গেলে যেন হাতে লেখা সংকেত দেখে সহযোদ্ধারা বুঝতে পারেন এটা কমান্ডার আনুর লাশ। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আনোয়ার হোসেনের বাবা আ. খালেক খান ঢাকা থেকে বাড়িতে আসলে ছেলে মুক্তিযোদ্ধা বলে রাশেদ ওরফে রাউস্যা রাজাকার তার বাবার কাছে টাকা চায়। ওসময় ২’শ টাকা দিয়ে রেহাই মেলে।

এই খবর পেয়ে আর রাজাকারদের অবস্থান আমতলার অন্ধ স্কুলের দোতালায় তা দেখার জন্য বাড়িতে আসেন। সাথে তখন এসএলআর এবং ২টি গ্রেনেড ছিল। পাকিস্তানী সেনারা খবর পেয়ে বাব-মা, ভাই-বোনদের আটকে ফেলে। আনোয়ার হোসেন তখন টয়লেটের উপর পজিশন নিয়েছেন। আনোয়ারকে নাপেয়ে তার মা ফাতেমা বেগমকে বলে যায়, তোমার ছেলে মুক্তিবাহিনী। বাড়িতে এলে বেঁধে আমাদের খবর দিবা। কেবল চরকাউয়া নয়; গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, পয়সারহাট,নলছিটি, বাকেরগঞ্জ থেকে ভোলার লালমোহন পর্যন্ত যুদ্ধকালে বিচরণ করেছেন। ভোলায় সেনা বাহিনীর সদস্য সিদ্দিককে কমান্ডারের দায়িত্ব দিয়ে আসেন।

বাকেরগঞ্জের পাদ্রীশিবপুরে অত্যাচারী এক রাজাকারকে আটক করে ব্রীজের গোড়ায় নৌকায় বেঁধে রাখেন। এসময় তার সহযোদ্ধা সেনাবাহিনীর সদস্য ইউসুফ হাতে তৈরী বোমা নিয়ে নাড়াচাড়া করলে বিস্ফোরিত হয়। ওই ঘটনায় ইউসুফের হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইউসুফকে দপদপিয়ার তাঁতীবাড়ী তাদের অস্থায়ী হাসপাতালে নিয়ে যান। আর বরিশাল নগরী থেকে ডা. ক্যাপ্টেন নাজিব উদ্দিনকে পাকড়াও করে হোন্ডাযোগে নিয়ে চিকিৎসা করান। এই পঙ্গু সহযোদ্ধা ইউসুফকেই বঙ্গবন্ধুর দেয়া ঢাকার জাকির হোসেন সড়কের বাড়িটি দিয়ে দেন আনোয়ার হোসেন। তারা পূর্ণ শক্তি পান যখন ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ১’শ এসএলআর নিয়ে আসেন এবং গজনীর দীঘিতে ক্যাম্প করেন। ওসময়ই পাকিস্তানী মেজর মোক্তার আলীকে সম্মুখ যুদ্ধ করার জন্য গজনীর দীঘিতে আসার আহবান জানিয়ে পানিউন্নয়ন বোর্ডের কর্মচারী মোতালেবের মাধ্যমে চিঠি লিখে পাঠান। জবাবে পাকিস্তানী কমান্ডার ভয়ে ওদিনই ঢাকা চলে যায়।

গজনীর দীঘির ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের খাবারের জন্য স্বাধীনতার মাসখানিক আগে ত্রিশ গোউনের ঘাটে ভিড়ানো চাল এবং গম ভর্তি ২টি সাম্পান লেবার ইনচার্জ আরজ আলীর মাধ্যমে কর্নকাঠী নিয়ে যান। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি সাধারণ জনতাকেও চাল-গম দিয়েছিলেন আনোয়ার হোসেন। বরিশাল মুক্ত হবার খবর শুনে দপদপিয়া থেকে নদী সাঁতরে বরিশালে আসেন। এসময় আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর নির্দেশে কোতোয়ালী থানায় অস্ত্র জমা দেন। কুদ্দুস মোল্লকে দেয়া হয়েছিল জেলখানার তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব।

ইপিআরের চাকুরী অব্যাহতি দিয়ে অবস্থাপন্ন বলে নিজের মোটরসাইকেলটি নিয়ে ঘুড়ে বেড়াতেন।

এনিয়ে মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত হোসেন চৌধুরী বলেন, আনোয়ারকে তখন বলেছিলেন মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম লেখাতে। এগুঁয়েমি স্বভাবের, বলেছিল নাম লেখায়ে কি হবে এই করে এড়িয়ে যান।এর পরের অধ্যায় খুবই জটিল। নগরীর আমতলায় পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সাড়ে ৩ শতক জমি ফুপাতো ভাই টুলু চৌধুরী জোর করে লিখে নেন। এটি ১৯৭৭ সালের কথা। এই জমি বেহাত করতে পুলিশ দ্বারা অমানবিক অত্যাচার করেছিল আনোয়ার হোসেনকে।

আহত অবস্থায় শেরেবাংলা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন তখন ১৩ হাজার টাকার বিনিময়ে বসত ভিটে লিখে নেয়। ওসময় পুলিশের ওসি আলম মোল্লা অস্ত্র আইনে মামলা দিলে ৫ বছরের সাজা হয়। চলে যেতে হয় যশোর জেলে। ঐ জেলে তখন মেজর জলিল এবং কুদ্দুস মোল্লাও ছিলেন। সেখানে একদিন ফাঁসির আসামী আনা হলে প্রথমে জল্লাদের দায়িত্ব পালনে কুদ্দুস মোল্লার ডাক এলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, সাহসী বলতে ১ নং সেলে থাকা আনোয়ার হোসেনকে ডাকতে পারেন। এরপর ডিআইজি আনোয়ার হোসেনের কাছে এলে আইজিকে ফোনে ধরায়ে দিতে বলেন। জবাবে আইজি বলেছিলেন আমার বাড়ি কাউখালী তোমার কি প্রয়োজন? আনোয়ার বলেছিলেন, জল্লাদের দায়িত্ব পালন করবো বিপরীতে আমার সাজা মওকুপ করতে হবে। কথা রেখেছিলেন আইজি। ১৪ মাস জেল খেটে বের হয়ে বরিশালে ফেরেন। পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকতে গোমা বাজারে রাতের পাহাড়াদারের কাজ নেন। সেখানে একরাতে ধাওয়া করে ডাকাত পাকড়াও করলে নিজের জীবন বিপন্ন হয়ে ওঠায় বরিশালে চলে আসেন।

এরপর শুরু করেন মধু সংগ্রহ ও বিক্রির কাজ। অনটনে সাত সন্তানদের পড়ালেখা করাতে পারেননি রীতিমত। সম্ভবত জীবন সায়াহ্নে এসে উপলব্ধি হয় মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম লেখানোর। এজন্য বেশ কয়েকবার আবেদন করেছেন। আনোয়ার হোসেনের কথায় তিনি বাছাইয়ের বেলায় দুই কমান্ডারদের ধার দেনা আর কষ্টে যোগানো ৬০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। সর্বশেষ আবেদনে তারা বাবার নাম ভুল আসায় এবারো বিফল মনোরথে ফিরতে হয়েছে এই বীরযোদ্ধাকে। এনিয়ে যুদ্ধকালে নৌকমান্ডার সৈয়দ আবুল বাশার ওরফে নেভাল বাসারের উক্তি-বরিশালের মুক্তিযোদ্ধা সংসদে একটি চক্র আছে। যারা যুদ্ধের সাথে ছিলনা; অথচ শক্তিশালী। পেছনে থেকে তারাই এই খেলা খেলে থাকে। পাছে থলের খবর বেড়িয়ে পড়ে তাই ভয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের দূরে সরায়ে রাখে।

তবে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর মাথা গোঁজার ঠাঁই পাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন আনু।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হলে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার এর দৃষ্টিগোচর হলে ইতোমধ্যে তাকে চিকিৎসার জন্য অর্থ সহায়তা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। জমি ও ঘর দিতে ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

গতকাল( ১০ ফেব্রুয়ারী) বৃহস্পতিবার  তাকে দেখতে তার বাড়িতে যান বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার। আনোয়ার হোসেন আনু ও তার পরিবারের সাথে কথা বলেন এ সময় তার চিকিৎসাসহ সার্বিক বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন।

এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে কোনো মানুষ ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। এখন পর্যন্ত সারাদেশে ১ লাখ ২৬ হাজার ঘর দেওয়া হয়েছে। ৯ লাখ পর্যন্ত গৃহহীনদের ঘর দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদা করে ঘর বরাদ্দ রয়েছে। সেই ঘরগুলো অনেক বেশি উন্নতমানের।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, একজন মুক্তিযোদ্ধাও যেন অনাহারে, অর্ধাহারে, কষ্টে না থাকেন। যারা মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন, যাদের জন্য আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি, তাদের কাছে আমাদের দায় আছে। আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যে কোনো কষ্টে বা প্রয়োজনে সব সময়ে পাশে আছি।

তিনি  আরও বলেন, আনোয়ার হোসেন আনু যেন ঘর ও জমি পান সেই ব্যবস্থা গ্রহণে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলেছি। যেকোনো কারণেই হোক তিনি স্বীকৃতি পাননি। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে, যেন পরবর্তী তালিকায় তার নাম আসে। এছাড়া আনোয়ার হোসেন আনুকে সব ধরনের সহায়তায় জেলা প্রশাসন পাশে থাকবে।

উল্লেখ্য; ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা ফেরি করেন মধু,এই ’ শিরোনামে  সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলা প্রশাসনের নজরে আসে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন আনুকে অর্থ সহায়তা ও ঘর দেওয়ার উদ্যোগ নেন জেলা প্রশাসক।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD