শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৪ অপরাহ্ন
হাফিজুর রহমান বরগুনা প্রতিনিধি: নির্বাচনী হলফনামায় ঋণখেলাপির তথ্য গোপন করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বরগুনার আমতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার ফোরকানকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।
একই সাথে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী শামসুদ্দিন আহমেদ ছজুকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে নির্বাচন কমিশনকে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন। বুধবার(১৭ ফেব্রæয়ারি) প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত ও উপজেলা নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আল মামুন এই রায় দেন। মামলার রায়ে আগামি ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে ফোরকানকে আমতলী উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে ছজুকে উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনকে গেজেট নির্দেশ প্রদান করেছেন আদালত।
২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত আমতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ঋণখেলাপির তথ্য গোপন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম সরোয়ার ফোরকান। পরে ঋণখেলাপির দায়ে ফোরকানকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে ছজুকে উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষণার জন্য ওই বছরের ২১ এপ্রিল আদালতে মামলা দায়ের করেন ছজু। মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে পটুয়াখালীর রূপালী ব্যাংকের শাখা থেকে নিজ নামে এক বছর মেয়াদে ১৮ লাখ টাকা ঋণ তোলেন ফোরকান। যা সুদে-আসলে ২৪ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। এছাড়াও নিজের মালিকানাধীন বনানী ট্রেডার্সর নামেও এক বছরের মেয়াদে ঋণ তোলেন গোলাম সরোয়ার ফোরকান। যা সুদে-আসলে দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখে।
যথাসময়ে এই ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৪ সাল থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ খেলাপির তালিকা নাম ওঠে গোলাম সরোয়ার ফোরকানের। ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত আমতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে মনোনয়নপত্রে গোলাম সরোয়ার ফোরকান তার ঋণখেলাপির তথ্য গোপন করে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এরপর নির্বাচনে বিজয়ী হন তিনি। ওই বছরের ২১ এপ্রিল ফোরকানের ঋণখেলাপির তথ্য সংযোজন করে বরগুনার যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালত ও উপজেলা নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন তাঁর প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী শামসুদ্দিন আহমেদ ছজু। আদালত সকল তথ্য যাচাই-বাছাই ও সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ফোরকানকে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে ছজুকে আমতলীর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত ঘোষণা করে আদেশ দেন। নির্বাচনের ১ বছর ১০ মাস ১৭ দিন পর আদালত এ রায় প্রদান করেন। এ বিষয়ে শামসুদ্দিন আহমেদ ছজুর আইনজীবী অ্যডভোকেট জগদীশ চন্দ্র শীল বলেন, গোলাম সরোয়ার ফোরকান ২০১৩ সালে তার নিজ নামে এবং তার মালিকানাধীন বনানী ট্রেডার্সের নামে এক বছর মেয়াদে পটুয়াখালীর রূপালী ব্যাংকের একটি শাখা থেকে ঋণ তোলেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে তিনি ঋণ পরিশোধ না করায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ খেলাপির তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তার ঋণের অনুক‚লের শতভাগ সুদ মওকুফের জন্য রুপালী ব্যাংকের প্রধান শাখায় আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর এক বছরের মধ্যে প্রদানের জন্য ৮০ ভাগ সুদ মওকুফ করেন। এ টাকাও তিনি যথাসময়ে পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন। আইনজীবী আরো বলেন, গোলাম সরোয়ার তার ঋণ খেলাপির এসব তথ্য গোপন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হন। পরে আমার মক্কেল নিজেকে বিজয়ী ঘোষণার দাবি করে ফোরকানেরকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য আদালতে মামলা দায়ের করেন। পরে আদালত আজ এ রায় দেন। আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে শামসুদ্দিন আহম্মদ ছজু বলেন, নির্বাচনে গোলাম সরোয়ার ফোরকান তথ্য গোপন করে আমতলী বাসীর সাথে প্রতারণা করেছে। আদালত যে রায় দিয়েছে তাতে আমতলী উপজেলাবাসী সন্তুষ্ট হয়েছে। আমি মনে করি এর মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এবিষয়ে বরগুনা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার হাওলাদার বলেন, এখন পর্যন্ত আদালতের কোনো আদেশ আমাদের কাছে এসে পৌঁছেনি।
আদালতের আদেশের কপি পেলে আমরা বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানাবো। আমতলী উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার ফোরকান বলেন, এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আমি এবিষয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করবো। আপিলের পরে এবিষয়ে আরো বিস্তারিত তথ্য গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরবো।