শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫২ পূর্বাহ্ন
ক্রাইমসিন২৪ ডেস্ক: আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রার্থী নেই বলে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘তারা শুধু ধানের শীষ প্রতীকের নয়, তারা বিএনপিরও মনোনীত প্রার্থী। বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষে নির্বাচন করছেন তারা। বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ তাদের দেওয়া হয়েছে। জামায়াত তাদের মনোনীত করেনি, বিএনপি মনোনীত করেছে।’
নির্বাচন ভবনে আদালত কর্তৃক সাময়িক স্থগিত হওয়া বিএনপির প্রার্থীদের আসনে নির্বাচন স্থগিত অথবা প্রার্থিতা পরিবর্তনের সুযোগ চেয়ে শনিবার দুপুরে সিইসির কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়ে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন তিনি। এসময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালি, বিজনকান্তি সরকার, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়া জামায়াত নেতাদের পদপদবি তাদের দলীয় ওয়েবসাইটে উল্লেখ আছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন বলেন, ‘ওয়েবসাইটে পদ-পদবি থাকুক। আপনারাও যদি আমাদের কাছে মনোনয়ন চান, আমরা দিতে পারি। কোনো ওয়েবসাইটে আপনার নাম কিভাবে আছে সেটা পরের ব্যাপার। আমরা আইনের মাধ্যমে দিতে পারি কিনা সেটা হলো বিষয়। জামায়াত কোনো নিবন্ধিত দল নয়। কারা কারা জামায়াত করে সেই তালিকাও আমাদের কাছে নাই। আমরা যাদের মনোনয়ন দিয়েছি, তারা আমাদের দলের প্রতীক ধানের শীষ পেয়েছে। এটা যদি অবৈধ হতো তাহলে নির্বাচন কমিশন আগেই বলতো- তাদের প্রার্থিতা অবৈধ। তাদের যদি প্রতীক দেওয়া বে-আইনি হত, যখন প্রতীক বরাদ্দ করা হয় তখন নির্বাচন কমিশন কেন প্রতীক বরাদ্দ করলো। আওয়ামী লীগ সব সময় বলে নির্বাচন কমিশন যা করে তাই আমরা মেনে নিব, বাধা সৃষ্টি করব না। এখন কেন আওয়ামী লীগ ইসির কাজে পদে পদে বাধা সৃষ্টি করছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আদালত ১২/১৪ জন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করেছে। এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এসব আসনের নির্বাচন স্থগিত রেখে আবার নির্বাচনের দাবি করছি। অথবা এসব আসনে আমাদের প্রার্থী পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হোক। নির্বাচন কমিশন প্রার্থিতা বৈধতা দেওয়ার কারণেই তাদের আমরা মনোনীত করেছি। কমিশন যদি সেই সময় অবৈধ ঘোষণা করতো আমরা অন্য প্রার্থী দিতাম।’
সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি, হামলা, ধড়পাকড়, মামলা অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একদিকে আদালত পরিকল্পিতভাবে আদালক কর্তৃক প্রার্থিতা অবৈধ ঘোষণা করা হচ্ছে, অন্যদিকে বৈধ প্রার্থীদের হয়রানি করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বরিশাল-৪ আসনের বিএনপির প্রার্থী শিরিন আক্তারকে গতকাল মারধর করে পা ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। বরিশাল হাসপাতলে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আজ শনিবার পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। সেখানে তাকে দেখতে যাওয়া ৮/১০ নেতাকর্মীদের পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে। এছাড়া নরসিংদীর মনোহরদির আসনের বিএনপি প্রার্থী সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল নির্বাচন প্রচারণায় আজ দুপুরে আওয়ামী লীগে লোকজনের হামলায় অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছে। পুলিশি উপস্থিতে সেখানে হামলা হলেও হামলাকারীদের গ্রেফতার না করে বরং বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেছে। নরসিংদীর-৩ আসনের মনজুর এলাহীর মিছিলেও আওয়ামী লীগ হামলা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী লুনা নির্বাচন করার আগে চাকরি ছেড়ে দিলেও তার মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু একই নির্বাচনি এলাকায় একজন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ পদত্যাগ না করার পরও মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা-১৭ এর গুলশান এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী অভিনেতা ফারুক (আকরব হোসেন পাঠান) ঋণখেলাপি হলেও তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়নি।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘গণতন্ত্র আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জিত অধিকার। আর গণতন্ত্রের বাহন হল নির্বাচন। সেই নির্বাচন যদি এভাবে প্রহসনে পরিণত হয়, হাস্যকর করা হয়। তাহলে এর দায়দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে বহন করতে হবে। নির্বাচনকালে ইসি অসীম ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু তারা কেন সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করছে না, নিশ্চয় জনগণ সেটা জানতে চাইবে। আমরা সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করছি আমাদের নির্বাচনি প্রচারণা চালাতে দেওয়া হোক। কারণ এটা আমাদের মৌলিক অধিকার।’
বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সরকার তাদের দেশে আসতে বাধা দিচ্ছে। তাদের ভিসা না দিলে তারা কীভাবে আসবেন। কারণ সরকার নির্বাচনের নামে যে কাজটি করতে চাচ্ছে সেটি হল চুরি-চামারি। আর কাজে বাধা হতে পারে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। এ কারণেই তারা বিদেশি পর্যবেক্ষক আসতে দিচ্ছে চাচ্ছে না।’