শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৩ অপরাহ্ন
আকতার ফারুক শাহিন : করোনা সংক্রমণ পরীক্ষায় দেশের অন্যান্য বিভাগীয় সদরগুলোতে টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপনের সিদ্ধান্ত হলেও বাদ পড়েছে বরিশাল। শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতাল ক্যাম্পাসের যে নতুন ভবনে করোনা ইউনিট খোলা হয়েছে সেখানে নেই আইসিইউ, অক্সিজেন বা ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা। করোনা মোকাবেলায় ১৫০টি বেড প্রস্তুত থাকার কথা বলা হলেও বাস্তবে আছে ২০টি। আসেনি করোনা টেস্টিং কিট। করোনা সন্দেহে ভর্তি রোগীদের পরীক্ষা হচ্ছে না ৫/৬ দিনেও। সর্বোপরি এই হাসপাতালে ডাক্তার-নার্সসহ প্রায় ১ হাজার ৭০০ জনবল থাকলেও ‘পিপিই’ পাওয়া গেছে ১ হাজার। নিয়মানুযায়ী করোনা ইউনিটে দায়িত্ব পালন প্রশ্নে একটি পিপিই কেবল একবারই ব্যবহার করা যাবে। সব মিলিয়ে ১ হাজার পিপিই ছাড়া করোনা রোগীদের চিকিৎসা প্রশ্নে আর কিছুই নেই বরিশালে। চলমান পরিস্থিতিতে খোদ চিকিৎসকরাই শঙ্কায় আছেন। হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, আইসিইউ বেড স্থাপনসহ সব প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। তবে সেই প্রস্তুতি নিতে কত দিন লাগবে তা বলতে পারছে না কেউ।
চীনে করোনাভাইরাসের প্রকোপ এবং তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বরিশালে এই রোগে সম্ভাব্য আক্রান্তদের চিকিৎসায় নানা প্রস্তুতির কথা বলতে থাকে স্বাস্থ্য বিভাগসহ শেবাচিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সত্যিকার অর্থে প্রস্তুতি বলতে কিছুই নেই। বলা হয়েছিল, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল ক্যাম্পাসে নতুন ভবনে দেড়শ’ বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ওই ইউনিটে প্রস্তুত মাত্র ২০টি বেড। তাও আবার আইসিইউ, অক্সিজেন এবং ভেন্টিলেশন ছাড়াই। জরুরি ব্যবহারের জন্য কিছু অক্সিজেনের বোতল রাখা হলেও পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে চাহিদার কিছুই পূরণ হবে না বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। এই হাসপাতালে ডাক্তার এবং কর্মচারী মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ৭০০ জনবল থাকলেও ঢাকা থেকে পিপিই এসেছে মাত্র ১ হাজার। এরমধ্যে ৪০০ স্টকে রেখে ডাক্তারদের মধ্যে ২০০, নার্সদের মধ্যে ২০০’ এবং তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে ২০০ পিপিই সরবরাহ করেছে কর্তৃপক্ষ। একটি সূত্র জানায়, এখানে ডাক্তার ও ইন্টার্নি ডাক্তার মিলিয়ে ৪৮০ জন চিকিৎসক রয়েছেন। সেখানে ডাক্তারদের জন্য পিপিই দেয়া হয়েছে মাত্র ২০০। শেবাচিম হাসপাতালের ইনডোর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সুদীপ কুমার হালদার বলেন, এটা ঠিক যে আমাদের জন্য ২০০ পিপিই দেয়া হয়েছে, আর ইন্টার্নি মিলিয়ে এখানে চিকিৎসকের সংখ্যা ৪৮০। তবে আমরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে পিপিই সংগ্রহের চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে ৩০০ পিপিইর অর্ডার দিয়েছি। ২/১ দিনের মধ্যে সেগুলো চলে আসবে। তবে সরকারিভাবে আরও পিপিই দেয়া না হলে পরিস্থিতি মোকাবেলা কঠিন হয়ে পড়বে।
২০ মার্চ স্বাস্থ্য সচিব বরাবর এক চিঠিতে অন্যান্য বিভাগীয় সদরের পাশাপাশি বরিশালেও করোনা টেস্টিং ল্যাব স্থাপনের অনুরোধ জানিয়েছেন বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. অজিয়ার রহমান। একই ভাবে যৌথ স্বাক্ষরে চিঠি দিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস, শেবাচিম হাসপাতাল পরিচালক ডা. বাকির হোসেন এবং শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় অধ্যক্ষ ডা. অসীত ভূষন। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে এখানে টেস্টিং ল্যাব স্থাপনের আশ্বাস দিয়েছেন বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম। তবে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। জেলা প্রশাসক অজিয়ার রহমান বলেন, বরিশালকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাদ দেয়া হয়েছে ভাবলে ভুল হবে। আসল সমস্যা হচ্ছে এখানে টেস্টিং ল্যাব স্থাপনের স্ট্রাকচারই নেই। যে কারণে প্রথম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে বরিশাল। তবে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আশা করছি যে খুব শিগগিরই এই কাজ শুরু হবে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার বলেন, আমরা জায়গা দেয়াসহ সবকিছুর জন্য প্রস্তুত রয়েছি। তারাও মোটামুটি রাজি হয়েছেন। আশা করি শিগগিরই টেস্টিং ল্যাব পাব। আরেক প্রশ্নের জবাবে ডা. বাসুদেব কুমার বলেন, বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রের জন্য মোট ২ হাজার ১০৪টি পিপিই এসেছে। সেগুলো বিতরণ করা হয়েছে।
শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, ‘আপাতত করোনা ইউনিটে যে ৫ জন ভর্তি রয়েছে তারা সন্দেহভাজন রোগী। এদের ড্রপলেট ঢাকায় আইইডিসিয়ারে পাঠানো হয়েছে। আমরা ২০টি বেড প্রস্তুত করেছি এটা ঠিক। তবে আরও ১০০ বেড স্থাপনের যাবতীয় সামগ্রী আমাদের কাছে রয়েছে। প্রয়োজনে দ্রুত এসব বেড তৈরি করে ফেলতে পারব।’ আপাতত হাসপাতালের মূল ভবনে যে আইসিইউ ইউনিট আছে সেখানেই আইসোলেটেড করে করোনা রোগীদের জন্য দুটি বেড করছি। প্রয়োজনে আরও ৮টি বেড করার মতো প্রস্তুতি রয়েছে।
সূত্র: যুগান্তর