বুধবার, ০৯ Jul ২০২৫, ০৪:৫৮ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
কলাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক নেতৃবৃন্দের সাথে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতার মতবিনিময় মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে… এবিএম মোশাররফ হোসেন পটুয়াখালীতে জনজীবন বিপর্যস্ত, উপকূল জুড়ে অতিভারী মাত্রায় বৃষ্টিপাত লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলে অতিভারী বৃষ্টিপাত। সমুদ্র বন্দরে ০৩ নম্বর ও নদী বন্দরে ০১ নম্বর সতর্ক সংকেত কলাপাড়ায় ৫ হাজার প্যাকেট নকল সিগারেট জব্দ।।১লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড সভাপতি টিপু সম্পাদক অমল কলাপাড়া প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন কলাপাড়ায় বিএনপির দিনব্যাপী সাংগঠনিক সভা সৎ এবং সুশিক্ষিত নেতৃত্বের মাধ্যমেই শিক্ষার উন্নয়ন সম্ভব….এবিএম মোশাররফ হোসেন সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উপকূলে বৃষ্টিপাত, পায়রা বন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত বহাল কলাপাড়ায় ফল উৎসব, কৃষক বাজার  ও শিশু পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন কলাপাড়ায় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সুমনের সদস্য সচিব পদ স্থগিত করার প্রতিবাদে মানববন্ধন চাঁদাবাজ দখলবাজ এবং দুর্নীতিবাজ মুক্ত মেহেন্দিগঞ্জ গড়তে চাই ।। মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ বিসিসি’র ২২নম্বর ওয়ার্ডের সড়ক ও ড্রেনেজ নির্মাণের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান বাউফ‌লে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এক যুবককে কুপিয়ে হ-ত্যা চাঁদাবাজ দখলবাজদের বিরুদ্ধে লিখনি বজায় রাখবে বাংলানিউজ – মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ
নির্যাতিত হয়ে ৮ মাসে সৌদি থেকে ফিরেছেন ৯ শতাধিক নারী

নির্যাতিত হয়ে ৮ মাসে সৌদি থেকে ফিরেছেন ৯ শতাধিক নারী

Sharing is caring!

গত আট মাসে (জানুয়ারি থেকে আগস্ট) সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে এসেছেন ৯ শতাধিক নারী কর্মী। শারীরিক নির্যাতন, থাকার-খাওয়া এবং বেতন না পাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে দেশে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। কিন্তু নির্যাতিত এসব নারীরা বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করলেও তারা তা আমলে নেয়নি। ফলে প্রতি মাসেই নির্যাতিত হয়ে দেশে ফেরা নারীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন, লেবাননসহ বিশ্বের ১৮টি দেশে গৃহকর্মী হিসেবে যাচ্ছেন বাংলাদেশি নারীরা। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে প্রতি মাসেই নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরছেন। দেশটির বাসা বাড়িতেই শুধু নয়, পরে তাদের দেশটির মক্তবে নিয়ে যাওয়া হলেও সেখানেও তারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন বলে অভিযোগ করেন। দীর্ঘদিন দূতাবাসের সেফহোম রাখার পর তারপর নারীদের দেশে পাঠানো হয়। সেই সেফহোমও তাদের কাছে অনেক সময় নিরাপদ হয়ে উঠে না। যার প্রমাণও মিলেছে বিভিন্ন সময়।

সোমবার (০৯ সেপ্টেম্বর) প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নারী কর্মীরা বিদেশে গিয়ে কাজ পাচ্ছেন ঠিকই কিন্তু কাজের পরিবেশ পাচ্ছেন না। কাজ করতে গিয়ে অনেকে যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু সেই অমানবিক নির্যাতনের গল্প দেশে আসলে অনেকে মুখ ফুটে বলতে পারছেন না। প্রতি মাসে সেখানকার বাসা বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে অনেক নারী নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে ফিরছেন। তারা দেশে ফিরে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করলেও তেমন আমলে নেয় না মন্ত্রণালয়। তারা বলেন, মেয়েরা সেখানে থাকতে না পেরে দেশে ফেরার জন্য এসব অভিযোগ করে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাস কল্যাণ ডেস্ক থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত আট মাসের পরিসংখ্যান বলছে, গত জানুয়ারি থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মোট ২৫ হাজার ২৯৩ জন কর্মী দেশে ফিরেছে। এর মধ্যে নারী কর্মী রয়েছে ৯৩২ জন। যার বেশির ভাগ সৌদি আরব থেকে নির্যাতনসহ নানা কারণে ফেরত এসেছে। 

বেসরকারি সাহায্য সংস্থা ব্র্যাকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গত দেড় বছরে সৌদি আরব থেকে প্রায় ২ হাজার নারী কর্মী দেশে চলে আসে নির্যাতনসহ নানা কারণে। এদের সবাইকেই আমরা সহায়তা দিয়েছি। গত সাড়ে তিন বছরে ৮ থেকে ৯ হাজার নারী কর্মী দেশে ফিরেছেন। এরমধ্যে ৬ থেকে ৭ হাজার ফিরেছেন সৌদি আরব থেকে। এবছর গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৯০০ নারী কর্মী দেশে ফেরত এসেছে। এদের সবাই সৌদি আরব থেকে ফিরেছে। 

গত আট মাসে দেশে ফেরা নারীর কর্মীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেরত আসা নারী কর্মীদের অনেক পরিবার তাদের গ্রহণ করছে না। আবার অনেকের মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে গেছে। তাদের অনেকে এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। এসব নারীদের পেছনে চিকিৎসা করতে গিয়েও পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। মূলত ফেরত আসা নারী কর্মীদের একটা বড় অংশ চলে আসেন বেতন ভাতা এবং ঠিকমতো খাবার খেতে দেওয়া হয় না বলে। একইসঙ্গে শারীরিক নির্যাতনের বিষয়টি তো রয়েছেই। কেউ বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আবার কেউ বেতন চাইতে গিয়ে নির্যাতিত হয়েছে। এসব অভিযোগ নিয়ে দেশটির মক্তবে (রিক্রুটিং এজেন্সির অফিস) গেলেও কোনো প্রতিকার পায় নি। উল্টো তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। আবার কখনো পুলিশের হাতে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।

তারা আরও জানান, কেউ নির্যাতনের শিকার হয়ে যখন সেফহোমে আশ্রয় নিচ্ছেন ঠিক তখনই আবার কাজ করতে গিয়ে অনেককে জেলখানায় থাকতে হচ্ছে। তাও আবার বিনা অপরাধে। বাসার মালিকের কথা না শুনলেই মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে দেশটির পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পান থেকে চুন খসলেই মারধর করা হয়। কথা না শুনলেই পরে পাঠানো হয় মক্তবে। আর সেখানেও চলে পাশবিক নির্যাতন।

সৌদি ফেরত গৃহকর্মী হাজেরা বেগম বলেন, কাজ করসি সাত মাস কিন্তু বেতন সব রাইখ্যা দিসে। বাসা বাড়িতে কাজ করতাম ঠিকই কিন্তু কাজ শেষে খাবার দিতো না। যদিও দিতো খাবার হিসেবে পাইতাম একটা রুটি আর পানি। মাস শেষে বেতন দেওয়া হইতো না। বেতনের কথা কইলে মালিকের বউ আমারে মারতো। আমি আরবি ভাষায় তাদের কাছে কইতাম আমার বাড়িতে টাকা পাঠাইতে হইবো। কিন্তু কেউ শুনতো না, খালি মারতো।

দেশে দরকার হলে ভিক্ষা করবেন হাজেরা বেগম। কিন্তু কখনো আর সৌদি আরব যাবেন না। তাদের নির্যাতনের কথা জানিয়ে তা অন্যের কাছে তুলে ধরার তারা অনুরোধ করেন। সেই সঙ্গে তারা সরকারকে সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মী না পাঠানোর অনুরোধও করেন।

এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রনক জাহান বলেন, এ পর্যন্ত কতজন নারী দেশে ফেরত এসেছে তার সঠিক  পরিসংখ্যান দেওয়া সম্ভব না। তারা নানা কারণে দেশে ফেরত আসে। এর কারণ শুধু নির্যাতন নয়। অনেক নারী কর্মীরা বিদেশে যাওয়ার পর দেশে রেখে যাওয়া স্বামী, সন্তান, বাবা-মার জন্য টান অনুভব করার কারণে চলে আসে। আরও একটা বিষয় কাজ করে সেটা হলো নারী কর্মীরা যেসব দেশে যায় সে সব দেশ সম্পর্কে ভালো জ্ঞান না থাকায় পরিবেশ ও ভাষার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না। সেজন্য আমরা এখন সংখ্যার দিকে না দেখে দক্ষতাকে প্রাধান্য দিচ্ছি। এর ফলে আমাদের কর্মী পাঠানোর সংখ্যা কমেছে। ভবিষ্যতে ফেরত আসার হারও কমে আসবে।

‘বিদেশে যে  নির্যাতনের শিকার হয় না সেটা বলবো না। তবে এর হার পত্র পত্রিকায় যেভাবে আসে ততোটা না। মানবাধিকার বলে একটা বিষয় রয়েছে। যারা আমাদের দেশ থেকে অভিবাসী হচ্ছে সেই সব নারীদের এক টাকাও খরচ করতে হয় না। যারা নিচ্ছে তারা নিজেরা বিনিয়োগ করে নিচ্ছে। তাদেরও একটা দায়িত্ব ও জবাবদিহিতার  জায়গা রয়েছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে সরকারসহ আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি ফেরত আসা বন্ধে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলমান।’ এছাড়া দেশে ফিরে যারা অভিযোগ করছেন তাদের প্রত্যেকটি অভিযোগই যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, শারীরিক নির্যাতন, বেতন না পাওয়া, পরিমাণ মতো খাবার না পাওয়া এবং সে দেশের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারা এ চারটি কারণে নারী কর্মীরা ফেরত আসছেন। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) আওতায় ব্র্যাক ফেরত আসা নারী কর্মীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করছে। আমরা ফেরত আসা নারীদের বিমানবন্দরে খাবার দেওয়া, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা, কাউন্সিলিং করা এবং পরিবারের লোকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে থাকি। এছাড়াও যারা সৌদি আরবের মতো বিভিন্ন দেশে আছেন তাদের উদ্ধার করে দেশে আনারও ব্যবস্থা করছি। কিন্তু পুনর্বাসনের কাজটি একা করা সম্ভব নয়। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সমন্বিতভাবে কাজ করলে সহজে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত অভিবাসী নারীর সংখ্যা ছিল ৬৮ হাজার ৯৮৩ জন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি নারী কর্মী গেছে সৌদি আরবে। দেশটিতে গত আট মাসে ৪৪ হাজার ২ জন নারী কর্মী গেছে। এরপর রয়েছে জর্ডান সেখানে গেছে ১১ হাজার ৫৭ জন। এরপর ওমান। সেখানে গেছে ৭ হাজার ২৫৩ জন। কাতারে ২ হাজার ৩২৮, সংযুক্ত আরব আমিরাতে এক হাজার ৫৮৭ জন। এরপর লেবাননে গত আট মাসে নারী কর্মী গেছেন এক হাজর ৩৪ জন। 

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD