স্টাফ রিপোর্টার ঃ
বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১১ নং ওয়ার্ড চাঁদমারী মাদ্রাসা সড়ক সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু কলোনিতে অপরাধের স্বর্গরাজ্যে গড়ে তোলার অভিযোগে স্থানীয় মোঃ আলামিন হাওলাদার (৩১) ও তার ভাই রুহুল আমিন (৩৭) ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে সংবাদ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
(১৯ আগষ্ট) দুপুর পৌনে ১ টায় বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি (বিআরইউ) কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্টিত হয়। এলাকাবাসীর পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন ওই এলাকার বাসিন্দা মোঃ সোহরাব পালোয়ান, বাহাদুর হাওলাদার, রাজ্জাক হাওলাদার ও শহিদ খান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন এলাকার প্রায় অর্ধশত মানুষ। লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন সোহরাব পালোয়ানের ছেলে রুবেল পালোয়ান। তিনি বলেন, এ সব অপরাধীদের বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে রয়েছে এক ডজন মামলা।
বর্তমানেও আলআমিন বাহিনীর জোর পূর্বক সোহরার পালোয়ানের ৪টি দোকান দখল করে রেখেছে।
আলামিন ও তার ভাইর নেতৃত্বে এলাকায় রয়েছে প্রায় দুই ডজন সন্ত্রাসীসহ একটি কিশোর গ্যাং। স্থানীয় আ.লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় এ বাহিনী স্টেডিয়ামে চুরি (রড, বেসিন, টিন, কেসি গেট ও দেয়ালের এঙ্গেল), ডাকাতি, মাদক কেনা বেচা, এলাকার অধিকাংশ কার্যক্রমে চাঁদাবাজি, কলোনির বেড়ি বাঁধ এলাকার অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে প্রায় শতাধিক বসতঘর ও দোকান প্রতি মাসে ৫শ থেকে ১ হাজার টাকা উত্তোলন করছে আলামিন গ্যাং। চাঁদমারী ওজোপাডিকোর গাড়ি চালক জজনের ভাই আলামিন হওয়ায় অফিস কর্তৃপক্ষ নিরব।
আলামিনের অপকর্মের অপরাধী ও সহযোগিরা হলেন একাধিক মাদক মামলার আসামী মোঃ শাহাদাত হোসেন বাপ্পী (৩০) ও তার ভাই রাজী (২৮), মোঃ রাকিব জোমাদ্দার (২৮), মোঃ ইউনুছ (৩২) , ইমরান (৩২), সুমি বেগম (২৮), রুমা বেগম (৪০), নাজমা বেগম (৩৫), লিলি বেগম (৪৫), রাব্বী (২২), রাকিব (৩০), লিটু ওরফে এস.এস লিটু (৪২), সোহাগ ওরফে এমপি সোহাগ (৩২) সহ অজ্ঞাতনামা আরো প্রায় ১২ জন। এছাড়া আলামিন ও তার ভাই রুহুল আমিনের কিশোর গ্যাং এর তালিকায় রয়েছে জনি, রাসেল, রাকিব, হৃদয়, আজিজুল, লিটুসহ প্রায় এলাকার এক ডজন কিশোর। কলোনিতে কেউ বসতঘর দোকান উত্তোলন বা সংস্কার করতে গেলেই আলামিন বাহিনী চাঁদা দাবি করে।
টাকা না দিলে নানা অত্যাচার শুরু করে। এলাকার আশেপাশে সরকারি-বেসরকারি মালামাল চুরিসহ প্রতিদিন সন্ধ্যার পর মাদক ক্রয়-বিক্রয়সহ কীর্তন খোলা নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় সেবনের আড্ডা বসে। এ সব অপরাধের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আলামিন ও তার ভাই রুহুল আমিনের অত্যাচারে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে অনেক নিরীহ মানুষ।
যেমন- ইউসুর বয়াতি, সোহরাব পালোয়ান, রাজ্জাক হাওলাদারসহ একাধিক পরিবার। ১০ বছর পূর্বে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে গিয়ে আলামিন ও তার ভাই রুহুল আমিন বগি না দিয়ে প্রতিবাদকারী মোঃ বাহাদুর হাওলাদারের ডন চোখে আঘাত করে। পরে চোখের চিকিৎসার জন্য বাহাদুরের পরিবাবের এ পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
অপরাধীদের বিরুদ্ধে কেউ মামলা দিলে তাদেরকে থানা ও আদালতে আসা-যাবার পথেসহ বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেয় আলামিন বাহিনী। যে কারণে অনেকেই নির্যাতনের শিকার হয়েও মামলা দেয়নি। সংবাদ সম্মেলন করার কারণ সম্পর্কে বলেন, সঠিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ করে জাতির সামনে তুলে ধরুন। যাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাসহ নানা দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আসে। যাতে বঙ্গবন্ধু কলোনি বাসিন্দাদের মধ্যে শান্তি ফিরে আসে।
উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে বঙ্গবন্ধু কলোনির বাসিন্দারা নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরেন। প্রমাণ হিসেবে তারা আলামিনসহ তার বাহিনীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত একডজন মামলার বর্ণনা তুলে ধরেন।
যেমন- ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর চাঁদমারী মাহাতার স্টোরের সামনে বসে নগর সিটিএসবি এএসআই কাজী কামরুজ্জামান তথ্য সংগ্রহকালে তাকে কুপিয়ে জখম করে আলামিনসহ নামধারী ১৮ জন ও অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জন।
এ ঘটনায় পরদিন ৯ সেপ্টেম্বর বরিশাল ষ্টীমারঘাট পুলিশ ফাড়ির উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আবুল বাসার কোতয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ২০২২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চাঁদমারী কিসেন্ট স্ব-মিলে রাত ৮টায় চুরি ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগ এনে ব্যাপিষ্ট মিশন এলাকার বাসিন্দা মোসাঃ মজিরণ বেগম বাদী হয়ে ৬ জনকে আসামী করে বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ২০২৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর শ্লীলতাহানী, চুরি ও ভয়ভীতির হুমকি দেয়ার অভিযোগ এনে মনি বেগম বাদী হয়ে বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানায় আলামিনকে প্রধান আসামী করে নামধারী ১১ সহ অজ্ঞাতনামা ৫/৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কুপিয়ে জখম করার অভিযোগে ব্যাপিষ্ট মিশন এলাকার বাসিন্দা জলিল আকন বাদী হয়ে বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানায় আলামিনকে প্রধান আসামী করে নামধারী ১১ সহ অজ্ঞাতনামা ১০/১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর মোঃ সোহরাব পালোয়ান বাদী হয়ে বরিশাল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আলামিনকে প্রধান আসামী করে নামধারী ৯ ও অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কুপিয়ে জখম করার অভিযোগে ফরিদা বেগম বাদী হয়ে আলমিনকে প্রধান আসামী করে নামধারী ১১ সহ অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এর এসআই মোঃ রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে কাউনিয়া থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মোঃ শাহাদাৎ হোসেন বাপ্পী কে আসামি করে একটি মামল দায়ের করেন। ২০২০ সালের ২১ আগষ্ট নগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মোঃ দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে বরিশাল কোতয়ালী থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মোঃ শাহাদাৎ হোসেন বাপ্পীসহ ২ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। ২০২১ সালের ১৯ মার্চ নগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মোঃ লোকমান বাদী হয়ে বরিশাল কোতয়ালী থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মোঃ শাহাদাৎ হোসেন বাপ্পী কেসহ ২ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
২০২১ সালের ১৩ অক্টেবর মাদকদ্রব নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক খোন্দকার জাফর আহম্মেদ বাদী হয়ে বারিশাল কোতয়ালী থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মোঃ শাহাদাৎ হোসেন বাপ্পী কে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। ২০২৪ সালের ২৬ মে বরিশাল ষ্টীমারঘাট ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জ এসআই মোঃ সাইদুর রহমান বাদী হয়ে বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মোঃ শাহাদাৎ হোসেন বাপ্পী কে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।