রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৭ পূর্বাহ্ন
কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি \ পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পরকীয়ার অপবাদে হযরত আলী (৪৩) নামের এক আওয়ামীলীগ নেতাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছে দুর্বৃত্তরা। বর্তমানে ওই নেতা ভাঙা হাত ও যন্ত্রনাকাতর শরীর নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন। এঘটনায় গত ১৯ জুন তিনি নিজে বাদী হয়ে ৭ জন সহ অজ্ঞাতনামা আরও ১২ জনের নামে কলাপাড়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। হযরত আলী মহিপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতির পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, হযরত আলী দীর্ঘদিন ধরে ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের শাহ জামালের সঙ্গে বর্গাভাগী গরুর ব্যবসা করেন। গত ১৭ জুন সোমবার ঈদের দিন রাত দশটায় তিনি জামালের বাড়ি থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে নিজ বাড়ি মহিপুরের সুধীরপুর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। এসময় তার সঙ্গে ফুফাতো ভাই ইয়াকুব ও মোটরসাইকেল চালক ছিলো। তারা ডালবুগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন এলাকায় পৌছলে মোটরসাইকেলের গতি রোধ করে তাকে এবং সঙ্গে থাকা অপর দুই জনের হাত, পা ও মুখ বেঁধে পাশ্ববর্তী বিলের মধ্যে নিয়ে যায় ১৫ থেকে ২০ জন ব্যক্তি। পরে তাকে ওই এলাকার মাসুম, মামুন খলিফা, সবুর, বশার, এখলাছ, মোহায়মিন ও সুধীরপুর গ্রামের মামুন হাওলাদার মারধর করেন। এক পর্যায়ে তাকে উলঙ্গ করে রড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন। এসময় শাহ জামালের মেয়ের সঙ্গে পরকীয়রা আছে বলে জোরপূর্বক স্বীকার করায় এবং উলঙ্গ অবস্থায় তা মোবাইলে ভিডিও করে রাখে। রাত আড়াইটার দিকে একটি মোটরসাইকেল ডেকে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বর্তমানে আরও দেড় লাখ টাকা চাঁদা দাবী করছে হামলাকারীরা। পরকীয়ার বিষয়টি সম্পূর্ন মিথ্যা বলে দাবি করছে শাহ জামাল ও তার মেয়ে।
হাসপাতালের বিছানায় কাঁদো কাঁদো কন্ঠে হযরত আলী জানান, আমার সঙ্গে শাহ জামাল ভাইয়ের গরুর ব্যবসা নিয়ে সম্পর্ক। এছাড়া অন্য কোন সম্পর্ক নেই। ওরা আমাকে উলঙ্গ করে স্পর্শকাতর স্থানেও মারধর করেছে। রাতভর রড দিয়ে পিটাইছে। মারধরের অসহ্য যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে ওরা ভিডিও করার সময় যা বলতে বলেছে আমি তাই বলেছি। আমার সঙ্গে থাকা ফুফাতো ভাই ইয়াকুবকেও মারধর করেছে ও সাড়ে তিন লাখ টাকা নিয়া গেছে। সুধীরপুর গ্রামের মামুন হাওলাদেরর নেতৃত্বেই আমাকে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। আমি ছোট থেকেই আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই।
এ বিষয়ে জানতে শাহ জামালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার যে মেয়ের কথা বলা হয়েছে তার তিন সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে আমার বড় নাতনী বিয়ের উপযুক্ত। সুধীরপুর গ্রামের মামুন হাওলাদারের সঙ্গে হযরত আলীর পুরনো বিরোধ আছে। এঘটনায় আমাদের এলাকার কিছু বখাটে ছেলেদের নিয়ে তাকে রাতভর পাশবিক নির্যাতন চালায়। হযরত আলীকে ঈদের রাতে আমিই দাওয়াত দিয়েছিলাম এবং গরুর টাকা নিয়ে যেতে বলেছি। আমার মেয়ের বিরুদ্ধে যে অপবাদ আনা হয়েছে আমি এর কঠোর বিচার দাবি করছি।
এ বিষয়ে প্রধান অভিযুক্ত মামুন হাওলাদার জানান, এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোন সম্পৃক্তা নেই। এছাড়া অন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মহিপুর থানার ওসি আনোয়ার তালুকদার জানান, মামলার কপি হাতে পেয়েছি। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হইবে।