শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৪ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি: পটুয়াখালী পৌর নিউমার্কেটে কিচেন মার্কেট নির্মাণ ও বরাদ্দ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ এর বিরুদ্ধে। এবিষয়ে চারিদিকে চলছে তোলপাড়। উক্ত স্টল মালিক কারা এনিয়ে সংবাদকর্মীরা তথ্য জানতে বরাদ্দকৃত স্টল মালিকদের কাছে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মীদের গালাগালি ও মামলার হুমকি দিয়েছেন বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ এর ভাই কমলাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেন মৃধা।
এসময় তিনি অনলাইন ভিত্তিক গণমাধ্যম বাংলা ইনসাইডার ও জাতীয় দৈনিক ঢাকার সাংবাদিক রাকিবুল ইসলাম তনুকে বলেন, “মোবাইলে কিসের বক্তব্য দিমু আপনি আসেন। ব্লাকমেইল করতাছেন? সামনাসামনি আসেন। এ ব্যাডা আমি মনির চ্যেয়ারম্যান, তুই আমার সামনে আয়। তুই আমারে লইয়া বহুত কাউর করতেছো। আমিও তোমারে লইয়া কাউর করমু। এছাড়াও বিডি২৪ লাইভ ও প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার আরেক গনমাধ্যম কর্মী স্বপ্নীল দাসকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
তিনি সাংবাদিকে স্বপ্নীলকে বলেন, “এই সাক্ষাৎকার নেয়ার দরকার কি আপনের? ভূয়া সাংবাদিকতা বাদ দেন এসব। সামনা সামনি হন, এসব মোবাইল ঠোবাইল বাদ দেন। আমি মনির চেয়ারম্যান, আমার সামনা সামনি আন মেয়া। আপনে চের বা মেয়া। সামনা সামনি আন। ফাইজলামি , ওইহানে বইয়া স্বপ্নীল চো*” গনমাধ্যম কর্মীদের গালাগালি করার কারন জানতে মনিঈরের সাথে জাতীয় দৈনিক গণজাগরণ সাংবাদিক অপূর্ব সরকার যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “আমি এই বিষয়ে আপনাদের কাছে জবাবদিহি কেন করবো। আপনাদের চাকরি করি না আমি।
আমি ওর (সাংবাদিক তনুর) নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করমু” স্টল বরাদ্দের বিষয়ে তুলনা স্টোরের প্রোপাইটার মনির চ্যেয়ারম্যানের স্ত্রীর লিমার বক্তব্যের জন্য তার সাথে যোগাযোগ করেন সাংবাদিক নয়ন মৃধা। আবারো ফোনটি রিসিভ করেন ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেন। এসময় তিনি বলেন, “এখন পটুয়াখালী পৌরসভা নির্বাচন চলে। এই মুহুর্তে স্টল নিয়ে এতো কথা বলছেন কেন!” এবিষয়ে তুলনা স্টোরের প্রোপাইটার লিমা রহমান জানান, চরপাড়া আমার ঘর ভাঙ্গা হয়েছে আর সে কারনেই নিউমার্কেটের কিচেন মার্কেটে স্টল পাই।
মূলত এই লিমা রহমান পটুয়াখালীর চরপাড়ায় সরকারি জমি দখল করে ঘড় উঠিয়ে ভাড়া দিতেন। নদী দখল মুক্ত করার অভিযানে ভেঙ্গে ফেলা হয় সেই ঘড়। তবে সেই ঘড়ের ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিনি কিচেন মার্কেটে স্টল বরাদ্দ পেলেও ওই একই সরকারি জায়গাতে ঝুঁপড়ি ঘড়ে থাকা ছিন্নমূল ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের মাথা গোঁজার কোন ব্যাবস্থাই করেননি পৌর মেয়র মহিউদ্দিন। আত্মিয়দের নামে একাধিক স্টল বরাদ্দের বিষয়ে পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, পটুয়াখালী পৌরসভা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নিউমার্কেটের কিচেন মার্কেট নির্মান করা হয়েছে। তবে এখনও শেষ হয়নি।
ভাইয়ের ছেলে আবিদের নামে কোন স্টল বরাদ্ধ নাই। তাছাড়া আবিদ মানসিক প্রতিবন্ধী তার কথা কতটুকু কাউন্টাবল? পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি। এছাড়া কাউন্সিলর ও যুবলীগ সভাপতির স্ত্রীর ও তার চাচাত ভাইয়ের স্ত্রীর নামে বরাদ্দকৃত স্টলের ব্যপারে তিনি কোন সদত্তর দিতে পারেননি। উল্লেখ্য, পটুয়াখালী পৌর নিউমার্কেটে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে মেয়র মহিউদ্দিন ও তার বন্ধু বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান শহরের পৌর নিউমার্কেট বাজারে কিচেন মার্কেট করার ঘোষনা দেয়। এরপরে পৌরসভার পক্ষ থেকে নিউমার্কেটের ব্যাবসায়ীদের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর করার জন্য দফায় দফায় বৈঠক করা হয়। তবে স্থান দ্রুত পরিবর্তন করাটা ব্যাবসায়ীদের জন্য সহজ ছিল না।
তবে নিউমার্কেটের ব্যাবসায়ীদের সাথে পৌর কর্তৃপক্ষের আলোচনার একমাস শেষ হতে না হতেই হঠাৎ করেই ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে যায় নিউমার্কেটের মুদিমনোহরি, কসমেটিক, চালের আরদ সহ প্রায় শতাধিক ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান। ভস্মিভূত হয়ে যায় অনেক পরিবারে স্বপ্ন। অনেকেই হাড়িয়ে ফেলেন তাদের শেষ সম্বলটুকু। এই ঘটনার কিছুদিন পরেই সেই স্থানে নির্মান কাজ শুরু হয় বহুতল ভবনের। আধুনিক মার্কেটের নামে মানুষের ভাঙ্গা স্বপ্ন দিয়ে গড়ে ওঠা সেই চারতলা মার্কেটের অল্প কিছু নির্মান কাজ শেষ করেই শুরু হয় স্টল বরাদ্দের কাজ।
পাঁচ হাজার টাকার অফেরৎ যোগ্য মূল্যে ছাড়া হয় ফর্ম। এই ফর্ম থেকে লটারির মাধ্যমে নির্ধারিত হবে স্টল। তবে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মার্কেটের প্রথম সারির স্টল দেয়া হবে লটারি ব্যাতিত তৎকালীন সময়ে এমন কথা দেন পৌর মেয়র। তবে মার্কেটের অনেকগুলো স্টল ভৌতিকভাবে বরাদ্দ পায় বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদের আত্মীয়-স্বজনরা।
যার মধ্যে রয়েছে তার আপন বড় ভাইয়ের ছেলে আদনান শাহরিয়ার আবিদ, মেয়রের চাচাতো ভাই পটুয়াখালী সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কমলাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ মনির হোসেন মৃধার স্ত্রী লিমা রহমান সহ আরো অনেকে। এ বিষয়ে জানতে মেয়রের চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রীর নামের বরাদ্দকৃত পৌর নিউমার্কেটের কিচেন মার্কেটের নিচ তলার ১০৪ নাম্বার তুলনা স্টোর্স নামের স্টলের প্রোপাইটরের ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করলে ফোনটি রিসিভ করেন লিমা রহমানের স্বামী কমলাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মনির। এসময় স্টলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বাজে ভাষায় গালমন্দ শুরু করেন। এছাড়াও তিনি সাংবাদিকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেয়ার হুমকি দেন। বিগত দিনে মনির মৃধা গরিবের চাল চুরি করে জেল হাজতে ছিলো।