শুক্রবার, ০৮ অগাস্ট ২০২৫, ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন
ক্রাইম সিন ডেস্ক: মঙ্গলবার সকাল ১০ টা। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহিঃ বিভাগে চিকিৎসকের কাছে এসেছেন নগরীর ২৬ নং ওয়ার্ডের মধ্য বয়সী এক নারী। মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ওই নারী রোগীকে ৩ টি পরীক্ষা দিলেন। যার মধ্যে দুটি প্যাথলজিক্যাল। চিকিৎসকের সহকারী জানালেন পরীক্ষাগুলো সবই হাসপাতালে করানো সম্ভব। হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় যোগাযোগ করার জন্য বলা হলো তাকে।
ওই নারী দ্বিতীয় তলায় গিয়ে প্যাথলজি বিভাগ খুজছিলেন। ঠিক এই সময় অপরিচিত এক পুরুষ লোক এসে সহযোগীতার ছলে ওই নারীর কাছে কি কি পরীক্ষা দিয়েছে জানতে চাইলেন। ওই নারী পরীক্ষার নাম বলতে না পেরে ডাক্তারের দেওয়া কাগজটি ওই পুরুষের হাতে দিলেন। কাগজটি দেখে ওই নারীকে সাথে করে প্যাথলজি বিভাগের রক্ত পরীক্ষা রুমের ভিতরে নিয়ে গেলেন। আগে থেকেই দাড়িয়ে থাকা দৈনিক পরিবর্তনের অনুসন্ধানী টিম তাদেরকে গোপনে অনুসরন করে। কিছুক্ষন পর দেখা গেলো ওই কক্ষ থেকে বেড়িয়ে এলেন ওই নারী। এবার তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুটি পরীক্ষা ছিলো। তার সাথে থাকা ওই লোকটির সহযোগিতায় কোন ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই করতে পেরেছেন তিনি। এজন্য রুমের ভিতরে বসে ওই লোকটিকে ৫০০ টাকা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। ওই নারী বলেন রিপোর্ট নেওয়ার জন্য একটি স্লিপও দেওয়া হয়েছে তাকে।
শুধু ওই নারী নয় এভাবে প্যাথলজি বিভাগে পরীক্ষা রোগীদের বড় একটি একটি অংশকে অবৈধ ভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করাচ্ছে ওই বিভাগের একটি সংঘবন্ধ চক্র। অনুসন্ধান বলছে দৈনিক অন্তত ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা অবৈধ পন্থায় হাতিয়ে নিচ্ছে ওই চক্রটি। অথচ যে টাকা জমা পড়ার কথা ছিলো সরকারী কোষাগারে। হাসপাতাল প্রশাসন বলছে বিষয়টি তাদের অজানা নয়। অবৈধ এ কার্যক্রম বন্ধে ওই চক্রটিকে ধরতে বেশ কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন তারা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে সংঘবদ্ধ ওই চক্রটির অগ্রভাগে রয়েছে হাসপাতালের সরকারী কর্মচারী ওই প্যাথলজি বিভাগের দায়িত্বরত কামাল, বাইজীদ ও লিটু। তবে এই কাজে যে শুধু এরা ৩ জনই জড়িত তা নয়। এই বিভাগের অধিকাংশ কর্মচারী এই কাজের সাথে জড়িত। আর অবৈধ পন্থায় উপার্জিত টাকা দিন শেষে ভাগ ভাটোয়া হয় নিজেদের মধ্যে।
জানা গেছে কামাল, বাইজিদ ও লিটু বহিঃ বিভাগ থেকে রোগী বাগিয়ে আনার কাজ করেন। তারা বিভিন্ন পন্থায় রোগীদের স্ব স্ব পরীক্ষা নিরীক্ষা কক্ষে নিয়ে আসে। এর পর টাকা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা ও রিপোর্ট প্রদান বা রিপোর্ট নেওয়ার স্লিপ দেওয়ার কাজটি করেন রুমের ভিতরে থাকা চক্রটির অন্য সদস্যরা।
বিষয়টি সম্পর্কে হাসপাতাল পরিচালক ডাঃ সাইফুল ইসলামকে অবহিত করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি একদমই জানি না তা নয়। প্যাথলজি বিভাগে একটি চক্র এমন করছে সে তথ্য রয়েছে। তিনি বলেন প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে এই চক্রটিকে ধরতে ও দৈনিক যে টাকা আদায়ের মুড়ি দেয়া হয়, তা তদারকি করার জন্য হাসপাতালের সহকারী পরিচালককে(প্রশাসন) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন কার্যকারিতা চোখে পড়েনি। হাসপাতালে দ্বিতীয় পদক্ষেপ হচ্ছে হাসপাতালে একটি ব্যাংকের বুথ স্থাপন করা। পরীক্ষা নিরীক্ষার সকল অর্থ এই বুথে জমা হবে এবং এই বুথ থেকে টাকা প্রদানের যে স্লিপ প্রদান করা হবে তা দেখেই পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হবে। বুথের স্লিপ ছাড়া কোন পরীক্ষা করা হবে না। এটা চালু করতে পারলে পুরোপুরি ভাবে চক্রটি বন্ধ হবে। তবে কোন প্রক্রিয়ায় এই চক্রটির যথাযথ সন্ধান পেলে কোন বদলী নয় সরাসরি বরখাস্ত করে দেওয়া হবে। তিনি বলেন বুথ স্থাপনের বিষয়ে শেষ পর্যায়ে রয়েছি। মন্ত্রী এই কাজে সর্বাতœক সহযোগীতা করছেন। আশা করছি খুব দ্রুত এ কাজ শুরু হবে।