সোমবার, ৩০ Jun ২০২৫, ১২:৩১ অপরাহ্ন
করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার বড় আঘাতের সৃষ্ট ক্ষত সারাতে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি ভূমিকা রাখবে। এক্ষেত্রে সরকার ইতোমধ্যে উদ্যোগী হয়েছে। তবে সরকারি উদ্যোগ বাস্তবায়নে স্থানীয় পর্যায়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
হারিয়ে যাওয়া বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের শষ্য ভান্ডারের শতভাগ গৌরব ফিরিয়ে আনতে “চলমান রোপা আমন আবাদ পরিস্থিতি এবং আগামী বোরো ও রবি মৌসুমে করণীয়” বিষয়ক দিনব্যাপী কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কথাগুলো বলেছেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান।
আজ শনিবার সকাল দশটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত ব্রি বরিশালের আয়োজনে নগরীর সাগরদী এলাকার ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় সচিব আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কৃষিতে মনোযোগী করার উদ্দেশ্যে জনগণের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারিভাবে কৃষিতে আগ্রহীদের জন্য নানাবিধ সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করার কথা জানিয়ে কৃষি সচিব বলেন, যারা খামার (শাক-সবজি, ফলমূল, মৎস্য বা কৃষি) করতে আগ্রহী তাদেরকে সরকার মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ঋণের ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া কৃষিকাজে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রমও চলমান রয়েছে। যেখানে বিনামূল্যে চাষীদের সার, কীটনাশক ও বীজ সরবরাহ করা হয়। এসব সহায়তা নিয়ে কৃষিকাজের মাধ্যমে ব্যক্তি, পরিবার ও দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্থায়ী কিংবা অস্থায়ীভাবে কৃষি ভিত্তিক পেশার দিকে ঝোঁকার আহবান জানিয়ে কৃষি সচিব আরও বলেন, প্রতিটি সমাজে কৃষিভিত্তিক পণ্যের চাহিদা দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার কৃষির সাথে জড়িত মানুষেরা নিজেদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি নিজেরা ব্যবহার করে জীবন রক্ষা করতে পারছেন। তাই যারা করোনায় বেকার হয়ে পরেছেন কিংবা কর্মসংস্থান খুঁজছেন তাদের কৃষিতে মনোযোগী হওয়ার জন্য সচিব আহবান করেছেন।
কৃষি সচিব বলেন, পড়াশোনা শেষ করে টেবিল-চেয়ারে বসে চাকরি করতে হবে এমন বদ্ধমূল ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কারণ আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে আগের চেয়ে কৃষি পণ্যের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া আমাদের দেশে পর্যাপ্ত আবাদি জমি রয়েছে। প্রযুক্তি আর আশেপাশের পতিত জমির সম্মিলন ঘটিয়ে যেকোনো বড় চাকরির চেয়ে কৃষি থেকে ভালো উপার্জন করা সম্ভব। করোনা পরিস্থিতিতে আয়ের পথ উন্মুক্ত রাখতে কৃষিই একমাত্র ভরসা হতে পারে।
কৃষিকাজ অন্যান্য যেকোনো ভালো পেশার মতোই সম্মানজনক ও অর্থকরি বলে জানিয়ে সচিব বলেন, বর্তমান সময়ে উন্নত দেশগুলোর আধুনিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত নাগরিকেরাও জৈব ও যান্ত্রিক কৃষির (অর্গানিক ফার্মিং) দিকে ঝুঁকছে। বর্তমান করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে যারা আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা ভাবছেন তাদের কৃষিতে মনোযোগী হওয়া উচিত। অন্তত বেকার কিংবা অলস সময় কাটানোর চেয়ে কৃষিতে শ্রম দিয়ে আত্মকর্মসংস্থান করা উত্তম বলেও তিনি (সচিব) উল্লেখ করেন।
ব্রি বরিশালের মহা-পরিচালক ড. মোঃ শাহজাহান কবীরের সভাপতিত্বে কর্মশালায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রি’র প্রধান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ আলমগীর হোসেন। কর্মশালায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আফতাব উদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, ইতোমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে বরিশাল জেলার পাঁচ হাজার পরিবারকে কৃষি কাজে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া বিনামূল্যে দুই হাজার সাতশ’ বিশ জন চাষীকে উন্নত মানের বীজ, সার ও কীটনাশক সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি আউশ ও আমন ধান আবাদ নিয়ে আলাদাভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কৃষিকাজ করতে ইচ্ছুক যেকোন ব্যক্তিকে সরকারি এসব সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
কর্মশালায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের যুগ্ন পরিচালক ড. মোঃ মিজানুর রহমান, ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান কবির প্রমুখ। কর্মশালায় বরিশাল অঞ্চলের শতাধিক কৃষক, শিক্ষক, কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী ও সংবাদকর্মীরা অশংগ্রহণ করেন।
সচেতন বরিশালবাসীর মতে, কৃষিতে আগ্রহী করতে জনগণের প্রতি সরকারি সুযোগ সুবিধাগুলো স্থানীয় পর্যায়ে এসে বিভিন্ন কারণে কার্যকারিতা হারায়। তাই স্থানীয় পর্যায়ের উদাসীনতা, দুর্নীতি ও দলীয়করণ হ্রাস করে সরকারি সুযোগগুলো যদি কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া যায় তবেই কৃষি জাতীয় অর্থনীতিকে করোনার থাবা থেকে মুক্ত করতে পারবে।
সূত্রমতে, জাতীয় পর্যায় থেকে সরকারি যেকোনো প্রণোদনা, সহায়তা কিংবা প্রকল্প বাস্তবায়নের টাকা ছাড় করা হলে স্থানীয় পর্যায়ে গিয়ে সরকারি সহায়তা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রকৃত কৃষকের চেয়ে দলীয় পরিচয় বিবেচনায় নেয়া হয় আগে। এসব নিয়ন্ত্রণ করা গেলেই কৃষিকাজ জনপ্রিয় করার জন্য সরকার যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তা শতভাগ কার্যকর হবে। আর এতে করেই করোনার বাস্তবতায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তরা কৃষিকাজ করে নিজের ও দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবেন।