মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৫৯ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
কলাপাড়ায় নিজ ঘর থেকে স্বামী-স্ত্রীর ম/র/দে/হ উদ্ধার, এলাকা জুড়ে চাঞ্চল্য সভাপতি মোহসীন, সম্পাদক বিপু।কলাপাড়া টেলিভিশন জার্নালিস্ট ফোরামের কমিটি গঠন অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানে কলাপাড়ায় গ্রেফতার-৯ কলাপাড়ায় নৌকায় ইলিশের অস্তিত্ব সংকট বিষয়ক গন শুনানি বরিশাল-৫ আসনে জামায়াতের মনোনীত দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট হেলালের গণসংযোগ বরিশালে বিশ্ব সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস পালিত বরিশালে ৩৫ সংগঠনের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সাথে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত কলাপাড়ায় দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি কলাপাড়ায় প্রকল্প অবহিকরন সভা বরিশালে রিকশা শ্রমিকদের নিয়ে ধানের শীষের ব্যতিক্রমী প্রচারণা বরিশালে চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শ্রমিকদের অবস্থান, বিক্ষোভ বিপ্লব ও সংহতি দিবসে মহসিন সিকদারের নেতৃত্বে র‍্যালী সাবেক এমপি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদের বক্তব্যে বরগুনায় আইনজীবীদের প্রতিবাদ সাংবাদিক পেশার নাম ব্যবহার করে বরিশালে ভয়ংকর অপরাধ করে যাচ্ছে আরিফ বাউফলে উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে ঐতিহাসিক ৭নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালিত
কলাপাড়ায় নৌকায় ইলিশের অস্তিত্ব সংকট বিষয়ক গন শুনানি

কলাপাড়ায় নৌকায় ইলিশের অস্তিত্ব সংকট বিষয়ক গন শুনানি

Sharing is caring!

কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি :

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় আন্ধারমানিক নদীতে ইলিশের অস্তিত্ব রক্ষা এবং উপকূলীয় পরিবেশ সুরক্ষার দাবিতে নৌকায় গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে প্রতিবেশ ও উন্নয়ন ফোরাম- পটুয়াখালী, প্রান্তজন, ক্লিন এবং বিডব্লিউজিইডি—এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই শুনানিতে এলাকার জেলে পরিবার এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

গণশুনানিতে বক্তারা তুলে ধরেন যে, কলাপাড়া অঞ্চলে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বন্দর কেন্দ্রিক অপরিকল্পিত মেগা—উন্নয়ন ইলিশের অভয়াশ্রম আন্ধারমানিক নদীকে আজ ইলিশশূন্য হওয়ার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে।

গণশুনানীর বিচারক প্যানেলে ছিলেন ড. মোহাম্মদ আশরাফুল হক, উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও উপকেন্দ্র প্রধান, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নদী উপকেন্দ্র, খেপুপাড়া; অসীম আবরার, প্রভাষক, উপকূলীয় অধ্যয়ন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়; শুভঙ্কর চক্রবর্তী, সদস্য, বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ ও জনসুরক্ষা ফোরাম; অ্যাডভোকেট সুভাস চন্দ্র দাস; মেজবাহউদ্দিন মাননু; সদস্য, প্রতিবেশ ও উন্নয়ন ফোরাম-পটুয়াখালী। এছাড়াও আলোচনা করেন, অমল মুখার্জী, আহ্বায়ক, প্রতিবেশ ও উন্নয়ন ফোরাম-পটুয়াখালী; তৌহিদুল ইসলাম শাহজাদা, নির্বাহী পরিচালক, প্রান্তজন; সদস্য সচিব; প্রতিবেশ ও উন্নয়ন ফোরাম-পটুয়াখালী।

জেলেদের পরিবারের মধ্যে আলোচনা করেন, মন্নান পাহলান, আব্দুর রব রাঢ়ী, আকলিমা; চন্দ্র ভানু ও জহিরুল ইসলাম। জেলে আব্দুর রব রাঢ়ী বলেন, ‘আমি প্রায় ৫৫ বছর ধইররা মাছ ধরি।

মধুপাড়া, চর নিশানবাড়িয়া, দেবপুর, ছোনখোলা গ্রামে আমার মতোন ১০০০ জাইললা এক সময় রামনাবাদ নদীতে মাছ ধইররা হ্যাগো সংসার চালাইতে ।

এহন রামনাবাদ নদীর পায়রা বন্দরের চ্যানেল কইরা আমাগো  মাছ ধরা বন্ধ কইররা দেছে, কিন্তু কোন ক্ষয়ক্ষতি দেয়নাই। এহন আমাগো বাইচচা থাহাই কষ্ট।

আয়োজক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, জাতীয় মাছ ইলিশের উৎপাদন দিন দিন কমছে: ২০২০—২১ অর্থবছর পর্যন্ত উৎপাদন স্থিতিশীল থাকলেও ২০২২—২৩ অর্থবছর থেকে ২০২৩—২৪ অর্থবছরে এসে ইলিশের জাতীয় উৎপাদন ৪২,০০০ মেট্রিক টন কমে গেছে (প্রায় ৮% হ্রাস), যা গত ছয় বছরের মধ্যে ইলিশ উৎপাদন তলানিতে নেমে আসার ইঙ্গিত।

দেশের মোট ইলিশের প্রায় ৬৫% উৎপাদনকারী বরিশাল বিভাগেও ২০২৩—২৪ অর্থবছরে উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে (প্রায় ২৩,৫০৯ মেট্রিক টন হ্রাস)।

একসময়ের অফুরন্ত ভান্ডার আন্ধারমানিক নদ আজ গভীর সংকটের মুখে, এবং ২০১১ সালে অভয়াশ্রম ঘোষিত এই নদীতে বর্তমানে কালেভদ্রেও ইলিশ মিলছে না।

এই গভীর সংকটের কেন্দ্রে রয়েছে এই অঞ্চলের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বন্দর কেন্দ্রিক অপরিকল্পিত উন্নয়ন।

বক্তারা জোর দিয়ে বলেন যে, বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অন্যান্য অবকাঠামো থেকে নির্গত অপরিশোধিত শিল্প বর্জ্য ও গরম পানি সরাসরি নদীতে পড়ছে।

মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ইলিশ অত্যন্ত দূষণ সংবেদনশীল হওয়ায় এই দূষণ তার প্রজনন ব্যাহত করছে, যার ফলে ইলিশের আকার ছোট হচ্ছে এবং তারা এলাকা ছাড়ছে। এই দূষণের কারণে রামনাবাদ, আন্ধারমানিক ও টিয়াখালী নদীর পানি ও মাটি মাঝারি থেকে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।

পাশাপাশি, বন্দরকে কেন্দ্র করে নদীতে অতিরিক্ত জাহাজ চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ায় ইলিশের বঙ্গোপসাগর থেকে মূল প্রবেশ পথ প্রায় অবরুদ্ধ হচ্ছে।

এছাড়াও আন্দারমানিক নদীতে মাত্র ৮ থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে একের পর এক তিনটি সেতু নির্মাণ এবং শাখা নদীগুলোর মুখ বন্ধ হওয়ায় নদীর স্বাভাবিক স্রোত বাধাগ্রস্থ হয়ে নাব্যতা কমেছে, যা ইলিশের অবাধ বিচরণ ও প্রজননকে মারাত্মকভাবে বাধা দিচ্ছে।

এছাড়াও, নদীর তীর ভরাট করে ফ্রি—স্টাইলে বালু ফেলা এবং অবৈধ দখলদারিত্ব চলছে, যা নদীটিকে অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছে।

এই পরিবেশগত বিপর্যয় জেলেদের জীবন ও জীবিকাকে চরমভাবে বিপন্ন করেছে। স্থানীয় জেলে পরিবারের প্রতিনিধিরা হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, জীবিকা নির্বাহের সুযোগ কমে যাওয়ায় শত শত জেলে পেশা বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন, যা এই সংকটের গভীরতা প্রমাণ করে।

মোয়াজ্জেম হোসেন

কলাপাড়া

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD