কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি :
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বিআরডিবি’র অর্ধ কোটি টাকা লোপাটের পর এবার সমবায় সমিতি আইন ও বিধিমালা তোয়াক্কা না করে ঋন খেলাপীদের নিয়ে উপজেলা সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ সোসাইটি (ইউসিসি)’র পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ইউসিসি’র নির্বাচনে অংশগ্রহনেচ্ছুক একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন ফরম ক্রয়ে বলপূর্বক বাঁধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র জানায়, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ সমবায় সমিতি বিধিমালা ২০০৪ এর ২৭ বিধি অনুযায়ী কলাপাড়া ইউসিসি’র নির্বাচন তফসিল ঘোষনা করে নির্বাচন কমিটি। ঘোষিত তফসিলে ৪ঠা মার্চ সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ইউসিসি কার্যালয় থেকে ফরম বিক্রয়ের কথা থাকলেও বলপূর্বক বাঁধা দিয়ে কোন প্রার্থীকে ফরম সংগ্রহ করতে দেয়া হয়নি।
এরপর ৭মার্চ ঋন খেলাপীদের নিয়ে ৮ জনের একক বৈধ প্রার্থী তালিকা ঘোষনা করে নির্বাচন কমিটি। এরপর সমবায় সমিতি আইন ও বিধিমালা অনুসরন না করে ২ এপ্রিল ২০২৪ ইউসিসি’র বিনা ভোটের এ পকেট কমিটি ঘোষনা করে নির্বাচন কমিটি।
সূত্রটি আরও জানায়, সমবায় সমিতি আইন ও বিধিমালার বিধি-২৪ এর দফা ৩ অনুযায়ী সমবায় সমিতি থেকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে গৃহীত বা জামানত প্রদানের মাধ্যমে অন্যকে দেয়া ঋন মনোনয়ন পত্র দাখিলের পূর্বে সম্পূর্ন পরিশোধ না করা পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহনের যোগ্য হবেন না।
একই বিধির ৪ দফায় বলা আছে ঋন খেলাপী সদস্য সমিতি খেলাপী ঋনের ৭৫% মনোনয়ন দাখিলের পূর্বে পরিশোধ না করা পর্যন্ত সমবায় সমিতির নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারবেন না। কিন্তু ইউসিসি’র এ পকেট কমিটিতে পরিচালক পদধারী অসিত রঞ্জন সরকারের নিজের নামে ঋন না থাকলেও তার চিংগুরিয়া কৃষক সমবায় সমিতির কাছে পাওনা রয়েছে ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা, অপর পরিচালক পদধারী নুর মোহাম্মদ হাওলাদারের পূর্ব মধুখালী উত্তর কৃষক সমবায় সমিতির কাছে পাওনা রয়েছে ৭৯ হাজার টাকা, পরিচালক মো: ইছাহাক মিয়ার নাওভাঙ্গা কৃষক সমবায় সমিতির কাছে পাওনা রয়েছে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা, পরিচালক ছিদ্দিক হাওলাদারের কাছে পাওনা রয়েছে ৬০ হাজার টাকা এবং তার পশ্চিম খাঁজুরা কৃষক সমবায় সমিতির কাছে পাওনা ৩ লক্ষ ৫ হাজার টাকা।
এমনকি ইউসিসি’র এ পকেট কমিটির ৮জন সদস্য প্রতি অর্থবছরে কোন শেয়ার ও সঞ্চয় জমা দেয়নি। এছাড়া পকেট কমিটির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক তালুকদার বিআরডিবি’র পরিদর্শক সহ ইউসিসি’র সভাপতি ছিলেন।
ইউসিসি’র সভাপতি পদ প্রত্যাশী সৈয়দ মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ’আমার ছেলেকে ফরম বিক্রীর তারিখে ক্রয়ের জন্য পাঠিয়েছিলাম, ক্রয় করতে দেয়া হয়নি।’ সহ-সভাপতি পদ প্রত্যাশী মো: মিজানুর রহমান বলেন, ’ফরম ক্রয়ের নির্দিষ্ট দিনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ না করার জন্য বলা হয়েছে।’
ইউসিসি’র সদ্য ঘোষিত কমিটির পরিচালক ও পশ্চিম খাঁজুরা কৃষক সমবায় সমিতির সভাপতি ছিদ্দিক হাওলাদার বলেন,’আমার নিজের কাছে ও সমিতির সদস্যদের কাছে টাকা পাওনা রয়েছে। সময়মত পরিশোধ করতে পরিনি। আমি টাকা দিয়ে দেবো।’
’ ইউসিসি’র সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক তালুকদার বলেন, সঠিক ভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এতে কোন অনিয়ম হয়নি।
ইউসিসি’র নির্বাচন কমিটির সদস্য ও উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের পরিদর্শক মো: কামাল হোসেন বলেন,’সঠিক ভাবে নির্বাচন হয়েছে। আমাদের কাছে কোন অভিযোগ আসেনি।
কলাপাড়া বিআরডিবি কর্মকর্তা মাহবুব হাসান শিবলি বলেন,’ ইউসিসি’র কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় সমবায় অধিদপ্তরের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য চিঠি দিয়েছি।
সমবায় সমিতি আইন ও বিধিমালা অনুসরন করে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা নির্বাচন কমিটির দায়িত্ব। তবে নির্বাচন কমিটি আমার কাছে প্রার্থীদের ঋন সংক্রান্ত কোন তথ্য চায়নি।’
জেলা সমবায় অফিসার পংকজ কুমার চন্দ বলেন,’ ইউসিসি’র নির্বাচনে অনিয়ম হলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপীল করা যায় এবং বিভাগীয় সমবায় অধিদপ্তরে ডিসপুট মামলা করা যায়।’
সমবায় অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় যুগ্ম নিবন্ধক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ’ইউসিসি’র নির্বাচনে সমবায় সমিতি আইন ও বিধিমালার লংঘন সংক্রান্ত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এর আগে বিআরডিবি’র অর্ধ কোটি টাকা লোপাটের তথ্য ফাঁস হয়ে পড়ে ইউসিসি’র অভ্যন্তরীন নীরিা কমিটির রিপোর্টে। ইউসিসি’র চেয়ারম্যান ও বিআরডিবি কর্মকর্তা সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন ধরে এ অনিয়ম-দুর্নীতি করে আসলেও অদ্যবধি ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপ।