কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধিঃ
দারুণভাবে অর্থ সঙ্কটে ভুগছিলেন চাচা।
একাধিক বিয়ে করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঠিক মতো দুবেলা খেতেও পারছিলে না তিনি। ছোট বেলা থেকেই দুষ্ট ও ঠক প্রকৃতির হওয়ায় চাচা বাড়ি ছেড়ে থাকতেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সেই সুবাদে পরিবারের সদস্যরাও আশ্রয় দিতেন না এই প্রতারককে। তবে মৃত বাবার ছোট ভাইয়ের এমন নিদারুন কষ্ট দেখে তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তিন কন্যার জননী মানবিক ভাতিজী রুবি বেগম (৩৪)।
বেশ কয়েক মাস চাচা-চাচি ও চাচাতো ভাই সহ গোটা পরিবারকে আর্থিক সহযোগীতা করে আগলে রাখেন। কিন্তু সেই ভাতিজীর সঙ্গেই প্রতারনা করেন ঠকবাজ চাচা সেলিম মোল্লা ওরফে সেলিম রেজা ও আবদুল হাই নাম ব্যবহারকারী বহুরুপি এই চাচা।
তিনি মহিপুর সদর ইউপির বিপিনপুর গ্রামের মৃত হামেদ মৌলভীর ছেলে। আর ভুক্তভোগী গৃহবধূ প্রতারক সেলিমের প্রয়াত আপন বড় ভাই আবদুল কাদের মোল্লার একমাত্র কন্যা।
বর্তমানে প্রতারক চাচার খপ্পরে পড়ে ভুক্তভোগী রুবি বেগম সহায় সম্পত্তি বিক্রির পাশাপাশি শশুর বাড়ির দেওয়া গহনা বন্ধক রাখা সহ বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে চাচার হাতে তুলে দিয়ে পাগল প্রায়।
রুবি জানান, তার চাচা সেলিম পেশায় একজন ট্রাক ড্রাইভার। কিন্তু একাধিক বিয়ে এবং মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যেতেন। আর এই বিষয়টি পরিবারের সবাই অবগত ছিলেন বলে তাকে কেউ আশ্রয় দিতেন না। তার পরেও স্ত্রী সন্তান নিয়ে আহার জুটছিলনা বলে রক্তের টানে তাকে সাহায্যের হাত বাড়ান।
এরই মধ্যে তার পায়ে ধরে কান্না জুড়ে দেন বহরুপি সেলিম মোল্লা। রুবি বলেন, তার চাচা তাকে কাকুতি মিনুতি করে জানান, যেহেতু তিনি পেশায় ড্রাইভার তাই তাকে কিস্তিতে একটি ট্রাক কিনে দেওয়ার অনুরোধ করেন।
ফলে জামানোত টাকার জন্য ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার খুবই প্রয়োজন। তাহলেই তিনি কিস্তি পরিশোধ করে ট্রাকের মালিক হয়ে যেতে পারবেন। তবে ট্রাকের কাগজপত্র ভাতিজির নামে করে দেওয়ার কথা জানান এই প্রতারক।
ভুক্তভোগী রুবি বেগম জানান, চাচার এমন কথা শুনে তার কান্না দেখে প্রথমে গহনা বন্ধক ও সুদে ধার করে তিন লাখ টাকা দিয়ে চাচাকে ঢাকাতে পাঠাই। পরে ট্রাক নিয়ে কলাপাড়ায় এলে আরো সাড়ে তিনলাখ টাকার জরুরি প্রয়োজন হয় চাচার। পরে মহিপুর বাবার বাড়ি থেকে তিন শতক জমি বিক্রি করে ২ লাখ ১০ হাজার এবং এনজিও থেকে লোন নিয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা আমার চাচার হাতে তুলে দেই। কিন্তু পর থেকে গত তিন বছর চাচা নিখোঁজ হয়ে যায়।
কান্না জড়িত কন্ঠে রুবি বলেন, বর্তমানে শুশুর বাড়ির লোকজন গহনার জন্য বকাঝকা এবং এনজিও থেকে কিস্তি পরিশোধের মামলা দিয়েছে। ফলে দুশ্চিন্তায় শারিরিক অবস্থা খারাপ হয়ে পিত্ত থলিতে পাথর অপরেশন করতে হয়েছে।
এমনকি টেনশনে মাথা ঘুরে সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে একটি হাত ও একটি পা ভেঙ্গে যাওয়ার পাশাপাশি একটি হাতের লিগামেন্ট ছিড়ে গেছে। যা অর্থভাবে উন্নত চিকিৎসাও হচ্ছে না এখন।
রুবির জমি ক্রয়কৃত মালিক সোহাগ মৃধা জানান, আমাকে অনেক অনুরোধ করে ওই মেয়েটি চাচার জন্য জমি বিক্রি করে আমার সামনেই টাকা দিয়েছে। পরে শুনেছি ওর চাচা এক টাকাও ফেরৎ দেয়নি।
এদিকে পাওনাদার রানী হাওলাদার বলেন, আমার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়ে রুবি তার চাকাকে দিয়েছিল। অনেক দিন পরে তার স্বামী সেই টাকা পরিশোধ করেছে।
আর ওই প্রতারকটা মেয়েটার সংসারটা তছনছ করে দিয়েছে। মেয়েটো এখন অনেকটাই মানসিক রোগীর মত হেয়ে গেছে।
তবে এবিষয়ে জানতে সেলিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। কলাপাড়া থানার ওসি আলী আহম্মেদ জানান এবিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।