শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৭ অপরাহ্ন
বরগুনাপ্রতিনিধি: বরগুনার তালতলীতে হতদরিদ্র নুরুল ইসলাম বেপারীর ছেলে ইসমাইল দিনাজপুর মেজর আঃ রহিম মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন। প্রচন্ড ইচ্ছা শক্তি, অদম্য মেধা ও পরিশ্রমের ফলে দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারে জন্ম নিয়েও দমে যাননি তিনি। মেডিকেলে চান্স পেয়েও তার মুখের হাসি মলিন। পড়াশোনার খরচ কীভাবে চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই। প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে তার মেডিকেলে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বরগুনার তালতলী উপজেলার মোমেসেপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলাম এর ছয় সদস্যের পরিবারে চার সন্তানের মধ্যে ইসমাইল সবার ছোট।
ইসমাইল তালতলী সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে জিপিএ-৪.৯১ পেয়ে এসএসসি এবং তালতলী সরকারি কলেজ থেকে ২০১৯ সালে জিপিএ-৪.৩৩ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। ২০১৯ সালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গনিত বিভাগে চান্স পান কিন্তু গতবছরের রেজাল্ট আশানুরুপ না হওয়ায় ২০২০ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় আবারো অংশ গ্রহন করে জিপিএ-৫ অর্জন করেন। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় আংশগ্রহন করে মেডিকেলে চান্স পান। তার বাবার একার আয়ের উপর নির্ভর করেই চলে সংসার। এ অবস্থায় ছেলের পড়াশুনা চালিয়ে নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তার বাবাকে। ছেলেকে মেডিকেলে ভর্তি করে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা তার নেই। বিত্তবান মানুষের কাছে সাহায্য-সহযোগিতা চেয়েছেন। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে গত কয়েক মাস নিজ বাড়িতেই রাতদিন কঠোর পরিশ্রম করে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন ইসমাইল। তার সাফল্যে খুশি পরিবারসহ এলাকার সবাই। ইসমাইল বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। আল্লাহ আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছেন। আমি দিনাজপুর মেজর আঃ রহিম মেডিকেলে কলেজে চান্স পেয়েছি। এজন্য আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া, কিন্তু আমি মনে হয় ডাক্তারি পড়তে পারবো না, আমাদের আর্থিক অবস্থা এতোই নাজুক, বাবার পক্ষে আমার লেখাপড়ার খরচ চালানো অসম্ভব। কোনো স্ব-হৃদয়বান ব্যক্তি যদি আমার লেখাপড়া করার জন্য সাহায্য করতেন তাহলে আমার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরন হতো। আমি দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই, যেন পড়াশোনা শেষ করে ভালো একজন চিকিৎসক হয়ে অসহায় দরিদ্র মানুষের সেবা করতে পারি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি আকুল আবেদন জানাচ্ছি, তিনি যেন আমার লেখাপড়া চালানোর দায়িত্ব নেন। তার সহযোগিতা ছাড়া আমার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আমি সরকারের সহযোগিতায় পড়াশোনা সম্পন্ন করে ভালো একজন চিকিৎসক হতে চাই। ইসমাইলের বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, আমি একজন হতদরিদ্র কৃষক আমার বাড়ির জমিটুকু ছাড়া আর কোনো জমি জমা নেই। আমার ছেলে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে কিন্তু আমার কাছে টাকা পয়সা নেই যে আমার ছেলেকে ডাক্তারি পড়াবো। আমি গরীব মানুষ দিন আনি দিন খাই। কোনোরকমে সংসার চলে। এর আগে ছেলেকে ঠিকমতো পড়ালেখার খরচ দিতে পারি নাই। না খেয়ে লেখাপড়া করেছে আমার ছেলে, এখন মেডিকেলে চান্স পেয়েছে কেমনে কিভাবে পড়াবো আল্লাহ জানে। আপনারা যদি একটু সহযোগিতা করতেন তাহলে আমার ছেলেকে ডাক্তার বানাতে পারতাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার আকুল আবেদন, তিনি যেন আমার ছেলের পড়াশোনার দায়িত্ব নেন। এ বিষয় তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কাওসার হোসেন বলেন, আমি শুনেছি ইসমাইল নামের এক মেধাবী ছাত্র দিনাজপুরের মেজর আঃ রহিম মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। আমরা খুবই আনন্দিত। অজপাড়াগাঁয়ের তালতলী সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও তালতলী সরকারি কলেজে লেখাপড়া করে ইসমাইল মেডিকেলে চান্স পেয়েছে এটা আসলেই আমাদের গর্বের বিষয়। ধন্যবাদ জানাই এই শিক্ষকদের যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। শিক্ষকদের কাছে আমার অনুরোধ, আরো ভালো ভাবে পাঠদান করাবেন ভবিষ্যতে প্রসাশন, পুলিশ, ডাক্তারসহ গুরুত্বপূর্ন পদে আমাদের এলাকার শিক্ষার্থীরা যেতে পারে। সমাজে যারা বিত্তবান আছেন তারা যদি ইসমাইলকে সহযোগিতা করেন আমার মনে হয় ছেলেটি একজন ভালো চিকিৎসক হতে পারবে। তালতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি রেজবি উল কবির জমাদ্দার বলেন, আমি তাকে অভিনন্দন জানাই, সে তালতলী উপজেলার ছেলে হিসেবে মেডিকেলে চান্স পেয়ে, সে ভবিষ্যত উন্নতি কামনা করি। আমি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে এবং আমার ব্যক্তিগত ভাবেও তাকে সার্বিক সহযোগিতা করব। বিত্তবান মানুষের কাছে আমার আহŸান তারা ইসমাইলকে সাহায্য-সহযোগিতা করেন। যাতে করে ছেলেটি ডাক্তার হয়ে গরিব ও অসহায় মানুষের সেবা করতে পারে।