বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৭ অপরাহ্ন
ক্রাইমসিন ডেক্সঃ
পল্লী চিকিৎসক আবদুর রহমান খান হত্যাকাণ্ডের দুই বছর হয়ে গেলেও ঘটনার কোনো ক্লু বের করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। থানা পুলিশের হাত থেকে তদন্তের ভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) গেলেও কোনা সুরাহা না হওয়ায় হতাশ নিহতের পরিবার।
দেশে পট পরিবর্তনের পর নতুন সরকার এসেছে। স্বজন হত্যার বিচার না পাওয়ার হতাশা কাটাতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ছেলে। বাবা হত্যার ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন তিনি।
রোববার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে বরিশাল প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে আবদুর রহমান খান হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়েছেন ছেলে মো. মারজানুর রহমান। তিনি নগরের গড়িয়ার পাড় এলাকার বাসিন্দা ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মারজানুর বলেন, ২০২২ সালের ৭ অক্টোবর মধ্যরাতে গড়িয়ারপাড় বাজারে থাকা নিজের ফার্মেসি বন্ধ করে ভ্যানযোগে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন আমার বাবা পল্লী চিকিৎসক আবদুর রহমান খান। কিন্তু ওই রাতে আর বাবা বাড়িতে ফেরেননি। ভোরে সন্ধানে নেমে স্বজনরা বাড়ির অদূরে একটি গাছের নিচে হাঁটুর মধ্যে মাথা গোঁজা অবস্থায় বাবার মরদেহ পায়।
মারজানুর রহমান বলেন, ঘটনার সময় আমি ঢাকায় ছিলাম। তবে বাবার মরদেহে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ও রক্ত দেখা গেছে বলে জানান আমার মা। তাই বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করার পাশাপাশি মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১০ অক্টোবর আমি বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করি।
হত্যাকাণ্ডের সন্দেহে ফার্মেসি থেকে বাবার বাড়িতে আসার পথের একটি পেট্রোল পাম্পের সিসি ক্যামেরা পর্যালোচনা করি। যেখানে বাবাকে মতি মিয়ার ভ্যানে চড়ে রাত পৌনে ১টার দিকে সারা পেট্রোল পাম্প ক্রস করে বাড়িতে দিকে যেতে দেখা যায়।
আর এর তিন মিনিট পর ভ্যানচালক মতি মিয়াকে ফিরেও যেতে দেখা যায়।
মতি মিয়ার বর্ণনামতে- প্রতিদিনের মতো তিনি পল্লী চিকিৎসক আবদুর রহমান খানকে প্রধান সড়কে নামিয়ে দিয়ে ফেরত চলে আসেন। অপরদিকে ফার্মেসির সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় বেশ কিছু টাকা নিয়ে পল্লী চিকিৎসক আবদুর রহমান খান দোকান থেকে বের হন।
মারজানুর আরও বলেন, প্রধান সড়ক থেকে আমাদের ঘরের দূরত্ব ১৫০ ফিট হলেও বাবা বাসায় রাতে ফেরেননি। রাত পৌনে ২টার দিকে বাবার মোবাইল ফোনে ছোট ভাই কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বাবা মাঝেমধ্যে রাতে দেরি করে ফিরতেন বলে তেমন কোনো সন্দেহ হয়নি। সেদিন ফজরের নামাজের সময় মা ঘুম থেকে উঠে বাবাকে দেখতে না পেয়ে ছোট ভাইকে বলেন। এরপর স্বজনরা খুঁজতে গিয়ে বাড়ির বাইরে প্রথমে বাবার পায়ের স্যান্ডেল ও একটি টিস্যু বক্স এবং পরে মরদেহ পায়।
বাবার সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা থাকার কথা না। তবে জমিজমা সংক্রান্ত ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে ফারুক মাঝি ও তারেক মাঝির (চাচা-ভাতিজা) বিরোধ আছে।
বাবা জীবিত অবস্থায় তারা কাশিপুরের স্থানীয় সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারিদের নিয়ে জমি দখল করতেও এসেছিল। আবার বাবার মৃত্যুর পর থানা পুলিশের মাধ্যমে একটি বায়না দলিলের বিষয় জানতে পারি, যেখানে দেখা যায় আমাদের বাড়ির জমি একটি ডেভেলপার কোম্পানির কাছে বিক্রির উদ্দেশ্যে ফারুক ও তারেক বায়না করেছেন।
এর বাহিরে আমাদের ঘরের পাশে পেশাদার চোর সাইদুলের ঘর, আর আমার বাবার মরদেহ সাইদুলের ঘর থেকে ৩০ ফুটে দূরে পাওয়া যায়। আর যেহেতু আমার বাবার সঙ্গে থাকা টাকা পাওয়া যায়নি, তাই ওই ঘটনায় স্থানীয় মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীরাও সম্পৃক্ত থাকতে পারে।
সবকিছু মিলিয়ে আদালতে ফারুক, তারেক, জাহিদ, আলআমিন ও সাইদুলসহ আরও কিছু ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে তাদের এ মামলার তদন্তের আওতাভুক্ত করার অনুরোধ জানিয়েছিলাম।
আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে তাদের তদন্তের আওতাভুক্ত করার নির্দেশ দেন। তবে প্রথম থেকে বিমানবন্দর থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করলেও তেমন কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মাধ্যমে পিবিআইয়ে মামলা হস্তান্তরের আবেদন জানাই। পরে মামলা হস্তান্তর হলেও গত ১ বছরের কোনো অগ্রগতি। অথচ, বাবার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা যায়।
এ অবস্থায় পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন জানিয়ে নিহতের ছেলে আরও বলেন, আমি আইজিপি ও পিবিআই প্রধানের কাছে জোর দাবি জানাই, যাতে আমার বাবাকে কারা এবং কেন হত্যা করেছে সেই রহস্য উদঘাটন করে দোষীদের বিচার নিশ্চিত করা হয়।
আর যেহেতু দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়োজিত আছে তাই এই হত্যাকাণ্ডের বিচার পেতে আমি তাদের সহযোগিতাও কামনা করছি।
আমার বাবার হত্যার মামলায় ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য সকলের সর্বোচ্চ সহযোগিতা কামনা করছি।
মামলার বিষয়ে পিবিআইর তদন্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, পল্লী চিকিৎসক আবদুর রহমান খান হত্যাকাণ্ডটি ক্লু-লেস ঘটনা। আর মামলাটিও হয়েছিল অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে।
পরবর্তীতে বাদী কয়েকজনের নাম দিয়েছেন, তবে সন্দেহের বসে তাদের গ্রেপ্তারও করা যাচ্ছে না। তাই তদন্ত করে কোনো ক্লু বের করে সেই আলোকে অপরাধী পর্যন্ত পৌঁছতে হবে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো কাজ করছি, তবে এখনও কোনো ক্লু উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি।