শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২১ পূর্বাহ্ন
ক্রাইমসিন২৪ ডেক্স :
বিরোধীদলীয় নেতা থাকাকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার ২৫ বছর পর এলো রায়ের তারিখ। পাবনার ঈশ্বরদী স্টেশনে হামলার ঘটনায় করা মামলার রায় ঘোষণা হবে আগামী বুধবার।
সোমবার দুপুরে পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ এর বিচার রুস্তম আলী রায়ের এই তারিখ ঘোষণা করেন। এ সময় ৫২ আসামির মধ্যে ৩০ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকিরা পলাতক। আসামিদের সবাই বিএনপি এবং তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী।
বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ১৯৯৪ সালে ঈশ্বরদিত শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলা হয়। নেতা-কর্মীরা মানববর্ম রক্ষা করে তাকে প্রাণে বাঁচান। রেলওয়ে পুলিশ তখন মামলা করলেও দুই যুগেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে বিচার শেষ করতে।
সোমবার আসামিদের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি উপস্থাপন করেন আদালতে। বক্তব্য শুনে বিচারক রায় ঘোষণার তারিখ দেন।
মামলার প্রধান আসামি ইশ্বরদি পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু, পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও পৌরসভার সাবেক মেয়র মোকলেছুর রহমান বাবলু এবং বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির দুলাল আদালতে হাজির না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন গোলাম হাসনায়েন, আক্তারুজ্জামান মুক্তা, ওবায়দুল হক প্রমুখ। আসামিপক্ষের ছিলেন নুরুল ইসলাম, মাসুদ খন্দকার, সনৎ কুমার।
পাবনার জজ আদালতের পিপি আখতারুজ্জামান মুক্তা বলেন, ‘৩৮ জনের সাক্ষ্য নিয়ে আদালত বিচারকাজ শেষ করেছে। তারা যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তাতে হামলার ঘটনায় আসামিদের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়েছে। বুধবার আদালত যে রায় ঘোষণা করবে তাতে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা করছি।’
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী মাসুদ খন্দকার বলেন, ‘এ মামলায় উচ্চ আদালতে লিভ টু আপিল চলমান। এর পরও রায়ের দিন ঠিক হয়েছে। কোনো সাক্ষীই সুনির্দিষ্টভাবে অভিযুক্ত আসামিরাই যে বোমাবাজি ও গুলি করেছে তা বলেননি। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রায় হলে অবশ্যই আসামিরা খালাস পাবেন।’
মামলার নথি অনুযায়ী, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি সাংগঠনিক সফরে খুলনা থেকে রাজশাহী অভিমুখে ট্রেনযোগে রওয়ানা হন। পথে পাবনার ঈশ্বরদী স্টেশনে ছিল পথসভা। ট্রেনটি পাকশী স্টেশনে পৌঁছার পরপরই তাতে ব্যাপক গুলি ও বোমা হামলা চালানো হয়। পরে কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে শেখ হাসিনা দ্রুত ঈশ্বরদী ত্যাগ করেন।
ঈশ্বরদী রেলওয়ে পুলিশ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ওইদিনই তৎকালীন ছাত্রদল নেতা ও বর্তমান পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুসহ সাত জনকে আসামি করে মামলা করেন। কিন্তু বিএনপি সরকারের আমলে তদন্ত আর আগায়নি।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর মামলাটি পুনঃতদন্ত করে পুলিশ। তখন ঈশ^রদী বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ মোট ৫২ জনকে আসামি করা হয়। ১৯৯৭ সালের ৩ এপ্রিল এদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
পুলিশ প্রতিবেদন দেওয়ার ২১ বছর পার হয়ে গেলেও এই মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারে তার তিনটি মেয়াদ শেষ করে চতুর্থ মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। মাঝে বিএনপি-জামায়াত জোট একবার এবং প্রায় দুই বছর ছিল সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ছয় বছর পর দেশে ফেরা তার বড় কন্যা শেখ হাসিনাকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৯ বার হত্যাচেষ্টার কথা জানা গেছে। এর মধ্যে ১৪টি ঘটনায় মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। তিনটি মামলায় এখন পর্যন্ত রায় হয়েছে। বাকিগুলোর কোনো কোনোটির তদন্তের অগ্রগতিই জানাতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।