শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৪ পূর্বাহ্ন
শীতের সাথে পাল্লা দিয়ে ক্রমশ বেড়েছে আগুনে পোড়া রোগী, উপযুক্ত চিকিৎসা মিলছে না দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র ভরসাস্থল বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
আট বছর আগে হাসপাতালটিতে বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট চালু হলেও তার উন্নতি হয়নি।
অবহেলা আর জনবল সংকটের দোহাই দিয়েই অনেকটা ঝিমিয়ে চলছে এ ইউনিটটি।
কর্তৃপক্ষ বলছে এ বছরই এর সমাধান হবে, তবে এবার দেখার পালা বাস্তবেই তা হবে কিনা?
নাকি এবারও কতৃপক্ষের উদাসীনতায় নামেই বার্ণ ইউনিটে পরিণত হবে।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটির জরুরী বিভাগ থেকে জানা গেছে, এ বছর জানুয়ারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৫০ জন রোগী হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছে।
প্রতিদিনই গড়ে তিন জনেরও বেশি করে রোগী আসছে হাসপাতালে। এরমধ্যে বেশিরভাগ রোগী শীত নিবারণ করতে আগুন পোহাতে গিয়ে অথবা গরম পানিতে ঝলসে যাওয়া রোগী রয়েছে।
আর এসব দগ্ধ রোগীদের মধ্যে বয়স্ক এবং শিশুর সংখ্যাই বেশি। যতজন এসেছেন তার অধিকাংশকে বরিশালে চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নির্ধারিত ৩০ শয্যায় ৩০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে পর্যন্ত ৩০ জন রোগী ছিল আগুনে পোড়া।
যাদের মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি ছিল।
হাসপাতাল সূত্রে আরো জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১২ মার্চ হাসপাতালের মূল ভবনের পাশে হৃদরোগ ভবনের নিচতলায় ৮টি শয্যা নিয়ে বার্ণ অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ চালু হয়। বর্তমানে শয্যা সংখ্যা ৩০টি। নির্ধারিত ৮টি শয্যার বাইরে বাকি শয্যাগুলো রোগীদের প্রয়োজনে স্থানীয়ভাবে ব্যবস্থা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ইউনিট স্থাপনকালে ৮ জন চিকিৎসক ও ১৬ জন নার্সের পদ রাখা হয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে।
শুরুতে ইউনিটটি পরিচালনার দায়িত্ব পান সহকারী অধ্যাপক হাবিবুর রহমান। বছরখানেক পর তিনি অবসরে গেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক শাখাওয়াত হোসেনকে এখানে পদায়ন করা হয়।
কিন্তু তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেননি। পরে জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ এ কে এম আজাদকে বার্ণ ইউনিটের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ২৮ এপ্রিল নগরীর একটি বেসরকারি ক্লিনিকের লিফটের নীচ থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই বছরের ১৫ মে চিকিৎসক শূন্যতায় আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয় বার্ন এন্ড প্লাসিক সার্জারি ইউনিটটি।
তবে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে ৪৩ জনের মৃত্যু ও অর্ধশতাধিক মানুষ দগ্ধ হওয়ার ঘটনায় শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে না পারায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সমালোচনার মুখে পড়ে সাতজন চিকিৎসককে এই হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
এর প্রেক্ষিতে বন্ধ থাকার ২০ মাস পর ২০২১ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে একই স্থানে পুনরায় চালু করা হয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটটি। কিন্তু চালু হওয়ার গত দুই বছরেও সংকট কাটেনি ইউনিটটিতে; বরং ক্রমশই বাড়ছে সংকট।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মারুফুল ইসলাম জানান, শীতের এই সময়টাতে আগুনে পোড়া রোগীর চাপ কিছুটা বেশিই থাকে।
গুরুতর দগ্ধ রোগীদের এখানে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না। তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঢাকা বার্ন ইউনিটে পাঠাতে হচ্ছে।
তবে সেটা সার্জারি বিভাগ থেকে প্রেরণ করা হয়। জনবল সংকটের কথা জানিয়ে এ চিকিৎসক আরো বলেন, অধ্যাপকের পদ শূণ্য। সহযোগী অধ্যাপকের দুটি পদের মধ্যে আমি একাই আছি।
তাছাড়া সহকারী অধ্যাপক দুজন থাকলেও মিডলেভেল চিকিৎসকের সকল পদই শূণ্য। রেজিস্ট্রার-সহকারী রেজিস্ট্রারের ৫টি পদই শূণ্য। নেই মেডিক্যাল অফিসারও। ১৪ জন স্টাফ নার্স রোটেশন অনুুযায়ী কাজ করলেও এদের মধ্যে একমাত্র যিনি ইনচার্জের দায়িত্ব আছেন তিনিই সংশ্লিষ্ট কাজের বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
ফলে রোগীদের সেবা দেওয়াটা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগটি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকাটা জরুরি। কিন্তু চতুর্থ শ্রেণির স্টাফ সংকটের কারণে সেই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে।
তাছাড়া যেই ভবনটিতে বার্নের রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে সেই জায়গাটাও উপযুক্ত নয়। ভবনের অবস্থান ভালো না, রোগীদের অস্ত্রপচারের জায়গা নেই, ড্রেসিং রুম একটি থাকলেও তার অবস্থা বেহাল।
এই মূহুর্তে বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগটি স্থানান্তরের পাশাপাশি পর্যাপ্ত জনবলের ব্যবস্থা করা জরুরি বলে মনে করেন এই চিকিৎসক। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, পুরো হাসপাতালেই জায়গা সংকট।
যে কারণে প্রয়োজনীয়তা থাকলেও ইউনিটটি স্থানান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না। স্বতন্ত্র বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপনে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
এজন্য হাসপাতালের বর্তমান মডেল ফ্যামিলি প্লানিং ক্লিনিক অথবা পুরাতন ভবনের পশ্চিম পার্শ্বের পুকুর পাড়ে সম্ভাব্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চলতি বছরেই ১৫ তলা ভবনের কাজ শুরু হবে। এর মধ্যে পাঁচতলা বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট এবং বাকি তলাগুলো অন্যান্য বিভাগের জন্য বরাদ্দ করা হবে।