বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০৬:৩০ অপরাহ্ন
এস এল টি তুহিন:আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি। মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে যথাযথ মর্যাদায় একুশের প্রথম প্রহরে বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। আজ সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২ টা ১ মিনিটে বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ম মেনে পুষ্পার্ঘ্য অর্পন করার মধো দিয়ে শুরু হয়েছে একুশের প্রথম প্রহর।
বরিশালে ভাষা শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন করেন মহামান্য রাষ্ট্রপতির পক্ষে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আমিন উল আহসান। এ সময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন,বরিশাল অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোঃ ওয়াহেদুর রহমান, বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দারসহ বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা বৃন্দ।
প্রথম প্রহরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, রেঞ্জ ডিআইজি এস এম আকতারুজ্জামান, পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন। পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, টুরিস্ট পুলিশ, র্যাব-৮, সিআইডি বরিশাল, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাব, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের পাশাপাশি হাজার হাজার সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনে ভিন্ন মাত্রা পায় শহীদ মিনার চত্বর।
বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার এর নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন পরিবারের পক্ষ থেকে শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয় এ সময় বরিশাল জেলার উর্ধতন কর্মকর্তারাসহ জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা এবং কর্মচারী বৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন। পরে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন জেলা প্রশাসক।
এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত হোসেন চৌধুরী
বলেন, “১৯৫২ সালে ভাষা শহিদগণ আমাদের মায়ের ভাষায় আমাদের চেতনা বা অস্থিত্ব জানান দেয়ার জন্যে অকাতরে প্রাণ দিয়ে গেছেন যেদিন। সেদিন থেকে আমরা তাদের কাছে চির ঋণি হয়ে আছি।
”বাংলা’’ আমার মায়ের ভাষা, আমার অহংকার, আমার গৌরব, মৃত্যুঞ্জয়ী ভাষা শহিদদের জানাই অবনত, অতল, বিনম্র শ্রদ্ধা। মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধার সাথে শহিদদের স্মরণ করছে পুরো বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব। আমরা আজ মাথা উচু করে গর্ব করে বলতে পারি আমরাই পৃথিবীতে একটা জাতি যাদের আছে ”মায়ের ভাষা কে” বুকে ধারণ করার জন্যে, কথা বলবার অধিকার ছিনিয়ে আনার জন্যে অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দেয়ার মত গৌরবময় ইতিহাস।
ভাষার এই মাসে আমাদের একটিই প্রত্যাশা- মানুষের সেই চেতনা বোধ জাগ্রত থাকুক। বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর প্রতিটি ব্যক্তি ও জাতিগোষ্ঠির মাতৃভাষার অধিকার হোক নিশ্চিত। সকল শিশু নিশ্চিন্তে কথা বলুক তার মায়ের ভাষায়- নিরাপদ থাক বর্ণমালা।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, মাতৃভাষা এবং নিজস্ব সংস্কৃতি’কে বুকে ধারণ করা একটা জাতির জন্যে খুব জরুরি, কারণ এটি তাদের স্বকীয়তা, এর মাধ্যমেই জন্ম নেয় দেশ এর প্রতি মমত্ব বা প্রেম। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের এই দিনে বাঙালির রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল রাজপথ, তারই ধারাবাহিকতায় অর্জিত হয় স্বাধীনতা। বাঙালির এই আত্মত্যাগের দিনটি এখন রাষ্ট্রীয় সীমানার গন্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে সারা বিশ্বে। বাঙালির ভাষার সংগ্রামের একুশ এখন বিশ্বের সব ভাষাভাষীর অধিকার রক্ষার দিন।
তিনি আরো বলেন, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মিছিলে পাকিস্থানি শাসক গোষ্ঠীর নির্দেশে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায় সালাম, রফিক, বরকত, শফিউরসহ নাম না জানা অনেকে। এরপর বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেয় তৎকালীন পাকিস্থানি শাসকগোষ্ঠী। ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায়ই ১৯৭১ সালে সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর এক ঘোষণায় ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
“অমর একুশের অবিনাশী চেতনা-ই আমাদের যুগিয়েছে স্বাধিকার, মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অফুরন্ত প্রেরণা ও অসীম সাহস।
“ফেব্রুয়ারির রক্তঝরা পথ বেয়েই অর্জিত হয় মাতৃভাষা বাংলার স্বীকৃতি এবং এরই ধারাবাহিকতায় আসে বাঙালির চিরকাঙ্খিত স্বাধীনতা, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।”
বীর প্রতীক কে এস এম মহিউদ্দিন মানিক বলেন, ১৯৫২ সালের এই দিনে (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালামসহ কয়েকজন ছাত্রযুবা হতাহত হন।
তিনি বলেন, এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ভাষাশহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি এক রাতের মধ্যে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে ওঠে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। যা অমর একুশে প্রতীক আমাদের শহীদ মিনার। তাই এ দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ২০১০ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের কর্মসুচি : কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাত ১২টা এক মিনিটে বরিশাল কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ। ২১ ফেব্রুয়ারী সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা। এছাড়া নগরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। ২১ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ। এছাড়াও নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যান, চৌমাথা, বিবিরপুকুর পাড়, লঞ্চঘাট ও নথুল্লাবাদ বাস স্টেশনে ভাষা আন্দোলন বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে।
বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ : ২১ ফেব্রুয়ারী প্রথম প্রহরে (২০ ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাত ১২.০১ মি.) বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদেও স্বরণে পুষ্পমাল অর্পন।
বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপি : সকাল সাড়ে ৯ টায় অশ্বিনী কুমার হলস্থ দলীয় কার্যালয় থেকে র্যালী সহকারে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের সন্মানে পূষ্পমাল্য অর্পন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় : সকাল ৯ টায় উপাচার্যের নেতৃত্বে ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাস সংলগ্ন সড়কে প্রভাত ফেরি,সকাল সাড়ে ৯ টায় বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদেরৎ স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ। সকাল ১১ টায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আয়োজনে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা। ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০ টায় জাতীয় পতাকা ও বিশ^বিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের শুভ উদ্বোধন। সকাল ১০ টা মিনিটে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ। বিকাল ৪ টায় ভার্চুয়াল আলোচনা সভা।
বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ : সকাল ৭ টায় অশ্বিনী কুমার হলের সামনে থেকে প্রভাত ফেরী,সকাল ৯ টায় শহীদ মিনারে চিত্রাংঙ্কন প্রতিযোগীতা। এছাড়া ১৯ ফেব্রুয়ারী থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা করে আসছে সংগঠনটি।