শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০৬ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
গৌরনদীতে চোর সন্ধেহে গনপিটুনিতে আহত যুবকের দুইদিন পর মৃত্যু কুয়াকাটায় আগুনে পোঁড়া বন পরিদর্শন কলাপাড়ায় পরীক্ষা কেন্দ্রে নকলে সহায়তার দায়ে দুই শিক্ষককে অব্যাহতি সড়ক সংস্কারের দাবীতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন বিক্ষোভ মিছিল বাড়িতে ছাগল ঢোকাকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশীর সংঘর্ষ, আহত-৪ বরিশালে ৬ দফা দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ বরিশালের জেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে উৎস করের নির্ধারিত ফি কম নিয়ে দলিল রেজিষ্ট্রেশন করার প্রমান পেয়েছে দুদক কলাপাড়ায় কৃষকদের অবস্থান ধর্মঘট ও স্মারকলিপি প্রদান কলাপাড়ায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বিএনপি কার্যালয়সহ ৫টি দোকান ভস্মীভূত কলাপাড়ায় ইউনিয়ন বিএনপির বর্ষবরণ অনুষ্ঠান বাউফলে সড়ক সংস্কারের দাবিতে স্থানীয়দের মানববন্ধন বছরের প্রথম দিনেই বিচ্ছিন্ন দীপ অঞ্চলে সহকারী পুলিশ সুপার বাউফলে গাঁজাসহ ২৫ লাখ টাকা ও স্বর্নালংকার উদ্ধার নববর্ষে দেশীয় খেলাধুলা এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত কলাপাড়ায় মামলায় স্বাক্ষী হওয়ায় পা ভেঙ্গে দিলেন বিবাদীরা
লোকসানের আশঙ্কায় ঝালকাঠির পেয়ারা চাষিরা

লোকসানের আশঙ্কায় ঝালকাঠির পেয়ারা চাষিরা

Sharing is caring!

ঝালকাঠি : বরিশাল বিভাগের তিন জেলার ৫৫ গ্রামে ফলন হয় পেয়ারার। এই এলাকার হাজার হাজার মানুষের কাছে ‘পেয়ারা’ অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ ও জীবিকার অবলম্বন। আষাঢ়-শ্রাবণের ভরা বর্ষায় এসব এলাকার নদী-খালজুড়ে পেয়ারার সমারোহ। দেরিতে ফুল থেকে ফল আসায় আষাঢ়ের শেষের দিকেও পেয়ারা কুষিতেই রয়েছে। পরিপক্ক হয়ে বিক্রি করার সময় হতে আরো প্রায় মাসখানেক লাগবে।যখন পেয়ারার মৌসুম শুরু হবে তার আগ থেকেই লকডাউন শুরু।

একারণে পেয়ারা পরিবহন করতে না পারায় পাইকাররা আসবে না। অপরদিকে ভাসমান পেয়ারা হাট দেখতে বিদেশি পর্যটকসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা ভ্রমণ করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করে।কিন্তু এ বছর মহমারি করোনার কারণে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সবদিক থেকেই জনশূন্য থাকবে ভাসমান পেয়ারার হাট। তাই বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে কৃষকদের।লোকসানের আশঙ্কায় চরম বিপর্যয়ের কারণে চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন কয়েক হাজার কৃষক।

ভিমরুলী, শতদশকাঠী, খাজুরিয়া, ডুমুরিয়া, কাপুড়াকাঠী, জগদীশপুর এলাকা ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

পেয়ারার সাম্রাজ্য : বরিশাল বিভাগের অন্যত্র ছিটে ফোঁটা পেয়ারা হলেও বরিশাল জেলার বানারীপাড়া, ঝালকাঠী জেলার ঝালকাঠী সদর ও পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠী ঘিরেই মূলত পেয়ারার বাণিজ্যিক চাষ। বরিশাল জেলার বানারীপাড়ার ১৬ গ্রামে ৯৩৭ হেক্টর, ঝালকাঠী জেলার ১৩ গ্রামে ৩৫০ হেক্টর জমিতে, স্বরূপকাঠীর ২৬ গ্রামের ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়।এসব এলাকার মধ্যে ঝালকাঠীর কীর্তিপাশা, ভিমরুলী, শতদশকাঠী, খাজুরিয়া, ডুমুরিয়া, কাপুড়াকাঠী, জগদীশপুর, মীরকাঠী, শাখা গাছির, হিমানন্দকাঠী, আদাকাঠী, রামপুর, শিমুলেশ্বর এই গ্রামে বৃহৎ অংশজুড়ে বাণিজ্যিকভাবে যুগ যুগ ধরে পেয়ারার চাষ হচ্ছে।স্বরূপকাঠীর ২৬ গ্রামের মধ্যে রয়েছে সঙ্গীতকাঠী, খায়েরকাঠী, ভদ্রানন্দ, বাচ্চুকাঠী, ভাংগুরা, আদাবাড়ী, রাজাপুর, ব্রাহ্মণকাঠী, ধলহার, জিন্দাকাঠী, আটঘর, কুড়িয়ানা, পূর্ব জলাবাড়ি, ইদিলকাঠী, আরামকাঠী, মাদ্রা, গণপতিকাঠী, আতাকাঠী, জামুয়া, জৈলশার, সোহাগদল, আদমকাঠী, অশ্বত্থকাঠী, সমীত, সেহাংগল, আন্দারকুল।বরিশালের বানারীপাড়ার পেয়ারা বাগানগুলো হলো তেতলা, সৈয়দকাঠী, মালিকান্দা, ব্রাহ্মণবাড়ি, বোয়ালিয়া, জম্বুদ্বীপ, বিশারকান্দি, মরিচবুনিয়া, মুরার বাড়ি, উমরের পাড়, লবণ সড়া, ইন্দির হাওলা, নরেরকাঠী, রাজ্জাকপুর, হলতা, চুয়ারিপাড়। এসব গ্রামের কয়েক হাজার কর্মজীবী পরিবার যুগ যুগ ধরে পেয়ারার চাষ করছে।পেয়ারার চাষ, ব্যবসা ও বাজারজাতকরণেও রয়েছে কয়েক হাজার মৌসুমী বেপারি এবং শ্রমিক। এ সময় অন্তত কুড়িটি স্থানে পেয়ারার মৌসুমী মোকামের সৃষ্টি হয়। এগুলো হলো ভিমরুলী, আতাকাঠী, ডুমুরিয়া, গণপতিকাঠী, শতদশকাঠী, রাজাপুর, মাদ্রা, আদমকাঠী, জিন্দাকাঠী, বর্ণপতিকাঠী, আটঘর, কুড়িয়ানা, আন্দাকুল, রায়ের হাট, ব্রাহ্মণকাঠী, ধলহার, বাউকাঠী। এসব মোকামের মৌসুমে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ হাজার মণ পেয়ারা কেনা-বেচা হয়ে থাকে।

পেয়ারার আদি ইতিহাস পেয়ারা’ কবে থেকে এই মাটিতে এই প্রশ্নে স্থানীয় মানুষরা জানান,- শত, শত বছর ধরেই তারা বংশানুক্রমে পেয়ারার চাষ করছেন। তাদের মতে আনুমানিক ২শ বছর আগে স্থানীয় কালীচরণ মজুমদার ভারতের ‘গয়া’ থেকে এই জাতের পেয়ারার বীজ এলাকায় রোপণ করেন। সেই থেকেই ছড়িয়ে পড়ছে পেয়ারার চাষ।তবে প্রাচীন পেয়ারা চাষিরা জানালেন আগে বিচ্ছিন্ন আবাদ হলেও ১৯৪০ সাল থেকে শুরু হয়েছে পেয়োরার বাণিজ্যিক আবাদ। এই আবাদ ক্রমশ বাড়ছে। ২০১০ সালে অন্তত ১৯৩২ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিক পেয়ারার আবাদ হয়েছে। এ সময় ফলন হয়েছে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিকটন পেয়ারা।পেয়ারার চাষ জ্যৈষ্ঠের শেষ থেকে ভাদ্রের শেষ এই তিন মাস পেয়ারার মৌসুম। তবে ভরা মৌসুম শ্রাবণ মাসজুড়ে।

এরপর ক্রমশ কমতে থাকে পেয়ারার ফলন। চৈত্র বৈশাখের মধ্যেই পেয়ারা চাষিরা বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সাধারণত ছোট ছোট খাল, নাল দিয়ে বাগানগুলো মূলভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। চাষিরা মৃতপ্রায় গাছের ডাল কেটে, মাটি আলগা করে পেয়ারা গাছে আলাদা করে যত নেয়।বাগানের চতুর্দিক জালের মতো ছড়িয়ে থাকা নালা কেটে মাটি পেয়ারা গাছের গোড়ায় দেয়া হয়। চাষিরা জানান, পেয়ারা গাছে তেমন কোন সার বা আলাদা করে কিছু দেবার প্রয়োজন নেই। শুধু পরিচর্যাই যথেষ্ট।সারাবছর তেমন কোন কিছু করার দরকার হয় না। বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসেই পেয়ারা গাছে ফুল আসতে শুরু করে। তবে বৃষ্টি শুরু না হলে পেয়ারা পরিপক্ক হয় না। জমি ভালো হলে হেক্টর প্রতি ১২ থেকে ১৪ মেট্রিক টন পেয়ারার উৎপাদন হয়।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD