সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৫৯ অপরাহ্ন
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামিম বলেছেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা হলো দেশে বনায়ন করে সবুজ বেষ্টনীতে পরিবর্তন করার। তার নির্দেশনা হলো বাংলাদেশের ২৫ ভাগ এলাকা বনায়ন এবং সবুজ বেষ্টনীতে পরিবর্তন করা। প্রধানমন্ত্রী ১৬ জুলাই বৃক্ষরোপন কর্মসূচির উদ্বোধনকালে পুরো বাংলাদেশে ১ কোটি বৃক্ষ রোপন করার নির্দেশনা দিয়েছেন। ওনার নির্দেশনা অনুযায়ী পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় অধীনে পানি উন্নায়ন বোর্ড ১০ লক্ষ বৃক্ষরোপনের পরিকল্পনা হাতে নেও হয়েছে। সেই বৃক্ষরোপনের জন্য আজ আমরা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। আমরা ২ হাজার ৫ শত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে আমরা বিভিন্ন স্থানে ফলজ, ঔষধীসহ বিভিন্ন ধরণের গাছ লাগাবো।
বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের দক্ষিন চরআইচা গ্রামে শুক্রবার (১৪ আগস্ট) বেলা ১১ টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বৃক্ষরোপন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, পরিবেশগত পরিবর্তন মোকাবেলা করার জন্য এই বনায়ন খুব প্রয়োজন। আপনারা লক্ষ করছেন অতীতের তুলনায় কিন্তু এখন প্রচুর পরিমানে বৃষ্টি হচ্ছে। ১০ বছরে আগে যেমন ধরণের গরম পরতো এখন কিন্তু তার পরিমান অনেক বেড়েছে, অর্থাৎ উষ্ণতা বেড়েছে। এসব কারণে বনায়ন করা খুবই প্রয়োজন। বনায়ন করলে পরে পরিবেশগত পরিবর্তন হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উষ্ণতা যে বেড়েছে সেটা আমরা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারবো।
তিনি স্থানীয়দের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের প্রতি অনুরোধ বাড়ির আশপাশে যেখানে খালি জায়গা পাবেন সেখানেই গাছ লাগাবেন। গাছ ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাড়িকে রক্ষা করে। কয়েকমাস আগে আম্পান নামক ঝড়ে সাতক্ষীরা, খুলনা, পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় এলাকায় অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা পরিদর্শনে গিয়ে দেখেছি যেসকল নদীর পারে কিংবা বাড়ির পাশে গাছ ছিলো সেখানে ক্ষতির পরিমান কম হয়েছে। যে নদীর তীরে গাছ ছিলোনা সেখানে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে, এমনকি অনেক নদী ভাঙ্গনও হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যাতে একটি সবুজ বেষ্টনীতে পরিণিত হয় এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের ২৫ ভাগ এলাকাকে বনায়নের লক্ষে পৌছাতে পারি সেজন্য বৃক্ষরোপন করতে হবে।
করোনা ভাইরাস নিয়ে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যে গতিতে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো করোনা ভাইরাসের জন্য তা কিছুটা ব্যহত হয়েছে। কিন্তু আমরা থেমে নেই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত আছে, কিছুটা থমকে গেলেও আমরা ঘুরে দাড়িয়েছি।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে অনেক প্রাণহানি হয়েছে, সেদিক হিসেব করলে আমাদের দেশে অনেক কম হয়েছে। তবে সেটা মনে করলে চলবে না যে আমাদের প্রাণহানি কম হয়েছে, আর ভবিষ্যতে হতে পারে না। এটা যে কোন সময় মহামারি রুপ নিতে পারে।
স্থানীয়দের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, আমি এখানে বসে দেখছি আপনারা অনেকেই মাস্ক নিয়ে আসেননি। কিন্তু অনুরোধ করি আপনারা যে বয়সেরই হন না কেন মাস্ক ব্যবহার করুন। এতে একজন থেকে অন্যজন সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কা কমবে, গতকালও বরিশালে ২৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
তিনি বলেন, আপনাদের সাবধান থাকতে হবে, যদি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন আর ২০৪১ সালের ভেতরে উন্নয়নশীল দেশে আমরা পৌছাতে চাই আমাদের সু-স্বাস্থ্যেরও অধিকারী হতে পারে। করোনা ভাইরাসকে মোকাবেলা করতে হবে, আরো সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
নদী ভাঙ্গন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ভাটির দেশের লোক, এখানকার মাটি খুব নরম। উজানের দেশ চায়না, নেপাল, ভারতে যে বৃষ্টি হয়, সেই বৃষ্টির পানি আমাদের ভাটির দেশ হয়ে বঙ্গোপসাগরে যায়। এই পানি আসবেই, বন্ধ করতে পারবো না। আর পানির সাথে সেসব দেশ থেকে প্রচুর পলিমাটি প্রতি সিজনে আমাদের দেশে আসে। নদী ভরাট হয়ে যায়। আজ ড্রেজিং করলাম ৬ মাস পরে আবার নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ড্রেজিংটা ব্যয়বহুল ব্যবস্থাপনা তারপরও ড্রেজিং করে যাচ্ছি। আমরা বড় বড় প্রকল্প হাতে নিচ্ছি, পরিকল্পনাও অনেক রয়েছে। আমরা চেষ্টা করবো দেশের মানুষ যাতে নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পায়।
বন্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বণ্যা পরিস্থিতি আগের থেকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে, পানি নেমে যাচ্ছে। আর নদী ভাঙ্গন এলাকাতে আমাদের প্রকৌশলীরা কাজ করে যাচ্ছে। এবারে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। গতবছরের থেকে এ বছরে উজানের দেশ থেকে ভাটিতে বৃষ্টির পানি অনেক বেশি নেমে এসেছে। ভাঙ্গনও অনেক হয়েছে। বাধ রক্ষা ও মেরামতে প্রকৌশলীরা কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া অনেকগুলো প্রকল্প আমাদের হাতে রয়েছে। আমরা নদী ড্রেজিং করবো এবং আগামীতে যাতে বন্যার পানি সহনীয় অবস্থায় আসে সেজন্য কাজ করছি। ডেল্টা প্লান ২১ এর আওতায় ৬৪ জেলায় খাল খনন প্রকল্প চলছে। ৭০ শতাংশ কাজ আমরা এগিয়ে নিয়েছি আরো ১ বছরের মধ্যে এ প্রকল্প শেষ হবে। শেষ হলে নতুন করে আরো ৫ শত খাল খনন আমরা করবো। মোট ১ হাজার খাল খনন যদি আমরা আগামী ২/১ বছরের মধ্যে করতে পারি, তাহলে উজান থেকে পানি নেমে আসলে তা দ্রুত সরে যেতে পারবে এবং ক্ষয়ক্ষতি আরো কমবে। যেমন খাল খননের এসব প্রকল্প না হলে ৭০ শতাংশ কাজ শেষ না হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান অনেক হতো।
বাধ ভেঙ্গে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বাধ নির্মান করি তা ভেঙ্গে যাচ্ছে, এজন্য আমরা সমীক্ষা করাচ্ছি যাতে বাধ না ভেঙ্গে যায় তাতে কি করা যায়। আমরা নদী শাসন করার চেষ্টা করছি। আর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নদী শাসন করে তাতে রেগুলার ড্রেজিং করতে হবে
তিনি বলেন, সাধারণ ১ কিলোমিটার বাধে দেড়কোটি টাকা খরচ হচ্ছে, আর সেখানে ব্লক দিয়ে যদি স্থায়ী তীর রক্ষা করি তাহলে ছোট নদীতে ৩০ কোটি এবং বড় নদীতে ৩০ থেকে ৫০ কোটির মধ্যে খরচ হয়। এটা অনেক ব্যয়বহুল, তেমনি ড্রেজিংও ব্যয়বহুল। তবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আজকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে আগের থেকে অনেক সমৃদ্ধশালী, যারজন্য আমরা এখন ব্যয় করতে পারি।
মন্ত্রী বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ৩ হাজার কিলোমিটার তীর ব্লক দিয়ে স্থায়ীভাবে রক্ষা করেছি। তারপরও অনেক জায়গায় দেখবেন ব্লক বসানোর পরও ভেঙ্গে পরছে। এর কারণ জলবায়ুর পরিবর্তনের কারনে অনেক সময় পানির প্রবাহ অনেক বেশি বেগে আসছে। আবার অনেক সময় দেখা যায় পানি একজায়গাতে ঘুরপাক খাচ্ছে, স্পয়েলিং হয়ে ধ্বস নামে। যদিও তারপর পরীক্ষা করে দেখছি আমরা এবং পরীক্ষায় যদি দেখা য়ায় গর্ত আছে সেখানে জিও ব্যাগ ফেলে ব্লক ফেলে তা বন্ধ করি। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছি। আমরা আমাদের লক্ষে পৌচাতে পারবো।
দক্ষিাণাঞ্চল পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ হারুন অর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়েল অতিরিক্ত সচিব মাহমুদুল ইসলাম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক এ, এম, আমিনুল হক, এবং জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রী শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নে স্লুইজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়া স্থান ও নগরীর বেলতলা খেয়াঘাট সংলগ্ন ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন।