শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ০৮:২০ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
কুয়াকাটায় পর্যটক হেনেস্তাকারী যুবদল সভাপতি বহিষ্কার টুরিষ্ট ভিসায় জেল খেটে বিদেশ ফেরত মকছুদ।কলাপাড়ায় দুই  প্রতারকের বিরুদ্ধে মামলা কলাপাড়া বিএনপির সাবেক সভাপতি’র দলবদল কলাপাড়ায় খাল থেকে অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চরশিবা সাংগঠনিক ইউনিয়ন শাখার উদ্দ্যোগে  মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত স্প্রেইড হিউম্যানিটির উপদেষ্টা পরিষদ গঠন ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত বাউফলে নিখোঁজের ৫দিন পর লাশ উদ্ধার শ্রমিকদলের ৪৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন রাষ্ট্র হচ্ছে দেবী দুর্গার দশ হাতের মতো-ব্যারিস্টার ফুয়াদ বরিশাল গোরস্থান রোডের রাস্তা ও ড্রেনের সংস্করণের দাবিতে মানববন্ধন বাউফলে ‘খেলাফত মজলিস’ উপজেলা শাখার কমিটি গঠন কলাপাড়ায় মাহেন্দ্র-মোটর সাইকেলে মুখোমুখি সংঘর্ষে শিক্ষকের মৃত্যু শেখ হাসিনার গুলিতে শুধু ছাত্র নয়, শুধু জনতা নয়, শ্রমিকদেরও রক্ত গেছে আল কারীম কওমী মাদরাসার নতুন ভবনের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন মেহেন্দিগঞ্জে মহান মে দিবস উপলক্ষে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উদ্যোগে শ্রমিক সমাবেশ ও বর্নাঢ্য র‌্যালি অনুষ্ঠিত
৫ মার্চ বরিশাল সতী পীঠে উগ্রতারা মন্দিরের উদ্বোধণ

৫ মার্চ বরিশাল সতী পীঠে উগ্রতারা মন্দিরের উদ্বোধণ

Sharing is caring!

বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার শিকারপুরের তারাবাড়িতে উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহি সতীর ৫১ পিঠের একটি শ্রীশ্রী উগ্রতারা মন্দিরের পুন:প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে মন্দিরটির উদ্বোধণ করা হবে বৃহস্পতিবার (৫ই মার্চ)। মন্দিরটির পূন:প্রতিষ্ঠা করেছেন ডা: পিযুষ কান্তি দাস ও এড. বলরাম পোদ্দার।

মন্দির সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের বরিশাল থেকে প্রায় ২৯ কিলােমিটার দুরে শিকারপুর গ্রামই পুরানের সুগন্ধা। পীঠদেবী সুনন্দা এখানে উগ্রতারা রূপে পৃজিতা। এটি একান্ন সতীপীঠের একটি পীঠ। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে এখানে সতীর নাসিকা পড়েছিল। এখানে অধিষ্ঠিত দেবী সুনন্দা এবং ভৈরব হলেন ক্র্বকেশবর বা ত্ৰক। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে মাতা সতী নিজের বাপের বাড়িতে বাবার কাছে স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে সেখানেই দেহত্যাগ করেছিলেন। মাতা সতীর দেহত্যাগের খবর মহাদেবের কাছে পৌছতেই মহাদেব সেখানে উপস্থিত হন। সতীর মৃতদেহ দেখে ক্রোধে উন্মত্ত মহাদেব সেই দেহ কাঁধে নিয়ে তান্ডব নৃত্য চালু করেন। নহাদেবের তান্ডব নূত্যে পৃথিবী ধ্বংসের আশঙ্কায় শ্রীবিষ্ণু তার সুদর্শন চক্র দ্বারা মাতা সতীর দেহ একন্নটি খন্ডে খন্ডিত করেন। সেই দেহখন্ডগুলােই যে যে স্থানে পড়েছিল সেখানে একটি করে সতীপীঠ প্রতিষ্ঠা হয়। বলা হয় সুগন্ধা সতীপীঠে দেবীর নাসিকা পড়ে। পীঠনির্ণয় ও তন্ত্রচূড়ামণি মতে এটি তৃতীয় সতীপীঠ। মতান্তরে শিবচরিত গ্রন্থে এটিকে ষষ্ঠ সতীপীঠ বলে উল্লেখ করা আছে। বহুকাল আগে বাংলাদেশের পােনাবালিয়া ও সামরাইলের পাশ দিয়ে পবিত্র সুগন্ধা নদী বয়ে যেত। কালের নিয়মে সেই নদী স্রোত
হারিয়ে ক্ষীণ শ্রোতার রূপ নিয়েছে। এখন যার নাম সন্ধ্যা নদী। এই নদীর অপরপাড়ে শিকারপুর গ্রাম অবস্থিত।

সতীপীঠ সুগন্ধা নিয়ে একটা গল্প আছে। শিকারপুরে ধনী ভূ-স্বামী শ্রী রামভদ্র রায় বাস করতেন। প্রাচীনে এই জায়গা জঙ্গলে পূর্ণ ছিল ও হিংগ্র জীবজন্ত বাস করত। একদিন তিনি স্বপ্নে দেখেন জটাবৃত এক ত্রিশূলধারী যােগীপুরুষ তাকে বলছেন আমি সামরাইলের জঙ্গলে একটা টিপির মধ্যে রয়েছি, আমাকে সেখান থেকে উদ্ধার করাে তােমার মঙ্গল হবে। পরদিন রামভদ্র লােকজন নিয়ে সেই জঙ্গলে খোঁজ শুরু করেন। সেই সময় জঙ্গলের কাছে একদল রাখাল বালক রামভদ্রের লােকদের দেখে ভয় পেলে, রামভদ্র তাদের বলেন আমরা এক অলৌকিক টিপির খোঁজ করছি তােমরা এইরকম কোনাে টিপির খোঁজ জানলে আমাদের বলাে। রাখালরা এই রকমই এক টিপির খোঁজ তারা রামভদ্রকে জানায় তাদের গরু আগের মতাে দুধ দিচ্ছিল না, তাদের মালিক ভেবেছিল রাখালরা হয়ত গরুর দুধ চুরি করে নেয়। তাই তাদের মালিক একদিন গরুগুলাের পিছু নিয়ে দেখে গরুগুলা একটা উঁচু টিপির উপর দাঁড়িয়ে তাদের বাঁট থেকে দুধ দিচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে, ওখানে কি আছে জানার জন্য তাদের মালিক জঙ্গলের শুকনাে কাঠ পাতা জড়াে করে ওই টিপিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এরপর আরেক ঘটনা ঘটে তাদের মালিক দেখে আগুনের মধ্যে থেকে দৌড়ে এক শ্যামবর্ণা সুন্দরী নারী বেরিয়ে পাশের জলাশয়ে ঝাপ দেয়।এই গল্প শােনার পর রামভদ্র তার লােকেদের ওই টিপি খােড়ার নির্দেশ দেন। এরপরে ওই টিপির নিচ থেকে এক শিবলিঙ্গ উদ্ধার হয় কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও শিবলিঙ্গটিকে সেখান থেকে নড়ানাে সম্ভব হয় না। এরপর রামভদ্র আবার রাতে স্বপ্ন পান মহাদেব তাকে বলছেন “আমাকে ওই স্থানেই প্রতিষ্ঠা করে পুজোর ব্যবস্থা কর, আর আমার মাথায় কোনাে আচ্ছাদনের ব্যবস্থা রাখবি না। মহাদেবের আদেশ মতাে রামভদ্র তাই করে ছিলেন।

ওই রাতেই আবার শিকারপুরের সৎ, নিষ্ঠাবান ধার্মিক ব্রাহ্মণ পঞ্চানন চক্রবর্তী স্বপ্ন দেখেন মহাকালী তাকে দর্শন দিয়ে বলছেন “সুগন্ধার গর্ভে আমি (মহাকালী) শিলারূপে বিরাজ করছি, তুই আমাকে নদীর বুকে থেকে তুলে পুজার ব্যবস্থা কর।” পরদিন ভােরে পঞ্চানন চক্রবর্তী নদীতে নেমে প্রথমে কালাে পাথরের শিবমূর্তি ও দেবীর পাষান মুর্তি উদ্ধার করেছিলেন। এই কথা প্রচার পেলে তৎকালীন রাজা দেবীর উদ্দেশ্যে ইটের মন্দির নির্মাণ করিয়েছিলেন। এই মন্দিরেই দেবীর অধিষ্ঠান। এটি তারাবাড়ি নামেও পরিচিত। তবে প্রাচীন মূর্তি ধংস হয়ে গেছে। এবং সতীর প্রস্তরীভূত দেহাংশটি কোথায় তার খোঁজ মেলেনি। বর্তমানে উগ্রতারা মুর্তিটিকে নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে নানা মতভেদ আছে। দেবীমা শবরুপী শিবের উপর দন্ডনায়মান এবং দেবীমূর্তির উপরিভাগে ছােট আকারে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, কার্তিক ও গণেশের মূর্তি রয়েছে। এই পাঁচ দেবতার মূর্তি বৌদ্ধধর্মের
পঞ্চধ্যানী বুদ্ধ এর মূর্তিকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তাই ঐতিহাসিকদের মতে এই মুর্তি বৌদ্ধতন্ত্রের দেবীর ধাঁচে নির্মিত।

দেশ-বিদেশ থেকে নানা ভক্ত এসে এই “শিকারপুর- তারাবাড়ি- নাসিকা পীঠস্থানে ভিড় করে। আশির দশকের দিকের ঘটনা- উজিরপুরের মাহার গ্রাম নিবাসী স্বর্গীয় বিপিন চন্দ্র দাসের পূত্র ডা: পিযুষ কান্তি দাস একদিন রাতে স্বপ্ন দেখেন, “ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কোলে মা তারাকে নিয়ে সন্ধ্যা নদী থেকে উঠে এসে তাকে আদেশ করছেন, তুমি কোথায় যাচ্ছাে? আমি এখানে আছি আমাকে প্রতিষ্ঠা করাে….” আদেশপ্রাপ্ত হয়ে ডা: পিযুষ কান্তি দাস তৎক্ষনাৎ ছুটে যান তারাবাড়ি, গিয়ে একজন প্রকৌশলী নিয়ে একটি নকশা করে মন্দিরের উন্নয়ন কাজে প্রথম হাত দেন। সেই থেকেই মন্দিরটি তিনি
দেখাশুনা করে আসছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে গৌরনদীর মেদাকুল নিবাসী স্বর্গীয় নবদ্বীপ পােদ্দারের পূত্র এড. বলরাম পােদ্দার ও ডা: পিযুষ কান্তি দাস সম্মিলিতভাবে মন্দিরটি পূনঃনির্মানের উদ্যোগ নেন এবং ২০২০ সালে এর কাজ সমাপ্ত করেন।

নবনির্মিত মন্দির ও দেবীমূর্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ৫ মার্চ ২০২০ তারিখ নির্ধারণ করা হয়।

বর্তমান প্রতিষ্ঠিত দেবী মূর্তিটি পাথরের। কষ্টিপাথরের দেবীমুর্তির চোখ ও মাথার মুকুট সােনার। চতুর্ভুজা দেবীর উপরের দুহাতে খড়গ ও খেটক (ভােজালিজাতীয় অস্ত্র)। নিচের ডান হাতে নীলপদ্ম ও বাম হাতে নরকরােটি। দেবী শবরূপ শিবের উপর দন্ডায়মান। এই সতীপীঠের পীঠদেবী সুনন্দা, পীঠভৈরব ত্র্যম্বক এবং দেহাংশ সতী’র নাসিকা।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD